প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী বােধাত্মানন্দ(ভব মহারাজ)
স্বামী বােধাত্মানন্দ(ভব মহারাজ)(১৯০০-১৯৭৪)
Sri
Ramakrishna
|
২৯/৫/৬০,
বেলুড়
মঠ
“মহাপুরুষ
মহারাজ দেওঘরে আশ্রমের এক
রাঁধুনি বামুন ও এক কর্মচারীকে
দীক্ষা দেন।
তারপর রাতে হাঁপানির
টানে তাঁর প্রাণ যায় যায়
অবস্থা।
তার পরদিন সকালে
সাধুরা তাঁকে প্রণাম করতে
গেলে মহাপুরুষজী বলেন,
ব্যথাটা
যখন খুব বেড়েছিল তখন মনটাকে
এটাতে একাগ্র করেছিলাম।
তাতে
কষ্টবােধটা চলে গিয়েছিল।
জনৈক সাধু প্রশ্ন করেন,
ওটা
কী,
মহারাজ?'
তিনি
উত্তরে বলেন,
‘ঐ
তাে আত্মা।
“একদিন সকালে মহাপুরুষজী আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, কীভাবে কাজ করতে হয় বল দিকি? আমি একটু চিন্তা করে বললাম, ‘Privilege(সৌভাগ্য) মনে করে। তিনিও তৎক্ষণাৎ বলতে লাগলেন, “That's that's it. Privilege-privilege.'”
ভব
মহারাজ এমনভাবে বললেন যে,
আমার
মনে গেঁথে গেল সত্যি।
- ঠাকুর,
- মা ও
- স্বামীজীর
কাজ করবার সুযােগ
ও সৌভাগ্য ক-জনের
হয়?
Sri
Ramakrishna
|
১২/৬/১৯৬০,
বেলুড়
মঠ।
ভব
মহারাজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে
বললেন,
“দেখ,
আজ
দু-তিন
দিন ধরে একটা জিনিস ভাবছি।
Man
lives on past-generally on his undesirable past. মানুষকে
সাধারণত বেঁচে থাকতে হয় তার
অতীতের পরিবেষ্টনীর মধ্যে।
সে জাবর কাটে অতীতের ঘটনা
নিয়ে ভুলত্রুটি নিয়ে।
“এই
যে মা-বাপ,
ভাই-বােন—এরা
সব মানুষের কাছে কত আদরের
প্রিয়জন।
আমরা পুনর্জন্মবাদে
বিশ্বাসী।
আমরা ইতিপূর্বে
কতবার মা-বাপ,
ভাই-বােনের
মধ্য দিয়ে কাটিয়ে এসেছি।
এরা কেউ আমার সঙ্গে আসেনি,
যাবেও
না।
জীব সাধারণত যেখানে তার
সংস্কার ও বাসনার পূরণ হবে,
সেরূপ
মা-বাপের
কাছে জন্মগ্রহণ করে।
“আমাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ঈশ্বরদর্শন। আমরা যখনই আমাদের সেই প্রমময় পূর্বস্মৃতি ও মা-বাপের কথা ভাবতে থাকি, তখনই ঈশ্বরচিন্তার ৮ ঘটতে থাকে।”
ঐকালে
তিনি আমাকে বলেছিলেন,
“ঠাকুরকে আপনার করে নাও। দুই নৌকায় পা দিয়াে না। যেসব সাধু আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যােগ রাখে, তারা অধ্যাত্মপথে বেশি এগােতে পারে না।”
এই
প্রসঙ্গে তিনি আমাকে একটা
গল্প বলেছিলেন,
“দুটি পুকুর কাটা হলাে—একটা গঙ্গার ধারে আরেকটা দূরে। উভয়েরই একই গভীরতা। গ্রীষ্মে পুকুর দুটির জল শুকিয়ে গেল। দূরের পুকুরটির মাটি রােদের তাপে ফেটে চৌচির, আর গঙ্গার ধারের পুকুরটির মাটি নরম কাদা। দূরের পুকুরটির উদাহরণ বৈরাগ্যবান সাধু আর অপরটি আসক্তিপূর্ণ সাধু।”
Sri
Ramakrishna
|
“একবার হৃষীকেশে তপস্যা করছি। একদিন মন থেকে জগৎ-সং" vanish হয়ে গেল। আমি বুঝতে পারলাম মায়া কী। একটা পাথরের ওপর গঙ্গার ধারে ধ্যান করছিলাম। আমি আনন্দে ঐ পাথরের চারিদিকে ঘুরে তাতে মাথা ঠুকতে লাগলাম। এ জগৎ যে মায়াময়, হাড়ে হাড়ে বুঝলাম।”
ভব
মহারাজ আলমােড়ায় থাকাকালে
ব্রহ্মচারী রাম মহারাজের কাছ
থেকে স্বামীজীর এই স্মৃতি
শুনেছিলেন ঃ “একদিন বেলুড়
মঠে গিয়েছি।
স্বামীজী তাঁর
ছাগল মটরুর দুধ দুইবেন।
তার
পালানটি (udder)
খুব
নিচু থাকার দরুন খুব অসুবিধা
হচ্ছিল।
তিনি আমাকে বললেন,
এই
ক্যাবলা,
দাঁড়িয়ে
কী দেখছিস?
এই
ছাগলটার পেছনের পা-দুটো
একটু উঁচু করে ধর।
আমি তা-ই
করলাম,
দুধ
দুইছেন—ঠিক যেমন লােকে পাম্প
করে।
মটরুকে দোয়ার পর স্বামীজী
বললেন,
“কিরে,
তােকে
ক্যাবলা বললাম বলে কিছু মনে
করলি না কি?
কিছু
মনে করিস না।
ও তাে একটা নাম
মাত্র।
দেখ,
এ-জগতে
নাম-রূপ
সব মিথ্যা।
ব্রহ্মই একমাত্র
সত্য বস্তু। ”
Sri
Ramakrishna
|
তাঁর পাশের
ঘরে স্বামী জগদানন্দজী থাকতেন।
সন্ধ্যাকালে তিনি কয়েক জন
সাধুকে শাস্ত্র পড়াতেন।
এতে
ভব মহারাজের ধ্যানজপের অসুবিধা
হতে লাগল।
তিনি একদিন জগদানন্দজীকে
সে-কথা
বলায়,
তিনি
সঙ্গে সঙ্গে বলেন,
“এতদিন বলনি কেন? আমি সাধু হয়ে সাধুর ধ্যানজপে বিঘ্ন করব! এ কি কখনাে হয়? তুমি ভাই ধ্যানজপ করাে। আমি অন্যত্র ওদের ক্লাস নেব।”
এসব মহান
সাধুর আচরণ আমাদের অনুকরণীয়।
১৯৬৪
সালে বেলুড় মঠে একদিন শরৎ
মহারাজের কথাপ্রসঙ্গে স্বামী
বােধাত্মানন্দ আমাকে তাঁর
এই স্মৃতিটুকু বলেন,
“একবার
একটি জরুরি চিঠি নিয়ে আমি
বেলুড় মঠ থেকে উদ্বোধনে
গেলাম।
শরৎ মহারাজ তখন তাঁর
ছােট ঘরটিতে বসে তামাক খাচ্ছিলেন।
আমি বললাম,
মহারাজ,
এই
জরুরি চিঠিটা মঠ অফিস থেকে
আপনার জন্য এনেছি।
তিনি তৎক্ষণাৎ
গড়গড়ার নলটি পাশে রাখলেন।
তারপর চশমা পরে কাঁচি দিয়ে
খামটা কেটে চিঠিটা পড়লেন।
আবার কাঁচিটি তার জায়গায়
রেখে,
চিঠিটি
খামের ভিতর ঢুকিয়ে ডানদিকে
ডেস্কের ওপর রাখলেন;
পরে
নলটি ধরে তামাক খেতে শুরু
করলেন।
তাঁর এই আচরণ দেখে আমার
মনে হলাে,
তাঁর
মন সদা ভগবানে নিবিষ্ট।
ঠাকুরের
কাজ করবার জন্য নিচে নামিয়ে
আনেন,
আবার
কাজ শেষ হলে ঈশ্বরের সান্নিধ্যে
মশগুল হয়ে থাকেন।”
স্বামী বােধাত্মানন্দ(ভব মহারাজ) |
No comments