প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী গম্ভীরানন্দ
প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী গম্ভীরানন্দ
|
স্বামী
শিবস্বরূপানন্দজী (মতি
মহারাজ)
তখন
শ্যামলাতালের অধ্যক্ষ। অদ্বৈত
আশ্রমে তিনি কয়েক দিন ছিলেন।
একদিন কথাপ্রসঙ্গে তিনি গম্ভীর
মহারাজকে বলেন,
“আপনি
চুপচাপ ঘরে বসে কাজ করেন।
সাধু-ব্রহ্মচারীদের
কোনাে উপদেশ দেন এরা শিখবে
কী করে?”
তিনি
প্রত্যুত্তরে বললেন,
“ওরা
আমার জীবন দেখছে না?”
আর
কিছু বললেন না। তিনি নিজ জীবনে
ঠাকুর-মা-স্বামীজীর
আদর্শ ফুটিয়ে তুলেছিলেন।
Sri
Ramakrishna
|
স্বামী
শাশ্বতানন্দজীর শরীর যাওয়ার
পর স্বামী বীরেশ্বরানন্দজী
একা মঠমিশনের কাজ চালাতে
থাকেন। গম্ভীর মহারাজকে মঠ
ও মিশনের সহকারী সম্পাদক
হওয়ার জন্য অনুরােধ জানালে
তিনি প্রথমে অস্বীকার করেন।
তখন স্বামীজীর জন্মশতবার্ষিকীর
কাজ পুরােদমে চলছে। তারপর
স্বামী মাধবানন্দজীর আদেশে
তিনি মঠে যান সহকারী সম্পাদক
হয়ে। গম্ভীর মহারাজকে farewell
দেওয়ার
জন্য বিরাট ভাণ্ডারার ব্যবস্থা
হয় অদ্বৈত আশ্রমে। আমি ছিলাম
ভাণ্ডারি। প্রায় ২৫০ জন
সাধু-ব্রহ্মচারীর
খাওয়ার ব্যবস্থা করতে আমাকে
খুব ছােটাছুটি করতে হয়েছিল।
গম্ভীর মহারাজ আমার অবস্থা
লক্ষ্য করে বলেন,
“why are you working so hard to throw me out from the Ashrama?"
এই
humour-এর
মধ্যে প্রকাশ
পেত তাঁর নির্লিপ্ততা ও
অনাসক্তি।
১৯৬৪
সালে আমি ট্রেনিং সেন্টারে
যাই। গম্ভীরানন্দজী তখন
অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি,
লেগেট
হাউসের মাঝের ঘরে থাকতেন।
আমি প্রতি রবিবার ওঁর ঘরে
বইপত্রের ধুলাে ঝাড়তে যেতাম
আর ওঁর জুতাে পালিশ করতাম।
অক্ষয়তৃতীয়ার দিন আমায়
বলছেন,
“হাসপাতালে
দেখতে গেলাম মৃত্যুঞ্জয়ানন্দকে
(আসানসােলের
মােহন্ত,
মহাপুরুষ
মহারাজের শিষ্য)—একটা
বই পড়ছে—বিমল মিত্রের কড়ি
দিয়ে কিনলাম। তিরিশ টাকা
দাম। আমি যদি স্বামীজীর জীবনী
লিখি লােকে পড়বে?”
আমি
বললাম,
“হ্যাঁ।
কেন পড়বে না?
নিশ্চয়
পড়বে মহারাজ। লেখা শুরু করুন
কারণ আগেই বলেছিলাম,
গার্গীর
লেখা স্বামীজীর অনেক তথ্য
বেরিয়েছে। আর প্রমথনাথ বসুর
বইটা ব্যাকডেটেড হয়ে গিয়েছে।
আপডেটেড বায়ােগ্রাফি লেখা
উচিত।”
Sri
Ramakrishna
|
সেদিন
থেকে গম্ভীর মহারাজ যুগনায়ক
বিবেকানন্দ’ লিখতে শুরু করলেন।
দু-বছরের
মধ্যে প্রায় দু-হাজার
পৃষ্ঠা লিখে ফেললেন। খুব দ্রুত
লিখতে পারতেন। আমি তখনাে
ট্রেনিং সেন্টারে। আমি ঐ বই-এর
এডিটর ছিলাম। যে-সমস্ত
তথ্য তিনি বইতে ঢােকাতে পারেননি,
আমি
সেগুলাে জোগাড় করে তাঁকে
দিতাম। একদিন বললাম,
“মহারাজ,
ঐ
ঘটনাটা তাে দেননি,
যা
মিরাটে হলাে। হরি মহারাজের
চিঠিতে আছে। স্বামীজী একদিন
পােলাও রান্না করলেন। গুরুভাইদের
পরিবেশন করে খাওয়ালেন। কিছুই
নিজের জন্য রাখলেন না। ওঁরা
বললেন,
‘স্বামীজী,
আপনার
জন্য কিছু রাখলেন না?
স্বামীজী
বললেন,
“আমি
জীবনে ঢের খেয়েছি তােরা খা।
”
Sri
Ramakrishna
|
সব
দিয়ে দিলেন স্বামীজী। নিজে
কিছু খেলেন না। ঐ সমস্ত ছােট
ছােট ঘটনা দিতে থাকতাম,
আর
গম্ভীরানন্দজী সে-সমস্ত
বইতে ঢােকাতেন। আমি একদিন
বললাম,
“মহারাজ,
কী
করে ঢােকান?”
মহারাজ
বললেন,
“দেখ,
নিখিলানন্দ
মহারাজের কাছ থেকে এই টেকনিক
শিখেছি। উনি যেটা যােগ করতেন
সেটা আলাদা সাদা কাগজে লিখতেন
আর তারপরে কাটা জায়গায় পেস্ট
করতেন। এটা শিখেছি,
যাতে
আমার গােটা পৃষ্ঠাটা রিরাইট
না করতে হয়।”
তখন
তাে কমপিউটার হয়নি। সব হাতে
লিখতে হতাে। বইটা তাে লেখা
হলাে। গম্ভীর মহারাজ তিন
খণ্ডের তিনটে নাম দিয়েছিলেন—প্রস্তুতি,
প্রচার,
প্রকল্প।
আমি আপত্তি করলাম। বললাম,
“মহারাজ,
প্রকল্প
হবে না,
খাটবে
না।”
Sri
Ramakrishna
|
-কেন?
প্রকল্প
মানে প্রকৃষ্টরূপে কল্পনা।
স্বামীজী কি সঘকে কল্পনা
করেছেন?
আমার
মনে হয় প্রবর্তন কথাটা ভাল
হবে। প্রকল্পের প্র’ অনুপ্রাসটিও
এতে আছে।
—তােমার
প্রবর্তন’-এর
পক্ষে কী যুক্তি আছে দেখাও।
—মহারাজ,
বুদ্ধদেব
যখন নির্বাণলাভ করে সারনাথে
এলেন তখন তিনি। ‘ধর্মচক্র
প্রবর্তন করলেন। প্রবর্তন
কথাটাই এখানে খাটবে। স্বামীজী
রামকৃষ্ণ সঙ্ঘ প্রবর্তন
করেছেন।
–আচ্ছা,
ঠিক
বলেছ।
তা-ই বসাও।
তা-ই বসাও।
অন্য
কেউ হলে বলতেন—না,
আমি
যা লিখেছি তা-ই
হবে। গম্ভীর মহারাজকে শুধু
যুক্তিটা দেখিয়ে দিলেই হতাে।
স্বামীজী
বলেছেন,
“Love and freedom are the two conditions for growth.” এই
দুটি গম্ভীর মহারাজের কাছ
থেকে যথেষ্ট পেয়েছি। তিনি
তখন মঠ-মিশনের
সাধারণ সম্পাদক। একদিন হঠাৎ
জিজ্ঞাসা করলেন,
“কী
চাও?”
আমি
বললাম,
“কিছুই
না।” “আশীর্বাদও চাও না?”
“আশীর্বাদ
তাে সদাই আপনি আমার ওপর বর্ষণ
করছেন। সুতরাং,
আমাকে
তা চাইতে হবে না।” তিনি হাসলেন।।
No comments