প্রশ্ন : মহারাজ, একটি প্রশ্নের আলােচনায় আমরা বলছিলাম যে, ‘আমি’কে খুঁজতে গিয়ে আমাদের সন্দেহটা হয়—আমি শরীর, না মন, নাকি অন্য কিছু? আমাদের স্বরূপের অস্তিত্ব সম্বন্ধে সন্দেহ হচ্ছে না। আমরা সেটা বলছি না।
|
Sri
Ramakrishna
|
প্রশ্ন
:
মহারাজ,
একটি
প্রশ্নের আলােচনায় আমরা
বলছিলাম যে,
‘আমি’কে খুঁজতে
গিয়ে আমাদের সন্দেহটা হয়—আমি
শরীর,
না
মন,
নাকি
অন্য কিছু?
আমাদের
স্বরূপের অস্তিত্ব সম্বন্ধে
সন্দেহ হচ্ছে না। আমরা সেটা
বলছি না।
মহারাজ :
তবে
অস্তিত্ব তাে একটা কথা হল। —কথার মধ্য দিয়েই তাে আমরা কিছু বলতে চাইছি। আমরা যখন কোন জিনিস বুঝতে চাইছি, তখন শব্দের মধ্য দিয়েই তা বুঝতে চেষ্টা করছি।
মহারাজ : শােন, শােন। পাশ্চাত্য দার্শনিক দেকার্ত বললেন : “Cogito ergo sum.” তিনি বললেন, আমি সব সন্দেহ করব। সব আছে কিনা, প্রমাণ নেই। আচ্ছা, তা ঠিক। কিন্তু আমি যে তর্ক করছি, আমি তাে আছি, না হলে করছি কী করে? Cogito ergo sum. আমি সন্দেহ করছি, সুতরাং আমি আছি।
—এই আমি আছি-টাই কি আত্মা বা ব্রয়?
মহারাজ : সংশয়কর্তা আছেন এর সম্বন্ধে আর সন্দেহ করা যাবে না। তুমি আছ কিনা তােমার যদি সন্দেহ হয়, তাহলে তােমার অস্তিত্বই হল কাজেই তুমি স্বতঃসিদ্ধ। আর তুমিই ব্রহ্লা।
-মহারাজ, আমরা বলতে চাইছি, তিনি কে? তিনি কি শরীরটা?
মহারাজ : এই, এইটাই অন্বেষ্টব্য। এইটাই জ্ঞাতব্য। তুমি নিজেকে নিজে ধরতে পার না। কুকুরের লেজের মতাে। কুকুর তার লেজকে ধরতে পারে না। সে যখনি লেজটা ধরতে যাচ্ছে, সেটা পিছিয়ে যাচ্ছে। এইরকম তােমাদের ব্রষ্মের অন্বেষণ হচ্ছে কুকুরের লেজ খোঁজার মতাে।
—তাহলে আর কোনদিন ধরা যাবে না?
মহারাজ : কোনদিন ধরা যাবে না, যেহেতু যে ধরতে চাইছে, তার ভিতরেই তিনি রয়েছেন। ধরবে কী করে?
—যদি ধরা না যায়, তাহলে সেই জিনিস নেই মহারাজ। কারণ, জগতে আমরা তাকেই বলি আছে, যে-জিনিসটি আমাদের পক্ষে ধরা-ছোঁওয়া সম্ভব।
মহারাজ : না, যে-জিনিসটি তােমরা চোখ দিয়ে দেখতে পার, কান দিয়ে শুনতে পার, নাক দিয়ে ঘ্রাণ নিতে পার, পঞ্চেন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগৎটাকে তােমরা মনে করছ সত্য।
কিন্তু পঞ্চেন্দ্রিয়ের অতীত বস্তু হলে তাকে কী বলবে? তাকে বলব, অনুমানের দ্বারা গম্য। অনুমানের দ্বারা তাকে জানা যায়।
মহারাজ : অনুমান কাকে বলে? জ্ঞাত বস্তু যদি থাকে, আর তাকে তার অতিদেশ করা হয়, তাহলে অনুমান হয়। হঁ্যা, বলছি যে, ‘যত্র যত্র ধূম, তত্র তত্র বহ্নি’। এখন যে ধূমও দেখেনি, বহ্নিও দেখেনি—তার কাছে অনুমান সম্ভব হবে? কাজেই ধূম সম্বন্ধে তার ক্ষেত্রে অনুমান হয় না।
—এটা তাে সকলেই স্বীকার করি, যাকে আমরা প্রত্যক্ষ করি, তাকেই সৎ বলি। প্রত্যক্ষ করি না কিন্তু তাকে সৎ বলব কেন?
মহারাজ : রজ্জুতে সর্প তাে প্রত্যক্ষ। তাহলে সেটি কি সত্য? প্রত্যক্ষ করলেই যে সত্য হয়, তা নয়।
—কিন্তু একটা জিনিসের অনুভব হয়, মহারাজ, যে এটা একটা সাপ।
মহারাজ : একটা শব্দ ব্যবহার করলেই হয়ে গেল?
—শব্দ, স্পর্শ বা কোন কিছু দিয়ে যার কাছে পৌঁছাতে পারি না এরকম কোন জিনিসকে আমরা সৎ বলে স্বীকারই করি না।
মহারাজ : পৌঁছাতে পারবে কী করে? তােমার স্বরূপে তুমি কী করে পৌঁছাবে? স্বরূপ থেকে তুমি যদি ভিন্ন হতে, তাহলে তুমি স্বরূপে পৌঁছাতে পারতে। তুমি তাে স্বরূপে প্রতিষ্ঠিত আছ। তুমি নিজেকে কী করে খুঁজে পাবে?
—স্বরূপে প্রতিষ্ঠিত আছি, না অস্বরূপে প্রতিষ্ঠিত আছি, সেইটাই তাে আমরা বুঝতে পারছি না।
মহারাজ : বুঝতে পারছ না—এই অজ্ঞান দূর করার জন্যেই বিচার। সত্যকে প্রকাশিত করার জন্যে বিচার নয়। আসলে অজ্ঞানকে দূর করার জন্যে বিচার। এইটি ধরে রাখ।
—কিন্তু প্রত্যক্ষ বা অনুমানগম্য না হলেও সেটি শাস্ত্রগম্য—এটা তাে বলা হচ্ছে। শব্দব্রহ্লা যদি হয়, তাহলে তাে শাস্ত্র থেকে সেই শব্দই শুধু আমরা জানতে পারছি।
মহারাজ : “নেহ নানাস্তি কিঞ্চন”—এটা তাে শব্দ। তার দ্বারা কী বােঝাবে?
—তিনি ছাড়া আর কিছু নেই। সেইটাই বলছি যে, সেখানে আমরা এই সিদ্ধান্তটা শুনছি।
মহারাজ : সিদ্ধান্ত তােমরা শুনছ। এর দ্বারা তােমাদের অজ্ঞানের নিবৃত্তি হবে। কিন্তু ব্রষ্মের অনুভূতি হবে না। বিচার হবে অজ্ঞানের নিবৃত্তির জন্য। ব্র বেদ। বেদ অজ্ঞানের নিবৃত্তির জন্য। এইজন্য বলছেন—“তত্র বেদা অবেদা ভবন্তি। সেখানে বেদ গিয়ে অবেদ হয়ে যায়। বুঝলে তাে
No comments