প্রাচীন সাধুদের কথা_বিভিন্ন সাধুর স্মৃতি, স্বামী মিত্রানন্দ
Sri
Ramakrishna
|
বিভিন্ন
সাধুর স্মৃতি।
শ্রীরামকৃষ্ণ
বলতেন—যতদিন বাঁচি ততদিন
শিখি।
স্বামীজী বলতেন—My
religion is to learn. যে
বলে আমার শেখার কিছু নেই সে
মৃত।
স্বামীজী ক্রমাগত শিখতেন,
তাই
তাঁর বক্তৃতাগুলিতে নতুনত্ব
থাকত এবং fresh
বােধ
হতাে।
অবধূতের মাত্র চব্বিশ
গুরু ছিল,
আমি
কিন্তু তার চাইতেও অনেক বেশি
শিক্ষাগুরু-বৃদ্ধ
ও নবীন সাধুদের কাছ থেকে
সাধুজীবন সম্বন্ধে শিখেছি
এবং এখনাে শিখছি।
আমার ছাত্রসুলভ
মনােবৃত্তি আমাকে তারুণ্যের
আস্বাদ পাইয়ে দিয়েছে।
১৯৮২
সালে কাশীতে স্বামী পরানন্দ
আমাকে বলেন,
“দেখ,
আমি
সেবাশ্রম থেকে রােজ বিশ্বনাথ
দর্শন করতে যাই। প্রতিদিন
শিবমহিমঃ স্তোত্র থেকে একটা
শ্লোক কাগজে লিখে নিয়ে আওড়াতে
আওড়াতে পথ দিয়ে চলি।
ক্রমে
শ্লোকটি মুখস্থ হয়ে যায় ও
অর্থের ধারণা হয়।
এটিই হলাে
আমার বিশ্বনাথ দর্শনের
প্রস্তুতি।
এভাবে আমার ৪১টি
শ্লোক মুখস্থ হয়ে গিয়েছে।”
Sri
Ramakrishna
|
সাধুরা
কীভাবে সময়ের সদ্ব্যবহার
করেন তা শিখলাম।
আরেক
জন সাধু দেখলাম দিনরাত শাস্ত্র
নিয়ে আছেন।
৩৯ বছর পূজা করে,
এখন
retired
হয়ে
কাশী অদ্বৈত আশ্রমে থাকেন।
রােজ আড়াই মাইল হেঁটে এই
সন্ন্যাসী ,কলেজে
ন্যায় ও মীমাংসা পড়তে যান।
আমাকে মধুসূদন সরস্বতীর
অদ্বৈতসিদ্ধির মঙ্গলাচরণ ও
ব্রহ্মসূত্র-এর
‘অথাতাে
ব্ৰহ্মজিজ্ঞাসা’
এক ঘণ্টা ধরে বলে গেলেন। অদ্বৈত
আশ্রমে থাকার সময়,
আমি
এই মহারাজের জন্য শাস্ত্রগ্রন্থ
কিনতাম।
আমি
জিজ্ঞাসা করলাম,
“আপনার
কীভাবে সময় কাটে?”
তিনি
বললেন,
“আহার,
ধ্যানজপ,
শাস্ত্র
অধ্যয়ন ও বিচার নিয়ে আছি।”
আরেক
জন সাধু স্বামী বিশুদ্ধানন্দের
এই কথাটি আমাকে বলেছিলেন,
“দেখ,
যেসব
সাধু আশ্রমে কোনাে কাজ করে
না আর কেবল বসে বসে ঠাকুরের
অন্ন খায়,
তারা
কামে ভােগে।”
Sri
Ramakrishna
|
স্বামী মিত্রানন্দ
স্বামী
মিত্রানন্দ বেলুড় মঠের মিশন
অফিসে আইন বিভাগে কাজ করতেন।
কর্মোপলক্ষ্যে তিনি কখনাে
কখনাে কলকাতায় আসতেন এবং
অদ্বৈত আশ্রমে দুপুরে খেতেন।
অদ্বৈত আশ্রম তখন ছিল ৪ ওয়েলিংটন
লেনে। ১৯৬০ সালে। তিনি আমাকে
একটা সুন্দর উপদেশ দিয়েছিলেন
লিও টলস্টয়ের একটা গল্পের
মাধ্যমে।
রাশিয়ার
এক কৃষকের দুটি বলদ ছিল,
যাদের
দিয়ে সে চাষ করত। একটি বলদ
ছিল বড় বেয়াড়া ও দুষ্ট।
লাঙল চাষকালে কাঁধে জোয়াল
দিলে সে শুয়ে পড়ত। শেষে
বিরক্ত হয়ে কৃষক ঐ বলদটিকে
কসাইয়ের কাছে বিক্রি করে
দিল। আর কসাই তাকে জবাই দিয়ে
মাংস বিক্রি করে দিল। অপর
বলদটি বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত
প্রভুর লাঙল টেনে তার চাষে
সাহায্য করল। শেষে বলদটি যখন
আর লাঙল টানতে পারল না,
তখন
কৃষকটি ভাবল—এ বলদ সারাজীবন
আমার কাজ করেছে। একে আমি
কসাইয়ের কাছে বিক্রি করব
না। যে ক-দিন
এ বেঁচে থাকে আমার খামারে
থাকুক। আমি একে খেতে দেব। দেখ,
এ
কৃষকটি কেমন কৃতজ্ঞ। ঐ বৃদ্ধ
বলদকে সে শেষদিন পর্যন্ত দেখল
ও পালন করল। তেমনি শ্রীরামকৃষ্ণ
অকৃতজ্ঞ নন। আমরা যদি মনেপ্রাণে
এই শরীর দিয়ে ঠাকুরের কাজ
করি তিনি অবশ্যই আমাদের দেখবেন।
বৃদ্ধ বয়সে কে দেখবে,
কী
হবে—ওসব নিয়ে কখনাে চিন্তা
কোরাে না। মহারাজের এই গল্পটি
আমার মনে চিরতরে গেঁথে গিয়েছে।
এজন্য বলে— সাধুরও সাধুসঙ্গ
দরকার।
Sri
Sarada Devi
|
স্বামী
সূক্ষ্মানন্দের কাছে শ্রুত
৬/১১/১৯৮২,
বেলুড়
মঠ,
সকাল
৯.৩০টা
নরেন
মহারাজ (স্বামী
সূক্ষ্মানন্দ)
ঠাকুর,
মা
ও ঠাকুরের শিষ্যদের বিষয়ে
নানা কথা বলেন।
তাঁর শিষ্যেরা কেউ সাধারণ
ব্যক্তি নন। ঠাকুর তাঁর কাজের
জন্য বিভিন্ন দেবদেবী,
পূর্ববর্তী
অবতারদের পার্ষদ নিয়ে
শিষ্যমণ্ডলী গঠন করলেন।
- স্বামীজী ছিলেন সপ্তর্ষির ঋষি, নররূপী নারায়ণ ও শিবের অংশ।
- মহারাজ ছিলেন কৃষ্ণসখা ব্রজের রাখাল।
- প্রেমানন্দ রাধার অংশে,
- নিরঞ্জনানন্দ রামের অংশে,
- পূর্ণ বিষ্ণুর অংশে জন্মগ্রহণ করেন।
- যােগানন্দ পূর্বজন্মে অর্জুন,
- বিজ্ঞানানন্দ জাম্বুবান,
- লাটু মহারাজ হনুমান ছিলেন।
- শিবানন্দের শিবের অংশে জন্ম,
- তবে তিনি একবার বলেছিলেন,
- “হয়তাে আর জন্মে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ছিলাম।”
- রামকৃষ্ণানন্দ ও সারদানন্দ খ্রিস্টের পার্ষদ ছিলেন।
- শ্ৰীম ও বলরাম চৈতন্যের পার্ষদ ছিলেন আর
- গিরিশ ভৈরবের অবতার।
- অখণ্ডানন্দ বলতেন, “আমি মা-যশােদা।”
- ভক্ত-মহিলাদের মধ্যে গােপালের মা ছিলেন কৃষ্ণ অবতারে ব্রজের ফলওয়ালি;
- যােগীন-মা কৃপাসিন্ধা গােপী ও জয়া;
- গােলাপ-মা বিজয়া;
- নিস্তারিণী দেবী—ছিন্নমস্তার অংশ ও
- রাসমণি অষ্টসখীর এক সখী।
- লক্ষ্মীদিদি ছিলেন মা-শীতলার অবতার।
এ
যুগের অবতার ঠাকুর লীলা করবার
জন্য এসব চিহ্নিত ব্যক্তিদের
সঙ্গে নিয়ে এলেন।
এরা কেউ
আমাদের মতাে সাধারণ মানুষ
নন।
Swami
Vivekananda
|
দেখ,
ঠাকুরের
অনন্তভাব শিষ্যদের মধ্যে
বিভিন্নভাবে রূপ পেয়েছে।
স্বামীজী ছিলেন দারুণ শক্তিমান
পুরুষ। তিনি ঠাকুরের অনন্তভাবরাশি
সারা পৃথিবীতে ছড়ালেন কৃষকদের
বীজ ছড়ানাের মতাে। বলেছিলেন—এ
ভাবধারা ১৫০০ বছর চলবে।
রাজা
মহারাজ ছিলেন ভাবজগতের উৎস।
একদিন তিনি ঠাকুরকে জিজ্ঞাসা
করেন,
“কেউ
সত্ত্ব,
কেউ
তমঃ—আপনি কী করে বুঝতে পারেন?”
ঠাকৰ
বললেন,
‘আয়নাতে
মুখ দেখার মতাে আমি অপরের মনের
সবকিছু দেখতে পাই।” “আমাকে
শিখিয়ে দিন।” ‘মায়ের ইচ্ছা।”
তারপর অপরের ভিতর জানবার শক্তি
এল মহারাজের মধ্যে। তিনি দেখতে
লাগলেন অপরের মনের ময়লা-garbage.
তারপর
তিনি বুঝলেন—আমি তাে কেবল
মানুষের ভিতরের নােংরা দেখি।
এর ফলে ঐসব সংস্কার আমার ভিতর
এসে যাবে। তিনি তখন ঠাকুরকে
ঐ শক্তি ফিরিয়ে দেন।
BANERSHAR
SHIVA LINGA
|
যেদিন কলকাতায়
যেতে না হতাে বা ভক্তেরা
দক্ষিণেশ্বরে না আসত,
ঠাকুর
সেদিন অধিকাংশ সময় সমাধিতে
বেহুঁশ হয়ে থাকতেন।
স্বামী প্রেমানন্দ বলেছিলেন,
“স্বামীজী
ঠাকুরের সঙ্গে খুব তর্ক করতেন।
তাতে ঠাকুর স্বামীজীকে বলেন,
“দেখ,
তুই
জহুরি হয়ে এরকম কথা বলিস?
একটা
গল্প শােন। এক ধনি-ব্যক্তি
হিরে বিক্রি করতে চায়। এক
জহুরি হিরেটা দেখে বুঝল সেটি
খুব দামি। সে মালিককে ২ লক্ষ
টাকা দিতে চাইল। এমনসময় আরেক
জহুরি সেখানে হাজির হলাে।
তাকে দেখে প্রথম জহুরি হিরেটা
নিজের জুতার ভেতর লুকিয়ে
রাখল। তারপর অপর জহুরি চলে
গেলে হিরেটা জুতাের ভেতর থেকে
তুলে দেখে যে সেটি ফেটে চুরমার
হয়ে গিয়েছে। কী হলাে?
হিরে
বলল—আমি অভিমানে ফেটে গিয়েছি।
অর্থাৎ,
আমি
মানুষের মাথায় থাকি,
আর
তুমি আমায় জুতার ভেতর রাখলে?
তাই
ঠাকুর বললেন,
‘তাের
মতাে অধিকারী যদি আমাকে না
বােঝে,
আমি
হিরের মতাে ফেটে যাব।”
No comments