প্রাচীন সাধুদের কথা _বিভিন্ন সাধুর স্মৃতি - Spirituality Religion

Header Ads

প্রাচীন সাধুদের কথা _বিভিন্ন সাধুর স্মৃতি

প্রাচীন সাধুদের কথা

Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna

মহাপুরুষ মহারাজের দীক্ষিত এক ভক্ত-মহিলা এসে শুদ্ধানন্দকে জিজ্ঞাসা করলেন, “মহারাজ, কেউ সিদ্ধ মহাপুরুষের কাছ থেকে দীক্ষা পেলে, তার কি আবার নিজের কিছু সাধনা করতে হয়? না কি সেই মহাপুরুষের কৃপাতেই সিদ্ধিলাভ হয়?” মহারাজ ঐ মহিলাকে খাওয়ার পরে আসতে বললেন। প্রভু মহারাজ ও পরেশ মহারাজ পাশের ঘরে ছিলেন। তিনি আমাকে প্রভু মহারাজকে ডাকতে বললেন। তিনি এলে মহারাজ জানালেন, “দেখ প্রভু, তােমরা আমাকে প্রেসিডেন্ট বানিয়েছ। এখন লােক এসে আমাকে এরূপ প্রশ্ন করে। আমি এখন কী উত্তর দেব?” তাতে প্রভু মহারাজ বললেন, মহাপুরুষের বইতে এরূপ কথা আছে—যাকে জাত সাপে কাটে তাকে গর্তে গেলেও মরতে হবে।” মহারাজ বললেন, “আমি যা জানি না, তা বলতে পারব না। তােমরা ঐ ভক্তকে বলাে।”

সেবকরা কর্মে বা পড়াশােনায় ভুল করলে বলতেন, “তােমাদের দিয়ে আমি ঘর মােছা, কাপড় কাচা, বাথরুম পরিষ্কার করা প্রভৃতি কাজ করাচ্ছি। প্রতিটি কাজ যদি তােমরা ভালভাবে করতে না পার তবে আমি মরে গিয়েও তােমাদের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাব না। লােকে বলবে এ লােকগুলাে কোনাে মেথরের সঙ্গে ছিল।”
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna

একদিন কথামৃত পড়ছি মহারাজের কাছে। ঠাকুর বলছেন, “নিখাদ কর মা।” মহারাজ জিজ্ঞাসা করলেন, “নিখাদ মানে কী?” আমি চুপ করে রইলাম। আবার জিজ্ঞাসা করলেন, “খাদ মানে কী?” আমি বললাম, “গর্ত।” তিনি সারাদিন গুম হয়ে রইলেন। রাতে নির্মল মহারাজ এলে complain করলেন, “না বুঝলে এরা জিজ্ঞাসাও করে না। কথামৃত পড়ে মানে বােঝে , আবার সাধু হতে এসেছে! কী যে করি?”
নির্মল মহারাজ—তা মহারাজ, সব কথা নাই-বা জানলে।
স্বামী শুদ্ধানন্দ—সেকী? শেষে কি এদের জন্য আমায় কথা শুনতে হবে? লােকে বলবে—এরা কোনাে মূর্খ মেথরের কাছে ছিল। আমি মরে গেলেও এদের জন্য গাল শুনতে হবে।
নির্মল মহারাজ ছিলেন প্রতিদিনের last visitor. তিনি রাতে এসে মঠমিশনের সব সংবাদ তাঁকে জানাতেন।

স্বামী শুদ্ধানন্দের কাছে দিনরাত কথামৃত পাঠ চলত। কেউ উপদেশ চাইতে এলে বলতেন—কথামৃত শশানাে। ঠাকুর সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তাঁর উপদেশে যদি কাজ না হয়, আমার উপদেশেও কাজ হবে না। যে যত সময় পারত বসে শুনত, শেষে চলে যেত।
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna

স্বামী নিখিলানন্দ আমেরিকা থেকে এসে একদিন স্বামী শুদ্ধানন্দকে ললেন, “মহারাজ, আমেরিকাতে লােকে স্বামীজীর প্রতি কতই না শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে। তাঁর কথায় মুগ্ধ হয়।”
স্বামী শুদ্ধানন্দ-কী বললে? জান তাে, স্বামীজী বিদ্যাসাগরের স্কল থেকে বিতাড়িত হলেন। নিখিলানন্দ-স্বামীজীর কাজ তাে আর গরু খেদানাে (স্কুলমাস্টারি করা নয়, তাই বিতাড়িত হলেন।)
মহারাজ শুনে চুপ করে রইলেন।
কোনাে দর্শনার্থী এলে প্রথমে তার নাম, ঠিকানা, কার শিষ্য, অথবা মঠের কোনাে সাধুর সঙ্গে পরিচয় আছে কি না—জিজ্ঞাসা করতে হতাে। তাঁদের মধ্যে যাঁকে তিনি ডাকতে বলতেন, তাঁকেই প্রথম ডাকতে হতাে। ঐ ব্যক্তি প্রণাম করলে বলে দিতে হতাে অমুকবাবু প্রণাম করছেন। কারণ, ঐকালে তিনি স্পষ্ট দেখতে পেতেন না।

একদিন এক ভদ্রলােক স্ত্রী, পুত্র, কন্যাসহ মহারাজকে প্রণাম করলে সেবক মহাবিদ্যানন্দ বলেন—ইনি অমুক মহারাজের শিষ্য। অথচ তাঁর গুরু ছিলেন অপর একজন মহারাজ। স্বামী শুদ্ধানন্দ ঐ ভক্তের সামনে সেবককে কঠিন ভাষায় ভৎসনা করে বললেন, “তুমি এর গুরু পালটে দিলে।” সকলে অবাক হয়ে গেলেন। তিনি সেবকদের ত্রুটি সহ্য করতে পারতেন না। ভাবতাম—এঁরা যদি জুতাপেটা করেন তবুও এঁদের সঙ্গ ছাড়ব না। এরা পকত কল্যাণকামী। এরা গাল দেন আমাদের মঙ্গলের জন্য।
Sri Sarada Devi

Sri Sarada Devi



শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি তখন মন্ত্রী। আমেরিকা যাওয়ার আগে তিনি শুদ্ধানন্দ। মহারাজের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। মহারাজ তাঁকে ফিরে এসে আবার দেখা করতে বলেন। শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি ফিরে এসে বেলুড় মঠে মহারাজকে দর্শন করতে আসেন। মহারাজ জিজ্ঞাসা করেন, “কী দেখলে?” শ্যামাপ্রসাদ বলেন, “আমি একদিন চিকাগােতে পার্কে বেড়াচ্ছি, সেখানে এক বৃদ্ধ আমেরিকানের সঙ্গে দেখা হয়। আমি কলকাতা থেকে আসছি শুনে তিনি বলেন, স্বামী বিবেকানন্দ এই পার্কে বেড়াতেন। ”
মৃত্যুর পূর্বে প্রায় তিন দিন তিন রাত্রি আচ্ছন্ন (coma) অবস্থায় ছিলেন। মৃত্যুর পূর্বাত্রে চোখ খুলে ‘জয় মা, জয় ঠাকুর, জয় স্বামীজী’ বলে তিন তিন বার প্রণাম করলেন। তারপর চোখ বুজে আর কোনাে কথা বললেন না। পরদিন সকালে ৮/৯টা নাগাদ শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। মৃত্যুর পর তাঁর মুখশ্রী অপূর্ব শােভা ধারণ করেছিল।

No comments

Powered by Blogger.