প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী গম্ভীরানন্দ (১৮৯৯-১৯৮৮) - Spirituality Religion

Header Ads

প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী গম্ভীরানন্দ (১৮৯৯-১৯৮৮)

প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী গম্ভীরানন্দ

Sri Ramakrishna


১৯৬৮-তে গম্ভীরানন্দজী ব্যারাকপুরে অখিল ভারত বিবেকানন্দ যুবমহামণ্ডলের বার্ষিক ক্যাম্প উদ্বোধন করতে যান। আমি সঙ্গে ছিলাম সভা শুরু হওয়ার আগে আমার বাবা ও দাদা গম্ভীর মহারাজকে একবার আমাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য অনুরােধ করেন। তিনি আমার বাবা ও দাদাকে চিনতেন না। তাই জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনারা কে? কেন আপনাদের বাড়ি যাব? কেউ বলল, “ইনি (আমার নাম করে) অমুকের বাবা।” স্বামী গম্ভীরানন্দ মহারাজ আমাকে ডেকে পাঠালেন। আমিও অনুরােধ করে বললাম, “আপনার পায়ের ধুলাে পড়লে আমাদের বাড়ি ধন্য হয়ে যাবে।” তিনি আমার বাবাকে বললেন, “যেতে পারি এই শর্তে—আমি কিছু খাব না।” অধিবেশনের পর তিনি আমাদের বাড়িতে গেলেন। আমার মা এক প্লেট-ভর্তি সন্দেশ রসগােল্লা ও এক গ্লাস জল দিলেন। স্বামী গম্ভীরানন্দ মহারাজ বললেন, “আমি তাে আগেই বলে দিয়েছি, আমি কিছু খাব না।” আমি বললাম, “মহারাজ, এঁরা গৃহস্থ ঠাকুর। ঠাকুর বলেছেন যে, গৃহস্থদের বাড়ি সন্ন্যাসী গেলে একটু কিছু মুখে দিয়ে আসবে তাদের মঙ্গলের জন্য। যদি তাদের কিছু না থাকে তাে জল চেয়ে খাবে। আপনি একটু সন্দেশ ভেঙে মুখে দিয়ে একটু জল খান তিনি তা-ই করলেন। পান্ডে ড্রাইভার খুব আনন্দের সঙ্গে গােটা প্লেটটা খালি করে দিল।

Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna

আমার সন্ন্যাস হলাে ১৯৬৯ সালে। পরের বছর ঠিক হলাে আমাকে আমেরিকায় পাঠানাে হবে। মায়াবতী থেকে ফিরেছি ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে। ১৯৭১ সালে স্বামীজীর জন্মদিনে অদ্বৈত আশ্রম থেকে বেলুড় মঠে গিয়েছি। স্বামী গম্ভীরানন্দ মহারাজ পুরানাে মিশন অফিসের দোতলার বারান্দায় একা একা পায়চারি করছিলেন। আমি প্রণাম করতেই বললেন, “ওহে, তােমাকে হলিউড যেতে হবে।” আমি বললাম, “Wrong selection. আরাে কত senior পণ্ডিত সাধু আছেন, তাঁদের পাঠান।” তিনি বললেন, “তুমি যদি যেতে না চাও আমাকে জানাও, আমি মিটিং-এ তােমার মত পেশ করব।” আমি কিছু বললাম না। শেষে শুনলাম, মঠ থেকে দু-তিন জন সাধুর নাম প্রভবানন্দজীকে পাঠানাে হয়েছিল। তিনি সব নাকচ করে দিয়ে আমাকেই চেয়ে পাঠিয়েছেন।
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna



১৯৭১ সালের ২৭ মে আমি বেলুড় মঠ থেকে স্বামী গম্ভীরানন্দ মহারাজ ও নির্বাণানন্দজীর সঙ্গে বােম্বাই যাই এবং সেখান থেকে আমেরিকা যাত্রা। স্বামী গম্ভীরানন্দ মহারাজ জিজ্ঞাসা করলেন, “ওহে, পঞ্জিকা দেখেছ?” আমি বললাম, “না, মহারাজ।” “পঞ্জিকা না দেখেই তুমি যাত্রা করবে?” “মহারাজ, আমি ঠাকুরের কাজ করতে যাচ্ছি, তাদের যদি পছন্দ না হয় ফিরে আসব।”
১৯৭১ সালের ৩১ মে বােম্বাই-এর Gateway of India-তে স্বামীজীর বিরাট ব্রোঞ্জ মূর্তির আবরণ উন্মােচন হয়। স্বামী হিরন্ময়ানন্দজী তখন বােম্বাই-কেন্দ্রের অধ্যক্ষ। সেখানে তিন-চার দিন ধরে উৎসব ও শতাধিক সাধুর সম্মেলন হয়। অধিকাংশ trustee এসেছিলেন। তারপর ১ জুন মস্কো হয়ে প্যারিস যাই। সেখানে বিদ্যাত্মানন্দজীর সঙ্গে এয়ারপাের্টে দেখা না হওয়ায় মহা অসুবিধায় পড়ি এবং অবশেষে ভারতীয় দূতাবাসের এক ভদ্রলােকের বাসায় উঠি। পরে বিদ্যাত্মানন্দজী এসে আমাকে আশ্রমে নিয়ে যান। তারপর লন্ডন থেকে আমি স্বামী গম্ভীরানন্দ মহারাজকে আমার প্যারিসের অসুবিধার কথা লিখি এবং শেষে ১২//১৯৭১ তারিখে হলিউড থেকে 

নির্বিঘ্নে পৌঁছানাের সংবাদ দিয়ে লিখি ঃ “আপনি আমাকে হাত-পা বেঁধে প্রশান্ত মহাসাগরে ফেলে দিয়েছেন। আমাকে যদি বাঁচতে হয় তাহলে সাঁতরাতেই হবে, তাছাড়া আর উপায় নেই। আমার গতি কী হবে জানি না।” তিনি ২৪//১৯৭১ তারিখে লেখেন ঃ “তােমার লন্ডনের চিঠি পেয়ে দুঃখ হয়েছিল এই ভেবে যে, বিদেশে যাওয়ার প্রথম স্তরেই একটা ধাক্কা খেতে হলাে। কিন্তু ১২/৬ তারিখের দ্বিতীয় চিঠি পেয়ে আনন্দ হলাে, বিশেষ করে শেষের পঙক্তিটি উপভােগ্য—আমার গতি কী হবে জানি না'—তােমার কথার উত্তরে লিখি, সবই যদি তুমি জেনে ফেলবে তবে ভগবান স্বাধীন, স্বতন্ত্র ইত্যাদি যা আমরা বলে থাকি, তার কী হবে? আমাদের philosophy-টা কী? পড়ে মার খেতে হবে, অথচ বলতে হবে, প্রভু, তুমি বড় দয়াল, তােমারই ইচ্ছা পূর্ণ হােক। ”
১৯৭২ সালের গ্রীষ্মে স্বামী গম্ভীরানন্দ মহারাজ চোখের চিকিৎসার জন্য বস্টনের হাসপাতালে ভর্তি হন। ব্রহ্মচারী ধ্রুব (আমেরিকান) মহারাজের সেবক হয়। আমিও বস্টনে ঐ সময়ে কয়েক দিনের জন্য যাই হলিউড থেকে। স্বামী গম্ভীরানন্দ মহারাজকে হাসপাতালে দেখতে যেতাম। ধ্রুব সকালে তাঁকে Gospel of Sri Ramakrishna পড়ে শােনাত; আর বিকালে কঠ উপনিষদ পড়ত। তিনি বিছানায় শুয়ে চোখ বুজে ব্যাখ্যা করতেন। প্রথম দিন যেতেই উঠে বসলেন এবং ধ্রুবকে বললেন, “দাও তাে চশমাটা। দেখি ও কীরকম সাহেব হয়েছে (প্যান্ট, কোট, টাই পরেছে)।” ঐ দিন খাটে বসে আমাকে




No comments

Powered by Blogger.