প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী শঙ্করানন্দ
প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী শঙ্করানন্দ (১৮৮০-১৯৬২)
|
প্রশ্ন-মহারাজ, আমাদের কিছু উপদেশ দিন।
মহারাজ-রােজ
ঠাকুরের কথামৃত পড়বে। তাতে
সব উপদেশ আছে। যদি ঠাকুরের
উপদেশে তােমাদের সংশয় না
যায়,
আমার
উপদেশেও কিছু হবে না।
দীক্ষার্থীরা
একে একে মহারাজের কাছে গিয়ে
মাথা নােয়ালে তিনি তাঁর
রুদ্রাক্ষমালায় রক্ষিত
কবচটি দিয়ে সকলের মস্তক
স্পর্শ করে দিলেন। তারপর আমরা
সাষ্টাঙ্গ প্রণাম করে ঘর থেকে
বেরিয়ে মন্দিরে ঠাকুরকে প্রণাম করলাম এবং মঠে ঠাকুরের
প্রসাদ পেলাম।
তিনি জিজ্ঞাসা
করলেন,
“তুমি
গুরুদক্ষিণা দিয়েছ?”
আমি—হ্যাঁ, মহারাজ।
আমি—হ্যাঁ, মহারাজ।
আমার কোনাে পয়সা ছিল না।
অদ্বৈত আশ্রমের টাকা কোনাে
ritual-এ
ব্যয় করা চলবে না।
তাই আমার
এক ব্রহ্মচারী বন্ধু দু-টাকা
জোগাড় করে দিয়েছে।
এক টাকা
দিয়ে ফলমিষ্টি কিনেছি এবং
এক টাকা দক্ষিণা দিয়েছি।
বােধাত্মানন্দজী—না,
তুমি
গুরুদক্ষিণা দাওনি।
আমি—হ্যাঁ মহারাজ, আমি একটা রুপাের টাকা দিয়েছি।
বােধাত্মানন্দজী—না, তুমি গুরুদক্ষিণা দাওনি।
আমি—হ্যাঁ মহারাজ, আমি একটা রুপাের টাকা দিয়েছি।
বােধাত্মানন্দজী—না, তুমি গুরুদক্ষিণা দাওনি।
গুরুদক্ষিণা
কাকে বলে জান?
আজ
গুরু যে বীজমন্ত্র তােমার
হৃদয়ে বসালেন,
ঐ
মন্ত্র কালে অঙ্কুরিত
হয়ে
গাছ হবে।
ঐ গাছে ক্ৰমে পাতা,
ফুল
ও ফল হবে।
ঐ সুপক্ক ফলটি (অর্থাৎ
ঈশ্বরলাভ)
যেদিন
তুমি গুরুর হাতে দেবে সেদিনই
হবে প্রকৃত গুরুদক্ষিণা।
গুরু শিষ্যের কাছে ঐ দক্ষিণা
চান।
Sri
Ramakrishna
|
কয়েক
মিনিটের মধ্যে মঠ থেকে ফোন
আসে।
খুব ভােরেই বাসে করে মঠে
উপস্থিত হলাম এবং মহারাজকে
বিছানায় শায়িত দেখলাম।
আমার ওপর ভার পড়েছিল মহারাজের
পায়ের ছাপ
নেওয়ার।
তাঁর পায়ের নিচে দুটো বালিশ
রেখে পা দু-খানি
উঁচু করা হলাে।
একজন কাপড়
কাটতে লাগল,
অপর
ব্রহ্মচারী রক্তচন্দন,
শ্বেতচন্দন,
আলতা
প্রভৃতি মহারাজের পায়ের
নিচে লাগাতে শুরু করল;
আমি
ঐ খণ্ডিত কাপড়গুলি অপর একটি
বালিশের ওপর রেখে মহারাজের
দু-পায়ে
লাগিয়ে ছাপ তুলতে লাগলাম।
আমরা কয়েক জন সাধু-ব্রহ্মচারী
একসঙ্গে ঐ কাজ করেছিলাম,
যাতে
মহারাজের ভক্তেরা তাঁর পায়ের
ছাপ পায়।
মহারাজের পায়ের
একটি ছাপ এখনও আমার কাছে আছে।
মহারাজের জপমালা আমি গঙ্গায়
বিসর্জন দিয়েছিলাম;
পরে
অনুতাপ হয়েছিল এই ভেবে যে
সেটি রাখলে ভাল করতাম।
পরবর্তিকালে
নির্বাণানন্দজীকে বলেছিলাম,
“মহারাজ,
আমাকে
স্বামী শঙ্করানন্দজীর ব্যবহৃত
কোনাে জিনিস বা গ্রন্থ দিন।”
তিনি আমাকে মহারাজের ব্যবহৃত
কথামৃত-এর
তৃতীয় খণ্ডটি দেন;
সেটি
এখনাে আমার কাছে আছে।
Sri
Ramakrishna
|
মহারাজকে(স্বামী শঙ্করানন্দ) আমরা বরাবর গুরুগম্ভীর রূপেই
দেখেছি। তিনি ছিলেন প্রচারবিমুখ,
স্বল্পভাষী,
আদর্শ
সন্ন্যাসী। তাঁর জীবনটাই ছিল
তাঁর উপদেশ। গভীর সাধনভজনের
ফলে তাঁর স্নায়ুগুলি খুব
sensitive
হয়ে
যায়। তিনি শব্দ সহ্য করতে
পারতেন না। মঠবাড়ির উঠানে
আমগাছে কাকের বাসা ছিল এবং
দুপুরে কাকগুলাে ‘কা কা’ শব্দ
করত। তাতে মহারাজের খুব কষ্ট
হতাে। একবার এক ব্রহ্মচারী
খড়ম পায়ে শব্দ করে হাঁটছিল।
মহারাজ তাকে ডেকে বলেন,
“তুমি খড়ম জোড়া আমাকে দাও। আমি ওর তলায় টায়ার কেটে পেরেক ঠুকে দেব, তাহলে আর শব্দ হবে না।”
তাদের কাছে মহারাজের
কথা শুনতাম।
একবার এক প্রাচীন
ভক্ত তাঁর ছােট মেয়েকে নিয়ে
মহারাজকে দেখতে আসেন।
মহারাজ
তাঁর সঙ্গে রাজেন্দ্রপ্রসাদের(তদানীন্তনভারতের প্রেসিডেন্ট)
সম্বন্ধে
কথা বলছিলেন।
ঐ কথা শুনে মেয়েটি
বলে,
“বাবা, আমি রাজেন্দ্রপ্রসাদ খাব।”
মহারাজ
তখুনি ননীগােপাল মহারাজকে
ডেকে বললেন,
“ননী, একে রাজেন্দ্রপ্রসাদ দে।”
ননীগােপাল
মহারাজ তক্ষুনি দুটো বড়
সন্দেশ এনে মেয়েটিকে দেন;
এবং
মহারাজ বলেন,
“এখন রাজেন্দ্রপ্রসাদ খাও।”
স্বামী
শঙ্করানন্দ (১৮৮০-১৯৬২)
|
No comments