প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী গম্ভীরানন্দ  - Spirituality Religion

Header Ads

প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী গম্ভীরানন্দ 

প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী গম্ভীরানন্দ 

Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna

ঐ দিন খাটে বসে আমাকে আলিঙ্গন করলেন এবং খুব আশীর্বাদ করলেন। আরেক দিন গিয়েছি, তখন ধ্রুব কঠ উপনিষদ পড়ছিল। সে পড়া বন্ধ করে আমার উপস্থিতির কথা জানাতেই তিনি বললেন, “ঐ শ্লোকটা আগে শেষ হােক। তারপর কথা হবে।” তাঁর কাছ থেকে শিখেছিলাম কী করে সুদিনে-দুর্দিনে, রােগে-শােকে ভগবান ও বেদান্ত শাস্ত্রকে ধরে মনকে উচ্চগ্রামে তুলে রাখতে হয়। শঙ্করাচার্যের কৌপীনপঞ্চক-এ পড়েছিলাম ‘বেদান্তবাক্যে সদা রমন্তঃএটা গম্ভীর মহারাজের জীবনে লক্ষ্য করেছি।
বস্টন থেকে গম্ভীর মহারাজ আমেরিকার বিভিন্ন কেন্দ্র ঘুরে হলিউডে আসেন কালীপুজোর সময়। হলিউড ও স্যান্টা বারবারায় বক্তৃতা দেন। আমি তাঁর পাশের ঘরে থাকতাম একদিন রাতে খাওয়ার পর আমাকে বলছেন, ' “ওহে, এদেশে কীভাবে বক্তৃতা দিতে হয় জানি না। তাছাড়া এখন চোখেও ভাল দেখি না। তুমি কিছু পয়েন্ট বলাে—আমি শুনি।” আমি বললাম, “আপনি পণ্ডিত সাধু আপনার সব জানা। আপনি বেদান্ত ও স্বামীজীর ভাব নিয়ে বলবেন।” প্রভবানন্দজী introduce করে দেন। অপূর্ব বক্তৃতা দিলেন।
একদিন রাতে হলিউডে খাওয়ার পর গল্প করলেন। তারপর মঠ-মিশনের নিয়মকানুন নিয়ে আলােচনা হলাে। আমি বললাম, “আমার নিয়মকানুন বেশি পছন্দ হয় না। ধর্মকে নিয়মের দ্বারা বাঁধলে stagnation এসে যাবে। ধর্ম তখন স্বাধীনভাবে শ্বাস নিতে পারবে না। Human heart-কে নিয়মের দ্বারা বাঁধা যায় না, কারণ মানুষ মেশিন নয়। তাছাড়া প্রভবানন্দজীর কাছে শুনেছি, কৃষ্ণলাল মহারাজ (স্বামী ধীরানন্দ) একবার রাজা মহারাজকে সাধু-ব্রহ্মচারীদের জন্য কিছু নিয়ম করতে বলেন। মহারাজ উত্তরে বলেন, ‘স্বামীজী তাে already নিয়মাবলি তৈরি করে দিয়ে গিয়েছেন। দেখ কৃষ্ণলাল, নিয়মকানুন না বাড়িয়ে ভালবাসাটা একটু বাড়িয়ে দাও। ”

গম্ভীর মহারাজ শুনে বললেন, “দেখ, নিয়ম ছাড়া কোনাে সঙ্ঘ function করতে পারে না। স্বামীজী বলেছেন যে, নিয়মের ভেতর দিয়ে নিয়মের পারে যেতে হবে। তারপর হাসতে হাসতে মহারাজ বললেন, “একটা গল্প শােনাে ? একদিন খুব বৃষ্টি পড়ছিল। এক কাবুলিওয়ালা একটি শিবমন্দিরে ঢুকে শিবের মাথায় জুততাসহ পা-দুটি রেখে ঘুমিয়ে পড়ল। এমনসময় একজন ব্রাহ্মণ বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ঐ মন্দিরে ঢুকল। অসাবধানতাবশত তার পা শিবের বিগ্রহে লাগল। সে সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা চেয়ে শিবকে প্রণাম করল। শিব
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna



কিন্তু অমনি জীবন্ত রূপ ধরে ত্রিশূলসহ ব্রাহ্মণকে শাসন করতে উদ্যত হলেন। ব্রাহ্মণ কাতরস্বরে বলল, ‘প্রভু, এ তােমার কেমন বিচার? আকস্মিকভাবে আমার পা তােমার গায়ে লেগেছে, তার জন্য আমি ক্ষমা চেয়ে প্রণাম করেছি। কিন্তু ঐ বােটকা গন্ধযুক্ত কাবুলিওয়ালা তােমার মাথায় বুটজুতাে-পরা পা রেখে ঘুমােচ্ছে, তুমি তাে তাকে শাসন করছ না!' শিব বললেন, “দেখ, কাবুলিওয়ালা আমাকে জানেও না, মানেও না। তাই আমি ওর বিরুদ্ধে কোনাে action নিতে পারি না। কিন্তু তুমি তাে আমার মহত্ত্ব জান ও আমাকে মান, তাই তােমাকে শাসন করতে পারি। যারা ঠাকুরের সঙ্ঘের গুরুত্ব ও মহত্ত্ব জানে এবং ঠাকুরের আদর্শ মানে, তাদের ঠিক পথে চলবার জন্যই নিয়মকানুন। যারা অহঙ্কারী সাধু, নিয়ম মানতে চায় না, তারা সব ঐ বােটকা গন্ধযুক্ত কাবুলিওয়ালার মতাে। এই প্রসঙ্গে তিনি দু-এক জন সাধুর নামও করেছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.