প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী বােধাত্মানন্দ(ভব মহারাজ)(১৯০০-১৯৭৪), pracheen sadhu katha in bengali
প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী বােধাত্মানন্দ(ভব মহারাজ)(১৯০০-১৯৭৪), pracheen sadhu katha in bengali
ভব
মহারাজ ছিলেন সাধুদের সাধু।
কী করে সাধুজীবন গড়তে হয়
তা । তিনি সর্বদা মনে করিয়ে
দিতেন। একদিন ঠাট্টার ছলে
বললেন,
“দেখ, সাধু তিন রকম—তেলেভাজা,
ঘিয়েভাজা,
আর
ঘিয়ে ভেজে চিনির রসে ডােবানাে।
তেলেভাজা সাধুর বহির্মুখী
বৃত্তি। ভাল খাওয়া,
ভাল
পােশাক,
comfort খুঁজে
বেড়ায়। ঘিয়েভাজা সাধু
অন্তর্মুখ—শাস্ত্রপাঠ ও
ধ্যানজপ নিয়ে থাকে। এরা
ত্যাগী ও বৈরাগ্যবান। আর ঘিয়ে
ভেজে চিনির রসে ডােবানাে সাধু
হচ্ছে শাস্ত্রজ্ঞ ও সাধক।
এঁরা নিজেদেরকে বৈরাগ্যে
ভেজে ভক্তিরসে ডুবে থাকেন।
এঁরাই জ্ঞানমিশ্রা ভক্তির
প্রভাবে আনন্দে মশগুল হয়ে
থাকেন,
আর
সবাইকে আনন্দ দেন। দেখ,
এই
তিন গ্রুপের মধ্যে কোন্ গ্রুপে
তুমি ঢুকতে চাও।”
তারপর
তিনি শ্রীম-র
কাছে বেলুড় মঠের সাধু সম্বন্ধে
যা শুনেছিলেন তা বলেন,
“শ্রীম
বলতেন,
“মঠের
সন্ন্যাসীরা গেরােবাজ পায়রার
ন্যায়। তারা অনেক ওপরে উড়ে
অন্য পায়রাদের আকর্ষণ করে
নিজেদের দলে আনে।” রামকৃষ্ণ
মিশনের সাধুরা সমাজে সম্মান
পান,
লােকে
আস্থা রাখে তার কারণ শ্রীরামকৃষ্ণ ঠাকুরই অগ্নি। তাঁর তেজে
তেজীয়ান হয়ে আমরা হাঁড়িতে
আলু-পটলের
মতাে লাফাচ্ছি। খ্রিস্টোফার
ইশারউড লিখেছেন ও The
Ramakrishna Movement is unique because its Founder was unique. স্বামী
শঙ্করানন্দজী একবার জনৈক
সাধুশিষ্যকে বলেন,
“দেখ,
ঠাকুরের
ভক্ত হও। ঠাকুরের ভক্তের ভক্ত
হােয়াে না।” ভব মহারাজ আমাদের
সবসময় স্মরণ করিয়ে
দিতেন—কামকাঞ্চনত্যাগী
ঠাকুরের আদর্শ দৃঢ়ভাবে ধরে
রাখতে।
Sri
Ramakrishna
একদিন
আমি জিজ্ঞাসা করেছিলাম,
“মহারাজ,
ঠাকুরকে
কীভাবে ধরা যায়?”
এর
উত্তরে তিনি শ্রীম-র
কাছে যে কাহিনিটি শুনেছিলেন
তা বললেন,
“সদ্য
বিবাহিত মেয়ে শ্বশুরবাড়ি
যেতে চায় না,
কারণ
সেখানে সবাই অপরিচিত এবং স্থান
অজ্ঞাত। ১৮/২০
বছর মা-বাপের
কাছে কাটিয়েছে। প্রথম দর্শনেই
কি আর নতুন বউ-এর
পতির জন্য টান হয়?
সে
যেতেই চায় না,
কত
ওজর,
কত
কান্নাকাটি। মাকে জড়িয়ে
ধরে কাঁদে,
আর
মা বুঝিয়ে বলেন,
‘ওই
তাের বর,
ওই
তাের ঘর। ওখানেই তােকে সারাজীবন
থাকতে হবে। ওর ঘর করতে হবে।
সে বাপকে ধরে কাঁদে,
বাপ
বুঝিয়ে বলেন,
স্বামীকে
নিয়েই তাে তাের বিবাহিত জীবন
কাটবে। কোনাে মেয়ে কি সারাজীবন
বাপের বাড়িতে থাকে?
তুই
আসবি আর আমরাও তােকে দেখতে
যাব। “তারপর
তাে মেয়ে শ্বশুরবাড়ি চলে
গেল। দু-একটা
ছেলেমেয়ে হলাে। অনেক দিন
বাপের বাড়ি যাওয়া হয়নি।
বাপ চিঠি লেখেনঃ ‘তাের মা
দেখতে চায়। একবার দেখে যা।
অনেক দিন আসিসনি। মেয়ে উত্তর
লেখে ?
‘এখন
কী করে যাই?
আমার
মেয়ের অসুখ,
সামনে
ছেলের পরীক্ষা,
তাছাড়া
তােমার জামাইকে কে অফিসে
যাওয়ার আগে রান্না করে দেবে?
এরকম
বহু অজুহাত দিয়ে চিঠি লেখে।
যে-মেয়ে
স্বামীর সঙ্গে যেতেই চাইছিল
না,
সে
এখন তাকে ছেড়ে যেতে চায় না।
ঠিক তেমনি ভগবানের সঙ্গে ‘ওই
তাের বর,
ওই
তাের ঘর’ সম্বন্ধ পাতালে আর
সংসারে পিছুটান হয় না।”
ভব
মহারাজ শ্ৰীম-র
কাছে আরেকটি কাহিনি শুনেছিলেন,
তা
আমাকে বলেছিলেন,
“মাস্টারমহাশয়ের
কাছে প্রতিদিন অনেক ভক্ত
সৎসঙ্গ করতে আসতেন। একদিন
একজন এসে বলল,
‘সংসারে
বড় জ্বালাযন্ত্রণা। শ্রীম
চোখ পাকিয়ে seriously
শুনলেন।
তারপর উপস্থিত সবাইকে একে
একে বলতে লাগলেন,
“আপনি
শুনলেন—ইনি বলছেন,
সংসারে
বড় জ্বালাযন্ত্রণা।
তিনি
যেন ঐ-বিষয়টা
সবাইকে দিয়ে verify
করিয়ে
নিচ্ছেন। তারপর স্ত্রী! নিজেই
বলতে শুরু করলেন,
দেখুন,
সারারাত
বােতলের পর বােতল মদ খেয়েছেন,
নেশা
হবে না?
পা
টলবে না?
মদ
খেলে নেশা না হয়ে যায়?
সংসার-মদে
নেশা করেছেন,
জ্বালাযন্ত্রণা
হবে না?
"
Sri
Ramakrishna
২৭/৪/১৯৬১
তারিখে বেলুড় মঠে ভব মহারাজ
ব্রহ্মচারীর শিখা,
সূত্র
ও মুক্তকচ্ছের রূপক ব্যাখ্যা
করেন ঃ
- শিখা—অগ্নিশিখা। কী অগ্নি? জ্ঞানাগ্নি। তা মস্তকের ওপর অবস্থিত। এর অর্থ ব্রহ্মচারীদের চিন্তা সদা উচ্চমুখী অর্থাৎ ভগবন্মুখী হবে।
- সূত্র-যজ্ঞসূত্র বা পৈতা। সূত্র অর্থাৎ খেই খুঁজে পাওয়া। কিসের খেই? যজ্ঞের। কী যজ্ঞ? কর্মযজ্ঞ। অর্থাৎ আমরা ঈশ্বরীয় কর্ম করবার বা ঈশ্বরপ্রাপ্তির সূত্র বা খেই খুঁজে পেয়েছি।
- কচ্ছ—কাছা। মুক্তকচ্ছ
মানে বন্ধনহীন। বৈদিক
ক্রিয়াকাণ্ডে ত্রিকচ্ছ
(কাছা,
পৈতা
ও উত্তরীয়)
ছাড়া
অনুষ্ঠান চলে না।
Sri
Ramakrishna
No comments