প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী গম্ভীরানন্দ (১৮৯৯-১৯৮৮) - Spirituality Religion

Header Ads

প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী গম্ভীরানন্দ (১৮৯৯-১৯৮৮)

প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী গম্ভীরানন্দ (১৮৯৯-১৯৮৮)


Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna


কর্মব্যপদেশে আমাকে প্রায়ই তাঁর ঘরে যেতে হতাে। তাঁর দ্রুত কাজ করবার শক্তি দেখে আমি অবাক হয়ে যেতাম। ওয়েলিংটনের বাড়িতে তখন তিনি প্রব্রাজিকা মুক্তিপ্রাণার নিবেদিতার জীবনীর পাণ্ডুলিপি দেখছিলেন। একদিন গিয়ে দেখি, পেটের যন্ত্রণা কমাবার জন্য ইজিচেয়ারে বসে পেটের ওপর hot water-এর bag চেপে ধরে আছেন, আর হরিপদ মিত্রের স্বামীজীর স্মৃতিকথা ইংরেজিতে অনুবাদ করছেন Reminiscences of Swami Vivekananda গ্রন্থের জন্য। আমি বললাম, “মহারাজ, একটু বিছানায় শুয়ে পড়ুন। যন্ত্রণা কমলে আবার কাজ করবেন।” তিনি সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিলেন, “তুমি কি মনে কর বিছানায় শুলে আমার যন্ত্রণা চলে যাবে? স্বামীজীর কাজ করলে আমি যন্ত্রণা ভুলে যাই।” আমি অবাক হয়ে রইলাম। সে-স্মৃতি জীবনে ভুলব না আমার তখন ২৩/২৪ বছর বয়স। তাঁর কাছ থেকে শিখলাম কীভাবে স্বামীজীর কাজ করতে হয়।
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna
তখন বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে ভারতকোষ বেরােবে। সজনীকান্ত দাস ওয়েলিংটন লেনে এসে সহপাঠী গম্ভীর মহারাজকে তিনটে লেখা দিতে বলেন—শ্রীরামকৃষ্ণ, স্বামী বিবেকানন্দ ও রামকৃষ্ণ মিশন। প্রতিটি লেখা পাঁচশাে শব্দের মধ্যে লিখতে হবে। তিনি লিখলেন এবং শব্দ গুনে দেখলেন প্রায় হাজার শব্দ হয়ে গিয়েছে। তিনি জানতেন আমি সাহিত্য-চর্চা করি। আমাকে ডেকে বললেন, “ওহে, তুমি আমার কিছু শব্দ কমিয়ে দিতে পার?” প্রতিটি লেখা থেকে আমি দু-তিনশাে শব্দ কমিয়ে দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে লিখে দিলাম। তিনি একবার পড়ে বললেন, “দাও, সজনীর কাছে পাঠিয়ে।”

আমি বললাম, “পাঁচশাে শব্দ তাে হলাে না।” তিনি বললেন, “ওতে কিছু যায় আসে না।” সজনীকান্ত দাস ছিলেন ‘শনিবারের চিঠি'-র সম্পাদক ও সুসাহিত্যিক।
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna



স্বামী সংশুদ্ধানন্দজী (ভবতারণ মহারাজ) এসে গম্ভীর মহারাজকে বললেন, “বারাসত আশ্রম থেকে মহাপুরুষ মহারাজের একখানি স্মৃতিকথা বেরােবে, আপনাকে মহাপুরুষ মহারাজের একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী লিখে দিতে হবে।” সঙ্গে সঙ্গে রাজি হলেন। তিনি তখন স্বামীজীর Complete Worksএর index তৈরি করছেন দারুণ খাটুনি। এত কাজের মধ্যে গুরুর জীবনী লিখে আমাকে দিয়ে বললেন, “আমার হাতের লেখা বিশেষ ভাল নয়। তুমি একটু ভালভাবে লিখে প্রেসে পাঠিয়ে দাও।” আরেক দিন অদ্বৈত আশ্রমের trustee meeting-এর agenda লিখে আমাকে টাইপ করতে দিলেন। আমি তাঁর কাছে নিয়ে গেলে, তিনি না দেখেই সই করে সব trustee-র নামে পাঠিয়ে দিতে বললেন। আমি বললাম, “আপনি না পড়ে সই করে দিলেন!” তিনি বললেন, “তুমি তাে পড়েছ। তবে আমি কেন আবার দেখব?” এভাবে তিনি আমাদের আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে দিতেন। আমি যেন ভুল না করি—এজন্য আমাকে সদাসতর্ক থাকতে হতাে।

No comments

Powered by Blogger.