প্রাচীন সাধুদের কথা_বিভিন্ন সাধুর স্মৃতি স্বামী অচলানন্দ
প্রাচীন সাধুদের কথা_বিভিন্ন সাধুর স্মৃতি
Swami
Shivananda
|
কাশীতে সাধুসঙ্গ ও স্বামী অচলানন্দ(১৮৭৬-১৯৪৭)
ভারতের
অধ্যাত্ম-ইতিহাসে
কাশী একটি বিশিষ্ট স্থান।
কথায় বলে— যতদিন কাশী আছে
ততদিন কেউ হিন্দুধর্ম টলাতে
পারবে না।
কাশী শব্দের অর্থ
মুক্তি।
কাশ ধাতুর অর্থ দীপ্তি।
যাতে সব প্রকাশিত হয় তা-ই
কাশী।
কাশীই জ্ঞানপুরী,
বিমুক্ত
নগরী।
বিশ্বনাথ ও অন্নপূর্ণা
কাশীর অধিষ্ঠাত্রী দেবদেবী।
প্রায় প্রত্যেক হিন্দুমনে
জাগে কাশীবাস বা একবার কাশীদর্শন।
অনেকের ধারণা কাশীতে মরলে
মুক্তি হয়।
এই বিশ্বাস নিয়ে
বহু ব্যক্তি ও সন্ন্যাসী
কাশীতে বাস করেন।
১৯৭০
সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমি
কয়েক দিন কাশীতে ছিলাম।
স্বয়ংপ্রভানন্দজী (তারাপ্রসন্ন
মহারাজ)
কাশীর
অদ্বৈত আশ্রমে থাকতেন।
আমি
জিজ্ঞাসা করলাম,
“মহারাজ, শাস্ত্র বলে—বাসনাক্ষয় ছাড়া তত্ত্বজ্ঞান হয় না, আর তত্ত্বজ্ঞান না হলে শেষজন্ম সম্ভব নয়। অথচ শাস্ত্র, ঠাকুর ও মা বলেছেন, কাশীতে ম'লে মুক্তি। তাহলে শাস্ত্ৰপড়া নিরর্থক। বেদান্তাদি শাস্ত্র গঙ্গার জলে বিসর্জন দিয়ে কাশীবাসী হওয়াই ঠিক।”
মহারাজ
তাে আমার ওপর ভয়ানক রেগে
গেলেন।
তিনি বললেন,
“আমরা বৃদ্ধেরা ঐ ভরসায় মৃত্যুর জন্য কাশীতে বাস করছি, আর তুমি ছােকরা এসে আমাদের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চাও?”
আমি
বললাম,
“না মহারাজ। আপনি প্রবীণ, শাস্ত্রজ্ঞ সাধু। আমি আপনার কাছে সত্য জানতে চাই।”
তিনি তখন শান্তভাবে
বললেন,
“তুমিও ঠিক, আমিও ঠিক—অর্থাৎ জ্ঞান ছাড়া মুক্তি হয় না, আবার কাশীতে ম'লে মুক্তি হয়।”
আমি বললাম,
“দু-জনে কী করে ঠিক হবে?”
তিনি
একটু হেসে বললেন,
“বাবা বিশ্বনাথ শেষকালে জ্ঞানটি দিয়ে দেন।”
Swami
Shivananda
|
১৯৫০
সালের পর থেকে কাশীতে রামকৃষ্ণ
সঙ্ঘের বহু প্রাচীন সাধু
রামকৃষ্ণ অদ্বৈত আশ্রমে ও
সেবাশ্রমের ১০ নম্বর ওয়ার্ডে
বাস করতেন।
এরা ছিলেন
শ্রীশ্রীমায়ের,
রাজা
মহারাজের,
মহাপুরুষ
মহারাজের ও শরৎ মহারাজের
শিষ্য।
১৯৫৯ সাল থেকে আমার
কাশীতে যাতায়াত।
বহু প্রাচীন
সাধুর সঙ্গ করেছি।
তাঁদের
কিছু কিছু স্মৃতি ডায়েরিতে
লিখে রাখতাম।
বড়ই দুর্ভাগ্যের
বিষয় যে,
খুব
কম সাধুই তাঁদের পুণ্যস্মৃতি
লিখেছেন।
আমি লক্ষ্য করতাম
কোনাে কোনাে সাধু কাশীর অদ্বৈত
আশ্রমের বারান্দায় বসে বিকালে
ঠাকুরের সন্তানদের স্মৃতিচারণ
করতেন।
স্বামী ধীরেশানন্দ
তাঁদের অনেক কথা ডায়েরিতে
লিখে রেখেছিলেন এবং ঐ ডায়েরি
আমাকে দিয়েছিলেন।
গুরুদাস
গুপ্ত ছিলেন স্বামী সারদানন্দের
শিষ্য ও কলেজের অধ্যাপক।
তিনি অবিবাহিত ছিলেন এবং ব্রহ্মচারীর
মতাে জীবনযাপন করতেন।
কর্ম
থেকে অবসর নিয়ে তিনি শেষ জীবন
কাশীতে কাটান।
তিনিও ঠাকুরের
সন্তানদের সম্বন্ধে প্রাচীন
সাধুদের কাছ থেকে যা শুনেছেন
তা বিভিন্ন ডায়েরিতে লিখে
রেখেছিলেন।
স্বামী রঘুবরানন্দ
(রামপ্রসাদ
মহারাজ)
১৯৮২
সালে কাশাতে।
আমাকে গুরুদাস
গুপ্তের সব ডায়েরি দেন।
Swami
Shivananda
|
আমি
বরাবরই নতুনের পূজারি।
নতুন
কিছু শুনতে ও জানতে আমার দারুণ
ঔৎসুক্য বা কৌতূহল।
তা আমার
মনকে refresh
করে
দেয়।
লীলাপ্রসঙ্গ ও কথামৃত
ছাড়াও ঠাকুর,
মা
ও সন্ন্যাসি-শিষ্যদের
বহু কথা ও কাহিনি নানা জায়গায়
ছড়িয়ে রয়েছে।
আমি তার অতি
সামান্য অংশ জোগাড় করতে
পেরেছি।
এসব আমার আত্মস্মৃতি
নয়—এসব সেই মহান প্রাচীন
সাধুদের পুণ্যস্মৃতি।
এঁরা
ঠাকুরের সন্তানদের কাছ থেকে
কীভাবে শিক্ষা পেয়েছেন তা
পরবর্তী প্রজন্মের জানা অবশ্য
প্রয়ােজন।
নতুবা আমরা tradition
হারিয়ে
ফেলব।
Swami
Shivananda
|
স্বামী
অচলানন্দ।
স্বামী
অচলানন্দ ছিলেন স্বামী
বিবেকানন্দের শিষ্য।
শেষ
জীবনে তিনি কাশীতেই বাস করেন।
তাঁর পূর্বাশ্রমের নাম ছিল
কেদারনাথ মৌলিক।
স্বামীজী
তাঁকে কেদারবাবা বলে ডাকতেন,
সেই
থেকে তিনি ঐ নামেই প্রসিদ্ধ।
১৯৩৮ সালে তিনি মঠ-মিশনের
Vice
President হন
এবং ১৯৪৭ সালে কাশীতে দেহত্যাগ
করেন।
তিনি স্বামী নিরঞ্জনানন্দের
ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে এসেছিলেন।
তিনি
ঠাকুরের সন্তানদের জীবনী
লেখার জন্য তথ্য সংগ্রহ শুরু
করেন।
তিনি কাশীতে কেদারবাবাকে
স্বামী নিরঞ্জনানন্দ ও স্বামীঅদ্বৈতানন্দ সম্বন্ধে তথ্য
পাঠাতে বলেন।
কেদারবাবা
১৮/১২/১৯৪৬
তারিখে নিম্নলিখিত তথ্য
পাঠান—যা অদ্বৈত আশ্রমের
archives-এ
রাখা ছিল;
আমি
তা থেকে নিজের ডায়েরিতে কপি
করে রাখি।
No comments