প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী গম্ভীরানন্দ
প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী গম্ভীরানন্দ
Sri
Ramakrishna
|
শ্রীকৃষ্ণ
তাঁর বৃন্দাবন -লীলা
সাঙ্গ করে কংস-বধ, শিশুপাল-বধ, কুরুক্ষেত্র
যুদ্ধে সারথির।কাজ
করে দ্বারকায় অবসর-জীবন
যাপন করছিলেন। একদিন তিনি
কথাপ্রসঙ্গে উদ্ধবকে বললেন,
‘উদ্ধব,
আমার
বাণী ভাগবতে এবং গীতায় রয়েছে।
তাছাড়া আমার একটা শেষ বাণী
আছে,
তবে
আমি এ পৃথিবী থেকে শীঘ্রই
বিদায় নেব।'
উদ্ধব
তাে হাউমাউ করে কেঁদে কৃষ্ণকে
বলল,
‘প্রভু,
আপনি
দয়া করে আমাদের ছেড়ে যাবেন
না। আপনি ছাড়া এ যদুবংশের
কে রক্ষণাবেক্ষণ করবে?
আপনি
ধর্মের রক্ষক,
বাহক
ও প্রবক্তা। আপনার অভাবে জগতে
ধর্মের গ্লানি হবে। কৃষ্ণ
তখন বলছেন,
না,
আমার
কাজ শেষ হয়েছে। আমাকে শীঘ্রই
এখান থেকে যেতে হবে।'
উদ্ধব
তখন বলল,
‘প্রভু,
আপনার
শেষ বাণীটি তবে দিয়ে যান।
কৃষ্ণ বললেন,
“দেখ
উদ্ধব,
আমি
স্বয়ং ভগবান—নরদেহ ধারণ করে
জীবের দুঃখমােচনের জন্য
জন্মগ্রহণ করলাম। কিন্তু
লােকে আমাকে দেখে ভয় পায়।
তারা মনে করে আমি ধ্বংসকারী।
কুলবধূরা পর্যন্ত আমাকে পথে
দেখলে দরজা-জানালা
বন্ধ করে। সেদিন বড় খিদে
পেয়েছিল এক বুড়ি গরুর দুধ
দুইছিল তাকে বললাম আমার খিদে
পেয়েছে,
একটু
কিছু খেতে দেবে?
সেই
বুড়ির দুধের ভাঁড় সঙ্গে
সঙ্গে হাত থেকে পড়ে ভেঙে গেল।
সে দৌড়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ
Sri
Ramakrishna
|
করে
দিল। মনে বড় দুঃখ হলাে এই
ভেবে যে,
আমি
স্বয়ং ভগবান হয়ে জগতের
দুঃখ-কষ্ট
নিবারণ করবার জন্য দিনরাত
খাটি,
আর
এরা সব আমাকে বিভীষিকার মতন
দেখে। জীবনের শেষপ্রান্তে
পৌঁছে আমি তােমাকে এই শেষ
কথাটি বলছি যে,
আমি
স্বয়ং ঈশ্বর হয়েও জগতের সব
দুঃখ-কষ্ট
লাঘব করতে অক্ষম। সুতরাং,
এ
জগতে কারাে কিছু করবার নেই।
”
গল্প
শেষ করে গম্ভীর মহারাজ বললেন,
“স্বামীজী
বলেছেন,
জগৎটা
কুকুরের বাঁকা লেজ। একে সােজা
করবার চেষ্টা করতে হবে এবং ঐ
চেষ্টার দ্বারা আমরাই সােজা
হয়ে যাব। জগৎ যেমন তেমনি
থাকবে।”
রাশিয়ার
প্রথম নারী মহাকাশচারিণী
ভ্যালেন্টিনাকে কলকাতার
মেয়র নাগরিক সংবর্ধনা জানান।
ঐ সভায় দয়ানন্দজী ও ভরত
মহারাজের সঙ্গে। গম্ভীর
মহারাজও গিয়েছিলেন। ফিরে
এসে তিনি আমাকে বললেন,
“ওহে
আজ এক নূতন ধরনের বাংলা শুনলাম।
ভ্যালেন্টিনা বাংলা কথা
রাশিয়ার ভাষায় লিখে বললেন,
আপনাদের
দেশে আসিয়া আমাদের ভয়ানক
গরম লাগিয়াছে। এ গরম আবহাওয়ার
গরম নয়,
আপনাদের
হৃদয়ের গরম। ”
সুরেন্দ্রনাথ
চক্রবর্তী ছিলেন শ্রীশ্রীমায়ের
শিষ্য। তাঁর স্ত্রী মারা
যাওয়ায় প্রায়ই গম্ভীর
মহারাজের কাছে এসে কাঁদতেন।
তিনি খুবই সহানুভূতির সঙ্গে
বৃদ্ধ ভক্তকে সান্ত্বনা দিতেন।
তারপর একদিন গম্ভীর মহারাজ
সুরেনবাবুকে আমার সঙ্গে পরিচয়
করিয়ে দিয়ে বলেন,
“তুমি
এঁর সঙ্গে একটু কথা বােলাে
আমার সময় কম।” তারপর থেকে
সুরেনবাবু আমার কাছে এসে
সুখ-দুঃখের
গল্প করতেন;
মায়ের
কৃপার কথা,
ঠাকুরের
সন্তানদের কথা বলতেন। ভবভূতি
‘উত্তররামচরিত'-এ
আদর্শ চরিত্র নিরূপণ করতে
গিয়ে বলেছেন,
'বজ্রাদপি
কঠোরাণি মৃদুনি কুসুমাদপি।
এই যুগপৎ বিরােধী ভাব গম্ভীর
মহারাজের জীবনে লক্ষ্য করেছি।
No comments