ঠাকুর বলেছেন কলিতে নারদীয়া ভক্তি, ভগবানের নামগুণগান, পূজা করলে তার ওপর ভালবাসা আসবে
|
Sri
Ramakrishna
|
প্রশ্ন : মহারাজ, ঠাকুর বলেছেন : কলিতে নারদীয়া ভক্তি। অর্থাৎ ভগবানের নামগুণগান, পূজা ইত্যাদি করলে তার ওপর ভালবাসা আসবে। আর স্বামীজী বলেছেন যেদিন থেকে ঠাকুর এসেছেন অর্থাৎ জন্ম নিয়েছেন, সেদিন থেকে সত্যযুগের সূচনা হয়েছে। সুতরাং বর্তমান যুগটি সত্যযুগ না কলিযুগ আমাদের সংশয় হচ্ছে। একটু বুঝিয়ে বলবেন?
মহারাজ : দেখ, এটা কোন যুগ তার উত্তর হল তােমার মন কোন্ স্তরে আছে ?
সময় বা কালটা মুখ্য নয়।
তােমার মনের অবস্থাটাই মুখ্য।
সত্যযুগেও অসৎ লােক ছিল, কলিযুগেও আছে।
হাঁ , ঠাকুর বলেছেন :- কলিতে নারদীয়া ভক্তি। নারদীয়া ভক্তির অর্থ অহেতুকী নিষ্কাম ভক্তি, যাতে ভক্ত ভগবানের কাছে কোন প্রতিদান চায় না, কেবল তাঁকে নিজের হৃদয়ের ভালবাসা অর্পণ করেই চরিতার্থ বােধ করে।
ভাগবত এ আছে ---
কৃতাদিযু প্রজা রাজন কলাবিচ্ছন্তি সম্ভব।
ভাগবত এ আছে ---
কৃতাদিযু প্রজা রাজন কলাবিচ্ছন্তি সম্ভব।
কলৌ বহু ভবিষ্যন্তি নারায়ণ-পরায়ণাঃ।।(১১৫৩৮)
যারা সত্যযুগের লােক তারা কলিযুগে জন্ম নিতে ইচ্ছা করেন।
কারণ, কলিতে ভক্তির সাহায্যেই মুক্তি পাওয়া যায়।
কিন্তু আমরা যদি ঠাকুরের ভাবের অনুসরণ করি, তাহলে সত্য আর কলির এরকম পার্থক্য করলে চলবে না।
ঠাকুর বিভিন্ন ভক্তকে একই কালে ভিন্ন ভিন্ন উপদেশ দিয়েছেন।
সুতরাং এরকম বাঁধাধরা কোন নিয়ম হতে পারে না যে, কলিতে ভক্তিযােগ, সত্যে জ্ঞানযােগ, আর ত্রেতায় কর্মযােগ অভ্যাস করবে।
অর্থাৎ যুগ প্রধান কথা নয়, মনের অবস্থাটাই হল প্রধান কথা।
সুতরাং ঠাকুর কখনােই সকলের জন্য এক নিয়মের কথা বলে যাননি।
তিনি অধিকারী বিচার করে উপদেশ দিতেন।
শ্রীশ্রীমায়ের মধ্যেও দেখতে পাই অধিকারিভেদে উপদেশ ভিন্ন ভিন্ন।
কাউকে বলছেন : বাবা, বিয়ে করনি, বেশ।
আবার কাউকে বলছেন : হাঁ বাবা, বিয়ে করবে বৈকি, দেখ না সবকিছুই দুটি দুটি।
এর কারণ হল অধিকারিভেদ, যুগভেদ নয়।
একই যুগে ত্রেতাযুগের লােক আছে, আবার কলিযুগের লােক আছে।
যে-ভাগবতে নাম-মাহাত্ম প্রচারিত হয়েছে, সেই ভাগবতেই আবার অধিকারিভেদের কথা বলা হয়েছে।
কারাে পক্ষে জ্ঞানযােগ, কারাে পক্ষে ভক্তিযােগ, কারাে পক্ষে কর্মযােগ প্রশস্ত।
কাজেই আমরা কোন নির্দিষ্ট যুগে জন্মাইনি।
স্বামীজী যে বলেছেন ঠাকুরের জন্মের সঙ্গে সঙ্গে সত্যযুগের সূচনা হয়েছে, তার অর্থ ভিন্ন।
ঠাকুর তাঁর সাধনার দ্বারা আধ্যাত্মিক জীবনযাপনের পথ সুগম করে গেছেন।
এ-পথ অনুসরণকারীদের সংখ্যা ধীরে ধীরে অধিকহবে এবং মানুষের মন চৈতন্যের উচ্চস্তরে উঠতে থাকবে।
যাহােক, বর্তমানকালে পুরাণের মত মেনে যুগবিভাগ করলে চলবে না।
কাজেই মানুষের মনের অবস্থা অনুযায়ী যুগবিভাগ করতে হবে।
সত্যযুগেও যে লােকের মন অধােগামী ছিল, পুরাণে তাে এরকম উদাহরণের কোন অভাব নেই।
স্বামীজী বলেছেন সত্যযুগ এসেছে।
তা সত্যযুগ তাে জ্ঞানপ্রধান।
তাহলে তিনি কর্ম করতে বললেন কেন?
মনে হবে এটা বিরুদ্ধ কথা।
কিন্তু কোন বিরােধিতা এখানে নেই।
যেরকম মনের অবস্থা, তার ওপর যুগটা নির্ভর করছে।
এখন প্রশ্ন হল এই যে, মনের অবস্থা কীরকম, কে বলে দেবে?
উত্তর হল তােমার মনই বলে দেবে, যদি তুমি নিরপেক্ষভাবে বিচার করতে পার।
অর্থাৎ যদি পক্ষপাত না রেখে বিচার কর, তােমার মনই বলে দেবেকোন্ যুগে তুমি আছ।
যেরকম মনের অবস্থা, সেই অনুসারে অধিকার।
যে কর্মপ্রবণ, সে কর্মযােগের মধ্য দিয়ে যাবে।
যে যুক্তিপ্রবণ, সে জ্ঞানের মধ্য দিয়ে যাবে।
এর জন্য সাধারণ কোন নির্দেশ থাকা সম্ভব নয় যে, এক বিশেষ কালে সকলেই একটি বিশেষ যােগের মধ্য দিয়ে যাবে।
No comments