প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী সারদেশানন্দ (১৮৯৪-১৯৮৮) pracheen sadhu katha in bengali - Spirituality Religion

Header Ads

প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী সারদেশানন্দ (১৮৯৪-১৯৮৮) pracheen sadhu katha in bengali

প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী সারদেশানন্দ (১৮৯৪-১৯৮৮)

Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna

নাটমন্দিরের সামনে বসে তিনি জপধ্যান ও প্রার্থনা করতেন। তাঁর হাতে ছাতা ও বগলে একটা কাপড়ের পুঁটলি থাকত।
 তার ভিতর থাকত স্তবাদির বই।
 তিনি পৃথিবীর প্রায় সব প্রধান ধর্মের প্রার্থনা জোগাড় করেছিলেন। ঐ প্রার্থনাগুলি সর্বধর্মের স্বরূপ শ্রীরামকৃষ্ণের সামনে পাঠ করতেন।
 ছিয়াশি বছরের বৃদ্ধ সন্ন্যাসী তিন-চার ঘণ্টা ঠাকুরের সামনে বসতেন। মন্দির থেকে বেরিয়ে তিনি sun glass পরে যখন ঘরের দিকে যেতেন, তখন তাঁর কামনাশূন্য, নিরাড়ম্বর, বৈরাগ্যবান মূর্তি দেখে মন ভরে যেত।
 আমি একদিন ঐরূপ ঘরে ফেরার পথে তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়ে একটা ছবি তুলিয়েছিলাম—যা আমাদের St. Louis কেন্দ্রের website-এ আছে।।
একদিন আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
 “আমাদের সঙ্ঘের ভবিষ্যৎ কী দেখছেন?”
তিনি দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে বললেন, “দেখ, আমি ঈশ্বরে বিশ্বাসী।
 ঠাকুরের যা ইচ্ছা তা-ই হবে। 
আমাদের বিশ্বাস সদা টলায়মান।
 কিন্তু এসব সাধুর বিশ্বাস অটল, অনড় পর্বতের মতাে স্থির ও দৃঢ়।

১৯৮৬ সালে আমি St. Louis থেকে আবার ভারতে যাই এবং বৃন্দাবনে ১৭ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকি। সারদেশানন্দজী তখন নতুন সাধুনিবাসে থাকতেন। 
তাঁর তখন দু-জন সেবক-অনুপ ও সুকান্ত। 
মহারাজের সুখসুবিধার জন্য অধ্যক্ষ স্বামী ত্রিবিক্রমানন্দজী সদা লক্ষ্য রাখতেন এবং দেশবিদেশের যেসব ভক্ত মায়ের এই প্রিয় বৃদ্ধ শিষ্যটিকে দেখতে আসতেন, তাঁদের থাকবার ব্যবস্থা করতেন।
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna

১৮//১৯৮৬, বৃন্দাবন।
আমি মহারাজের সঙ্গে খুব freely কথা বলতাম। 
তিনি খালিগায়ে বিছানায় শুয়ে আছেন। 
আমি বললাম
মহারাজ, আপনার বুকের ছাতি দেখলে মনে হয় আপনি বিশ বছরের যুবক।” 
তিনি একটু মুচকি হাসলেন। 
জপ করতে করতে তাঁর আঙুল বেঁকে গিয়েছিল। 
আর একাসনে আসন-পিঁড়ি হয়ে দীর্ঘসময় ধরে বসার ফলে হাঁটুও সােজা হতাে না। 
অনুপকে দেখতাম মহারাজের আঙুল টেনে বারবার সােজা করছে এবং হাঁটুকে সােজা করার চেষ্টা করছে।
 তপস্যা ও কঠোরতা করা তিনি দেখিয়ে গেলেন। 
তিনি অনুপকে বলেছিলেন যে, দীর্ঘ সময় ধরে একাসনে বসে জপধ্যান করার ফলে তাঁর শরীরের এই অবস্থা।
ঐদিন আমি জিজ্ঞাসা করলাম
মহারাজ, মায়ের ভেতর special কী দেখলেন? আপনি তাে মায়ের কাছে জয়রামবাটীতে অনেক কাল ছিলেন তিনি শান্তভাবে উত্তর দিলেন, “নিরভিমানতা। মার ভেতর কোনাে অভিমান। অহঙ্কার ছিল না।”

মানুষ মাত্রেরই অহঙ্কার আছে।
 ঈশ্বরের কোনাে অহঙ্কার নেই। 
অহঙ্কার আসে অজ্ঞান থেকে।
আমি—মার পূজা সম্বন্ধে কিছু বলুন।
সারদেশানন্দজী—তিনি পূজার পর ধ্যান করতেন।
 তখন তাঁকে সমাধিতে ডুবে যেতে দেখেছি।
আমি-দীক্ষার পর মা কীরকম spiritual instruction দিতেন?
তিনি চুপ করে রইলেন।
আমি—মা দীক্ষাকালে কাকে ইষ্ট বলে নির্দেশ করতেন?
মহারাজ—আমি নিজেরটা জানি। ভগবানকেই ইষ্ট করতেন।
আমি—মা ঠাকুরের কথা কী বলেছেন?
মহারাজ চুপ করে রইলেন।

মহারাজ আমাকে বলেছিলেন যে, তিনি মায়ের স্মৃতি অতি বিশদভাবে লিখেছিলেন এবং এক বন্ধুকে পড়তে দেন।
 তারপর তিনি তপস্যা করতে যান।
 কয়েক বছর পরে ফিরে এসে সেই স্মৃতিকথার খাতা চাইলে উক্ত বন্ধুটি বলেন যে, হারিয়ে গিয়েছে। 
তিনি এটি মায়ের ইচ্ছা মনে করে আবার লিখতে শুরু করলেন—যা পরে শ্রীশ্রীমায়ের স্মৃতিকথা’ রূপে উদ্বোধন থেকে প্রকাশিত হয়।
 সত্যি বলতে কী আমরা একটা মূল্যবান বস্তু হারিয়েছি। 
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna


১৯//১৯৮৬, বৃন্দাবন।
রাত্রে ব্রহ্মচারী অনুপ আমাকে তার diary দেখায় সেটি সাধুসঙ্গ । 
স্মৃতি রত্নমালা’ নামে ১১০ ও ১১১তম বর্ষে উদ্বোধন পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়েছে স্বামী শুক্লাআনন্দের নামে (অনুপের সন্ন্যাস নাম)
 ওতে মহারাজের বহু সারগর্ভ ঘটনা ও উপদেশ আছে। অনুপের diary থেকে আমি কয়েকটা ঘটনা ও উপদেশ নিজের diary-তে লিখে রাখি।
 তার থেকে কয়েকটা এখানে উল্লেখ করছি। 
১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের পর পূর্ববঙ্গের নােয়াখালিতে হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গাকালে সারদেশানন্দজী সেখানে relief করতে যান।
 মহাত্মা গান্ধিও গিয়েছিলেন।
 গান্ধিজী মহারাজের কাছে বাংলায় কথামৃত শুনতে চান।
 তিনি প্রথম দিন গান্ধিজীর কাছে কথামৃত পড়েন।
 দ্বিতীয় দিন গেলে গান্ধিজীর সেক্রেটারি নির্মল বসু বলেন যে, তিনি আজ ব্যস্ত।
 মহারাজ ফিরে আসেন।
 পরের দিন মহারাজ কথামৃত পড়তে গেলে গান্ধিজী বলেন, স্বামীজী, আপনি কাল এলেন না?”
মহারাজ বলেন
এসেছিলাম, কিন্তু আপনার সেক্রেটারি আমাকে বলেন যে আপনি ব্যস্ত আছেন।”
 সঙ্গে সঙ্গে গান্ধিজী বলেন
স্বামীজী, এ কাজটা কি অন্য কাজ থেকে কম জরুরি ছিল?”
রাস্তায় চলবার সময় গান্ধিজী সন্ন্যাসীদের সামনে রেখে নিজে পিছনে চলতেন।
মহারাজের একটা বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করেছি—তিনি যেমন সাধুদের, তেমনি গৃহস্থদের আধ্যাত্মিক উন্নতির বিষয়ে বলতেন। 
সাধুদের চারটি বিষয় স্মরণ করিয়ে দিতেন ঃ
১। সৎ-চরিত্র গঠন-ইন্দ্রিয় ও মনের সংযম, ষড়রিপু দমন।
২। জগতের সৃষ্টিস্থিতিপ্রলয়কর্তা সর্বব্যাপী সর্বশক্তিমান পরমেশ্বরের অস্তিত্বে দৃঢ় বিশ্বাস ও জগতের কল্যাণের জন্য বর্তমান সময়ে তাঁর শ্রীরামকৃষ্ণরূপে আবির্ভাব, সঙ্ঘপ্রতিষ্ঠা ও যুগধর্ম প্রবর্তনরূপ কর্মে সুদৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন।
৩। নিত্যনিয়মিতভাবে সকাল-সন্ধ্যা ভগবৎ উপাসনা। জপধ্যান, প্রার্থনা। ইত্যাদি ক্রিয়া নিষ্ঠা সহকারে সম্পাদন করার অভ্যাস। সৎসঙ্গ, সদ্গ্রন্থাদির পাঠ। সকল কর্তব্যকর্ম সৃষ্টিকর্তা পরমেশ্বরের সাক্ষাৎ সেবাজ্ঞানে মনােযােগের সঙ্গে খুব ভালভাবে সুসম্পন্ন করা।
৪। সকলের সঙ্গে প্রীতি ভালবাসার সম্পর্ক রাখা সাধ্যমতাে অপরের কল্যাণের জন্য চেষ্টা করা। 
কারাে প্রতি বিদ্বেষ না রাখা, অনিষ্ট করা। 
আশ্রমের নিয়মশৃঙ্খলা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন ও অধ্যক্ষের প্রতি আনুগত্য ও কর্তব্যকর্ম মনােযােগের সঙ্গে শ্রীশ্রীঠাকুরের সেবাজ্ঞানে সম্পাদনই অন্তরে সুখশান্তি লাভের উপায়।
গৃহস্থ ভক্তদের করণীয় চারটি বিষয় ঃ 
  1.  নিত্য জপধ্যান 
  2.  শাস্ত্রপাঠ (কথামৃত
  3.  সংসারের সব কাজ ভগবদ্বুদ্ধিতে করা 
  4.  পরােপকার করবে, কারাের অনিষ্ট করবে না।
  5. পরােপকার উপদেশ দেওয়া, হাতেনাতে করা আকাশ পাতাল তফাৎ


No comments

Powered by Blogger.