কিভাবে ঘন ঘন হাঁচি দেয়া বন্ধ করবেন
হাঁচি
কি?
কিভাবে ঘন ঘন হাঁচি দেয়া বন্ধ করবেন
মানবদেহের
অনেক বিস্ময়ের মধ্যে একটি
হলো এই হাঁচি। চিকিৎসাবিজ্ঞানের
ভাষায় হাঁচিকে বলা হয় “Achoo”
অথবা
“Sternutation”।
আর ইংরেজিতে বলা হয় “Sneeze”
(স্নীজ্)
যা
ল্যাটিন শব্দ “Sterno”
থেকে
এসেছে,
যার
অর্থ হচ্ছে বিস্তৃত করা,
প্রসারিত
করা বা ছড়িয়ে দেয়া।
কিভাবে
ঘন ঘন হাঁচি দেয়া বন্ধ করবেন
হাঁচি
একটি শ্বাস-প্রশ্বাসের
সাথে সম্পর্কিত ইচ্ছানিরপেক্ষ
নিরাপত্তামূলক একটি বিশেষ
শারীরিক ক্রিয়া যা কিনা দেহের
অনেকগুলো অঙ্গের একটির পর
একটি সাধারণ নড়াচড়ার মাধ্যমে
সম্পূর্ণ হয়। একবার আপনি
হাঁচির জন্যে টেনে দম নিলেন
তো বাকী কাজটুকু আপনি আপনা-আপনিই
করবেনই। শুধুমাত্র হাঁচিটা
কোন দিকে দিবেন আর কত জোরে
দেবেন এটুকুই আপনার নিয়ন্ত্রণে
থাকে।
বিজ্ঞানীরা
আমাদের ব্রেনের একটি নির্দিষ্ট
অংশকে ‘হাঁচি কেন্দ্র’ বলে
নামকরণ করেছেন। যখন আপনার
নাকের ভেতরে সুড়সুড়ি লাগে,
তখন
একটি বার্তা আপনার ব্রেনের
এই হাঁচি কেন্দ্রে প্রেরিত
হয়। এই হাঁচি কেন্দ্র তখন সাথে
সাথে আরেকটি বার্তা সেই সকল
দেহ পেশিকে প্রেরণ করে,
যারা
কিনা একত্রে মিলিত হয়ে একটি
অসাধারণ জটিল প্রক্রিয়া
সম্পন্ন করে,
যাকে
আমরা হাঁচি বলে থাকি।
আরও
বলা যায়,
হাঁচি
হলো স্নায়ুর উপর উদ্দীপনা
সৃষ্টির দরুন ইচ্ছানিরপেক্ষ
একপ্রকার ক্রিয়া। অনেকটা
শীতের কারণে দেহে কাঁপুনি
ওঠার মতো করে হাঁচিও একবার
কোন কারণে শুরু হলে আর থামতে
চায় না।
হঠাৎ
করে প্রবল বেগে নাক এবং মুখ
থেকে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাতাসের
নির্গমনই হলো হাঁচি।
হাঁচির বৈশিষ্ট্য-
একটি
হাঁচির সময় ঘন্টায় প্রায় 100 মাইল বেগে নাক দিয়ে বাতাস
বেরিয়ে আসে। আর এর সাথে বেরিয়ে
আসা জলীয়পদার্থ প্রায় পাঁচ
ফুট দূরত্ব পর্যন্ত ছড়িয়ে
যেতে পারে। হাঁচির স্প্রের
কথা ভুলে গেলে চলবে না – প্রায় 2,000 থেকে 5,000 জীবাণুযুক্ত
তরলপদার্থ নাক-মুখ
দিয়ে হাঁচির মাধ্যমে বেরিয়ে
আসে। আমাদের দেহের অ্যাবডোমিনাল
বা পেটের পেশি,
বুকের
পেশি,
ডাইআফ্র্যাম
বা বক্ষ-উদরের
মধ্যে উপস্থিত পেশি,
স্বরযন্ত্র
নিয়ন্ত্রণকারী পেশি এবং কণ্ঠের
পেছনের পেশি একটি হাঁচি সম্পন্ন
হতে সাহায্য করে থাকে। হাঁচি
হওয়ার জন্যে এক সেকেন্ডেরও
কম সময় লাগে। যদি নাক বন্ধ করে
হাঁচি দেয়া হয়,
তবে
তা 176mmHg
বায়ু
চাপের সমান চাপ সৃষ্টি করতে
পারে। এটা আপনার শ্রবণ শক্তিকে
এবং চোখকে নষ্ট করে দিতে পারে।
তাই আপনার হাঁচি আপনি গর্বের
সাথে উড়িয়ে দিন। তবে বাতাসে
নয়,
রুমালে।
আর অনেকে বলে থাকেন যে,
হাঁচির
সময় পাপকিন বা পাইনাপেল বললে
হাঁচিটা সহজে বের হয়ে যায়।
হাঁচির সূত্রপাত এবং স্নায়ু-পেশির কার্যাবলি-
আমাদের
নাকের ভেতরে লোম পার হয়ে যখন
কোনো অস্বস্তিকর ধূলা,
ফুলের
রেণু,
ঝালের
গুড়া বা অন্য কোন উপাদান নাকের
ভেতরে প্রবেশ করে তখন আমাদের
হাঁচি হয়। আমাদের নাকের ছিদ্রের
ভেতরের লোম অনেকটা ঝাড়ুর মতো
কাজ করে। এগুলি প্রতিটি
নিঃশ্বাসের সাথে নাকের ভেতরে
প্রবেশ করা হাজার-হাজার
উপাদানকে আটকে দেয় এবং সাথে
ধরে রাখে। আর যদি এই ঝাড়ুর মতো
গেটকে টপকে কোন উত্তেজক ধূলাবালি
আমাদের নাকের ভেতরে প্রবেশ
করে,
তবে
আমাদের হাঁচির সূত্রপাত হয়।
ঝাঁঝাঁলো বা কড়া গন্ধ থেকেও
হাঁচি হতে পারে। আসলে ধূলাজাতীয়
কোন পদার্থ হোক আর কোন গন্ধই
হোক না কেন,
আমাদের
নাকের ভেতরে উত্তেজনা বা
সুড়সুড়ি সৃষ্টি হলেই আমাদের
হাঁচি হয়। হাঁচি দেবার সময়
আমাদের স্নায়ুতন্ত্র এবং
পেশিতন্ত্র উভয়ই একসাথে
অতিদ্রুত কাজ করে থাকে।
হাঁচিকে
সাধারণত দু’টি পর্বে ভাগ করা
যায়।
একটি সংবেদনশীল পর্ব আর অন্যটি বহির্মুখী বা শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত পর্ব। সংবেদনশীল পর্বে আপনার নাকে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, সুড়সুড়ি অনুভূত হয়। আর তা সংকেত দেয় যে কিছু একটা আসছে। এটাই সেই মূহুর্ত যখন আপনি আপনার আঙুল নাকের নিচে দিয়ে চেষ্টা করেন এটাকে ঠেকানোর জন্যে এবং আপনি খুব ভালোভাবে সফলও হন।
একটি সংবেদনশীল পর্ব আর অন্যটি বহির্মুখী বা শ্বাস-প্রশ্বাস সংক্রান্ত পর্ব। সংবেদনশীল পর্বে আপনার নাকে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, সুড়সুড়ি অনুভূত হয়। আর তা সংকেত দেয় যে কিছু একটা আসছে। এটাই সেই মূহুর্ত যখন আপনি আপনার আঙুল নাকের নিচে দিয়ে চেষ্টা করেন এটাকে ঠেকানোর জন্যে এবং আপনি খুব ভালোভাবে সফলও হন।
আসলে
হাঁচির জন্য দায়ী কোন উপাদান
বা গন্ধ নাকের ভেতরে মিউকোসা
অংশে পৌঁছালে সেখানে উত্তেজনা
বা সুড়সুড়ি জাতীয় অনুভূতি
সৃষ্টির কারণে হিস্টামিন
নামক একধরনের পদার্থ নিঃসৃত
হয়। যা মিউকোসা স্তরের নিচে
ছড়িয়ে থাকা ট্রাইজেমিনাল
স্নায়ু কোষকে উত্তেজিত করে।
আর এর ফলাফল স্বরূপ একটি সংকেত
আমাদের ব্রেনের হাঁচি কেন্দ্রে
চলে যায়। ট্রাইজেমিনাল স্নায়ুটি
আমাদের করোটির 12টি স্নায়ুর
মধ্যে 5ম স্নায়ু যা কিনা আমাদের
মুখের চামড়ার নিচে,
পাশাপাশি
নাকের কোমল মিউকোসা স্তরের
নিচে ছড়িয়ে থাকে। আর আমাদের
নাকের ভেতরের মিউকোসা স্তরটি
আমরা নাকের ভেতরে আঙুল দিলে
সেটার অস্তিত্ব টের পেতে পারি।
আমাদের নাকের দুইটি ছিদ্রের
মাঝে অবস্থিত পাতলা তরুণাস্থির
উপরে এই মিউকোসা স্তরটি
বিদ্যমান।
No comments