প্রশ্ন : শ্রীরামকৃষ্ণ সংঘে গুরু-পরম্পরার বিশেষত্বটা কী একটু বলুন না, মহারাজ।
|
Sri
Ramakrishna
|
Sri
Ramakrishna
|
Sri
Ramakrishna
|
Sri
Ramakrishna
|
মহারাজ :
শ্রীরামকৃষ্ণের
পার্ষদরা সকলেই শ্রীরামকৃষ্ণকেই
একাধারে গুরু এবং
ইষ্ট বলতেন। সেই অনুসারে তাদের
সম্প্রদায়ের ‘গুরু’রা কেউ
নিজেকে গুরু মনে করেন না। তারা
নিজেদের শ্রীরামকৃষ্ণের
সাধনধারার ধারক ও বাহক মাত্র
মনে করেন। ঠাকুর’ই গুরু। তবে
প্রথমে দীক্ষাগুরুর ভিতরে
তাঁকে ভাবতে হয় এবং দ্বিতীয়
পর্যায়ে দীক্ষাগুরুকে ইষ্টে
লয় করতে হয়। ধ্যানের পক্ষে
এটাই সহজ এবং স্বাভাবিক প্রণালী।
এজন্য দীক্ষাগুরুকে প্রথমে
সংক্ষেপে ধ্যান করে পরে তাঁকে
ইষ্টে লয় করে ইষ্টের ধ্যান
করে যেতে হয়। সচ্চিদানন্দ’ই
গুরু। তিনি সর্বত্র বিরাজমান।
তিনি সবসময়ে সকলের অন্তরে
রয়েছেন। তিনিই সত্যিকারের
গুরু।
তাঁকে হৃদয়ে ধ্যান করতে হবে।
দীক্ষাগুরু
হলেন
পথ। তিনি সেই পথে শিষ্যকে
নিয়ে যাবেন পরম-গুরুর
কাছে। তার কাছে পৌছানােই
শিষ্যের পরম লক্ষ্য। শ্রীরামকৃষ্ণদেব
বলতেন,
সকলেরই
গুরু সেই এক সচ্চিদানন্দ।
কিন্তু যেহেতু আমরা তাঁকে
সাক্ষাত্তাবে ধরতে পারছি না,
এজন্য
সাধনের সহায়করূপে কোন
মানব-গুরুকে
আশ্রয় করতে হয়। আবার মানব
গুরুর প্রতি ঈশ্বরদৃষ্টি
রাখতে হয়। শাস্ত্রের এই
নির্দেশ। অর্থাৎ মানব গুরু
হলেন সেই ঈশ্বর-গুরুর
প্রতীক বা প্রতিমা। সুতরাং
যখনি আমরা বলছি—গুরু,
ইষ্ট
এক বা গুরু
শিষ্যের
সঙ্গে সঙ্গে থাকবেন,
তা
এই শাস্ত্রীয় দৃষ্টিকে লক্ষ
করেই বলা হয়। মানব-গুরু
তার
সাধ্যানুসারে শিষ্যকে চরম
লক্ষ্যে,
অর্থাৎ
ঈশ্বরানুভূতিতে পৌছাতে সাহায্য
করেন। কিন্তু সচ্চিদানন্দগুরু
সাধককে তার স্বরূপপ্রাপ্তির
পথে এগিয়ে নিয়ে যান এবং
তিনিই সাধকের সাধনপথের সর্বদা
সঙ্গী,
পথনির্দেশক
ও চরম লক্ষ্য।
প্রশ্ন :
মহারাজ,
শিষ্যের
কী কী যােগ্যতা থাকা দরকার?
মহারাজ
:
অভীষ্ট
আদর্শে
পৌছানাের জন্য তার ঐকান্তিক
আগ্রহ থাকা চাই। কৌতুহল চরিতার্থ
করার জন্য দীক্ষা নেব—এরকম
যেন না হয়। গুরুর
নির্দেশের
প্রতি পরম নিষ্ঠা
থাকা
চাই। শিষ্যের চরিত্র শুদ্ধ
হতে হবে। গুরু এবং শিষ্য উভয়েরই
চরিত্র-শুদ্ধির
ওপর সমান গুরুত্ব দেওয়া
হয়েছে। শিষ্যকে বিনীত হতে
হবে,
উদ্ধত
নয়।
গভীর
শ্রদ্ধার ভাব না থাকলে গুরুর
আশ্রয় নেওয়া সম্ভব নয়।
কিন্তু গুরুকরণের পূর্বে
তাকে যথাসম্ভব পরীক্ষা করে
নেওয়া প্রয়ােজন হলেও গুরুপদে
বরণ করার পরে নিষ্ঠার সঙ্গে
তার অনুসরণ করা শিষ্যের একান্ত
প্রয়ােজন। গুরুর জ্ঞান-সম্ভার
গ্রহণে শিষ্যের নম্রতাই তাকে
উপযুক্ত আধারে পরিণত করে।
বিনয়,
ঐকান্তিকতা,
পবিত্রতা
এবং সেবার মনােভাব না থাকলে
গুরুসঙ্গ করে কোন লাভ হবে না।
No comments