প্রশ্ন:-ঠাকুর প্রথমে জগন্মাতার দর্শন পেয়েছেন। আবার ভৈরবী ব্রাত্মণী এলে জিজ্ঞেস করেছেন—দেখাে, এই সব কী আমার পাগলামি? নিজেই জিজ্ঞাসা করছেন।
Ma
Bhabatarini (Kali)
|
Swami
Shivananda
|
BANERSHAR
SHIVA LINGA
|
Sri
Sarada Devi
|
Swami
Vivekananda
|
Sri
Sarada Devi
|
Sri
Sarada Devi, Swami Vivekananda, Swami Shivananda
|
প্রশ্ন
:
ঠাকুর
স্বামীজী সম্বন্ধে দেখেছিলেন
তিনি অখণ্ডের ঘরে সপ্তর্ষির ঋষি,
কিন্তু
তাকে আবার পরীক্ষা করে নিয়েছেন
কেন ?
মহারাজ : শাস্ত্র, যুক্তি ও অনুভব—তিনটে মিলিয়ে বিচার করতে হয়। পরীক্ষিত হতে হলে শাস্ত্রসম্মত, যুক্তিসিদ্ধ ও অনুভবগম্য হওয়া চাই।
মহারাজ : শাস্ত্র, যুক্তি ও অনুভব—তিনটে মিলিয়ে বিচার করতে হয়। পরীক্ষিত হতে হলে শাস্ত্রসম্মত, যুক্তিসিদ্ধ ও অনুভবগম্য হওয়া চাই।
প্রশ্ন:—আধ্যাত্মিক দর্শনের পরেও যুক্তির প্রয়ােজন আছে?
মহারাজ
:
আছে
বৈকি। না হলে একজন পাগল বলবে,
তার
অনুভব সত্য।
তা বলে কি মেনে নিতে হবে?
—লীলাপ্রসঙ্গে
আছে,
শুকদেবের
জ্ঞান হওয়ার পরেও সংশয়
যায়নি। তাঁকে জনক রাজার কাছে
পাঠানাে হয়েছিল।
প্রশ্ন:- ব্রহ্ময়ের
অনুভবও কি যুক্তি ও শাস্ত্র
দিয়ে মেলাতে হয়?মহারাজ : না মেলালে, সেই অনুভবটা খেয়াল না সত্যিসত্যি তা কী করে জানবে? অবশ্য সেখানে বলেছেন—
“ভিদ্যতে হৃদয়গ্রন্থিচ্ছিদ্যন্তে সর্বসংশয়াঃ।।
ক্ষীয়ন্তে চাস্য কর্মাণি তস্মিন্ দৃষ্টে পরাবরে।”
(মুণ্ডকোপনিষদ,
২।২৮)।
তবু বিচার করার জন্য বলেছে-শাস্ত্র,
যুক্তি,
অনুভব—তিনটে
দিয়ে বিচার করবে।
প্রশ্ন:-ঠাকুর
প্রথমে জগন্মাতার দর্শন
পেয়েছেন। আবার ভৈরবী ব্রহ্মণী
এলে জিজ্ঞেস করেছেন—দেখাে,
এই
সব কী আমার পাগলামি ?
নিজেই
জিজ্ঞাসা করছেন।
মহারাজ
:
দেখ,
অবতার
যখন নরদেহ ধারণ করেন,
তখন
মানবীয় ভাব তার ভিতর দিয়ে
প্রকাশ পায়। শ্রীকৃষ্ণ
দেখছেন,
যুদ্ধে
উগ্রসেনকে শত্রুরা কেটে
ফেললেন। তিনি বললেন,
এমন
সুরক্ষিত মথুরাপুরীতে এটা
কী করে সম্ভব হল?
দিব্যদৃষ্টিতে
দেখলেন,
এটা
মায়া। রাম সােনার হরিণের
পিছনে ছুটলেন। এগুলিও মানবধর্ম।
প্রশ্ন: -ঠাকুর
যখন মাটিতে পড়ে মুখ ঘষছেন—“মা
দেখা দে” বলে,
এটা
কি অভিনয়?মহারাজ : ঠাকুর বলেছেন, এখানে সব নজির দেখানাের জন্য।
প্রশ্ন:—তখন কি তিনি সত্যিই মাকে দেখতে পাচ্ছিলেন না?
মহারাজ
:
অভিনয়
মানে,
যেটা
সত্য নয় জেনেও সেটা করা। রাজা
সেজেছে যে—সে জানে,
সে
রাজা নয়। কিন্তু রাজার পােশাক
পরেছে। অবতার জানেন যে,
তিনি
মানব নন,
তবু
মানবদেহরূপ পােশাক পরেছেন,
তাই
মানবের মতাে ব্যবহার করছেন।
ঠাকুর বলছেন,
আমার
কী অভিমান আছে?
অহঙ্কার
আছে?
মাস্টারমশায়
বলছেন,
একটুখানি
রেখে দিয়েছেন,
মানবকল্যাণের
জন্য। ঠাকুর সংশােধন করে
দিচ্ছেন—না,
আমি
রাখিনি,
মা
রেখেছেন।
প্রশ্ন:—হরি
মহারাজ কাশীপুরে ঠাকুরকে
জিজ্ঞাসা করছেন-কেমন
আছেন?
ঠাকুর
বলছেন—দেখ না কষ্ট পাচ্ছি।
হরি মহারাজ বলছেন—আমি তাে
দেখছি,
আপনি
আনন্দসাগরে ভাসছেন। দু-তিন
বার এরূপ বলার পর ঠাকুর বলছেন—যাঃ,
শালা
ধরে ফেলেছে !
মহারাজ
:
এই
তাে অবতারের বৈশিষ্ট্য। ঠাকুর
বলছেন—এর ভিতর একটি ভক্ত,
আরেকটি
ভগবান—দুই-ই
আছেন। কখনাে তিনি ভগবান ভাবে
থাকেন আবার কখনাে ভক্ত ভাবে
থাকেন। যখন বলছেন—আমি কিছু
নই,
আমি
কিছু নই;
তখন
ভক্তভাবে বলছেন। আর যখন বলছেন
প্রশ্ন:—তােরা
কী চাস,
দিতে
পারি সব;
তখন
ভগবান ভাবে। —মহারাজ,
কথামৃতে
আছে,
ঠাকুর
বলছেন,
ভাবে
না থেকে হাত ভেঙে গেল। এটার
অর্থ কী?
আমাদের
ধারণা,
ভাবে
থেকেই হাত ভেঙে যাওয়ার
সম্ভাবনা।
মহারাজ
:
প্রকৃতিভাবে
তাকে আলিঙ্গন করতে গেলেন,
এমন
সময় পড়ে হাত ভেঙে গেল। ওখানে
এরকম চলবে না। ‘ভাবে না
থেকে’-মানে,
ভাবমুখে
না থেকে। জগন্মাতা লােককল্যাণের
জন্য ঠাকুরকে ভাবমুখে থাকতে
নির্দেশ দিয়েছিলেন। মানে
ভাবস্থ হয়ে থাকতে বারণ
করেছিলেন। এখানে ঠাকুর তা না
করে ভাবস্থ হয়ে পড়েছেন,
তাই
বাহ্যজ্ঞান না থাকায় পড়ে
গিয়ে হাত ভেঙে যায়। যেখানে
যে সীমা দেখাচ্ছেন,
সেই
সীমার ভিতর থাকতে হবে।
প্রশ্ন:—আবার
বলছেন ঠাকুর,
হাত
ভেঙেছে অহঙ্কার নির্মূল করার
জন্য। এর অর্থ কী?
মহারাজ
:
বলা
মুশকিল। নরলীলা বােঝা খুব
কঠিন। বারবার ঠাকুর বলছেন,
চোদ্দ পােয়া সীমার ভিতর অসীম যে লুকিয়ে আছে—এটা বােঝা কঠিন। তবে একটা কথা মনে হয় নরলীলায় থাকা বা নিত্যে থাকা—দুটোই যে জগন্মাতার নির্দেশে হচ্ছে সেটিকে যেন সামান্য সময়ের জন্যও লঙ্ঘন করে নিত্যে ভাবস্থ হয়ে থাকতে চাওয়া বা যাওয়া—এই অহঙ্কারটুকু নির্মূল করার জন্য।
No comments