স্বামী বােধাত্মানন্দ(ভব মহারাজ)(১৯০০-১৯৭৪), pracheen sadhu katha in bengali - Spirituality Religion

Header Ads

স্বামী বােধাত্মানন্দ(ভব মহারাজ)(১৯০০-১৯৭৪), pracheen sadhu katha in bengali

প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী বােধাত্মানন্দ(১৯০০-১৯৭৪) 

Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna


স্বামী বােধাত্মানন্দ(ভব মহারাজ)(১৯০০-১৯৭৪)

স্বামী বােধাত্মানন্দের জন্ম ১৯০০ সালে। স্বামী শিবানন্দের কাছে দীক্ষা ১৯২৩ সালে। ১৯২৪ সালে রামকৃষ্ণ সঙ্ঘে যােগদান। মহাপুরুষজীর কাছে সন্ন্যাস ১৯২৯ সালে। ১৯৫৬ সালে বেলুড় ব্রহ্মচারী প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রথম অধ্যক্ষ। ২৮//১৯৭৪ তারিখে বেলুড় মঠে দেহত্যাগ।

স্বামী বােধাত্মানন্দজী রামকৃষ্ণ সঙ্ঘে ভব মহারাজ নামে খ্যাত ছিলেন। তিনি একজন শাস্ত্রজ্ঞ, সাধক ও প্রেমিক সন্ন্যাসী ছিলেন। তাঁর কাছে যে যেত সে-ই অনুপ্রেরণা পেত। আমি তাঁকে সাধু-ব্রহ্মচারীদের শিক্ষকরূপে দেখেছি। তাঁর মুখ থেকে ত্যাগ-বৈরাগ্যের কথা ফুলঝুরির মতাে বেরােত। শাস্ত্র ও ঠাকুরের সন্তানদের কথা বলতে তিনি কখনাে ক্লান্ত হতেন না। সাধুব্রহ্মচারীদের শিক্ষা দেওয়া বড় কঠিন ব্যাপার। ১৯৫৬ সালে বেলুড় মঠে ট্রেনিং সেন্টার শুরু হয়। কর্তৃপক্ষ বােধাত্মানন্দজীকে অধ্যক্ষ করেন এবং জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তিনি সেই কার্যে ব্রতী ছিলেন। ট্রেনিং সেন্টারের উদ্বোধনকালে সঙ্ঘাধ্যক্ষ স্বামী শঙ্করানন্দজী তাঁকে বলেন, ভব, আমরা প্রকৃত সাধু চাই। কিছু সাধু তৈরি করাে।”
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna
সত্যি বলতে কী, কেবলমাত্র নিয়ম, আইনশৃঙ্খলার দ্বারা সাধু বা মানুষ তৈরি হয় না। নবাগত শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের জীবন দেখে। তারা প্রথম দেখে চরিত্র-কামকাঞ্চনত্যাগী ও নামযশের কাঙাল কি না। তারপর পবিত্র, প্রেমিক ও পণ্ডিত কি না। তারপর তিনি যা শিক্ষা দেন, তা নিজ জীবনে পালন করেন কি না। নিরুক্ততে আচার্যের সংজ্ঞা—আচারং গ্রাহয়ত্যাচিনােত্যৰ্থা। আচরণের দ্বারা আচার্য নিরূপিত হয়। তিনি নিজে আচরণ করে শিষ্যদের দেখান, তখন শিষ্যেরা নেয়। এসব থেকে বােঝা যায় শিষ্য হওয়ার চেয়ে গুরু বা আচার্য হওয়া কঠিন।
১৯৫৯ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ভব মহারাজের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ পরিচয় ছিল এবং দু-বছর (১৯৬৪-১৯৬৬) তাঁর কাছে ট্রেনিং সেন্টারে শিক্ষালাভ করেছি। আমি join করবার আগে থেকে কলকাতার অদ্বৈত আশ্রমে থাকতাম ও proof reading করতাম। রবিবার বিধান মহারাজ, দিব্যাংশু মহারাজ প্রমুখের সঙ্গে বেলুড় মঠে যেতাম। আমার ডায়েরিতে লেখা আছে ভব মহারাজের সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ ১ বৈশাখ ১৩৬৬।
ভব মহারাজ—আমার এক বন্ধু বেলুড় মঠে আমাকে নিয়ে আসে এক প্রকৃত সাধু দর্শন করাতে। দেখলাম শ্রীরামকৃষ্ণের মানসপুত্র স্বামী ব্রহ্মানন্দকে। তারপর ঠাকুরের পবিত্র ত্যাগি-সন্তানদের সঙ্গ করলাম। মহাপুরুষ মহারাজ একদিন আমাকে পাঠালেন মাস্টার মহাশয়ের কাছে। গেলাম দেখা করতে সােজাসুজি তাঁকেই জিজ্ঞাসা করে ফেললাম, ‘মাস্টারমহাশয়ের সঙ্গে দেখা করতে চাই। তিনি শান্তভাবে মাথা নেড়ে বললেন, ‘হবে, হবে, দেখা হবে। তারপর বললেন, ‘Sadhu is at his best when he meditates and becomes one with God.' লােকে সাধুদের সমালােচনা করে মােটরে চাপলে বা একটা ভাল জিনিস খেলে। মাস্টারমহাশয়ের কথা থেকে বুঝলাম কী করে সাধু দেখতে হয়।
প্রশ্ন-মহারাজ, গভীর ধ্যানে মগ্ন হওয়া যায় কী করে?
ভব মহারাজ (মঠের এক প্রাচীন সাধুকে দেখিয়ে)—ঐ যে দেখছ প্রাচীন সাধুটি, উনি ৪০ বছর চেষ্টা করছেন ঐ জিনিসটি পেতে। আর তুমি আজই তা পেতে চাও। নিরন্তর অভ্যাস করাে, তুমি তাে উদ্বোধনে প্রায়ই যাও। যখন ট্রাম-বাসে যাও তখন মায়ের চিন্তা করবে। অন্য চিন্তা করবে না।

তারপর তিনি স্বামীজীর জ্ঞানযােগ থেকে একটা অংশ মুখস্থ বলে গেলেন, “নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াও। সমুদয় দায়িত্ব নিজ স্কন্ধে গ্রহণ করাে। গতস্য শােচনা নাস্তি। তােমার কৃত প্রত্যেক অসৎ-চিন্তা ও অসৎ-কার্য তােমার উপর ব্যাঘ্রের ন্যায় লাফাইয়া পড়িতে উদ্যত, সেইরূপ তােমার সৎ-চিন্তা ও সৎকার্যগুলি সহস্র দেবতার বলসম্পন্ন হইয়া তােমাকে সদা রক্ষা করিতে উদ্যত।”
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna



২৮//১৯৬০, শ্রীরামকৃষ্ণের জন্মতিথি।
আমি ঐ দিন join করি এবং অদ্বৈত আশ্রমের অন্যান্য সাধু-ব্রহ্মচারীর সঙ্গে মঠে যাই। ভব মহারাজের সঙ্গে দেখা হলে তিনি খুব খুশি হয়ে বললেন, “Many are called but few are chosen.” তারপর কর্ম প্রসঙ্গে বললেন, “ঠাকুরকে জীবনের সঙ্গে এক করে নাও। কাজ করবে আর ভাববে যে তাঁর কাজ করছি। তাঁর চিন্তা করবে।”
১৪//১৯৬০, অদ্বৈত আশ্রম
ভব মহারাজের diabetes high blood pressure ছিল। তখন বেলুড় মঠের কোনাে গাড়ি ছিল না। সাধুরা বাসেই যাতায়াত করতেন। আমি ট্রেনিং সেন্টারে থাকাকালে মহারাজকে ৫৪ নম্বর বাসে করে হাওড়া ও অন্য বাস ধরে Dr. J. N. Datta-laboratory-তে (Chittaranjan Avenue) fasting blood test করাবার জন্য নিয়ে যেতাম। তারপর সেখানে কিছু খাইয়ে আবার blood test হতাে। ঐদিন মহারাজ অদ্বৈত আশ্রমে দুপুরে খেয়ে বিশ্রাম করে মঠে ফিরতেন।
একদিন আমিষ ও নিরামিষদের বিবাদ নিয়ে মজা করে বললেন, “মাছ মানে কী? মা আছ অর্থাৎ মা আছেন, তাতে সবার আনন্দ। মাংস মানে কী? মায়ের অংস অর্থাৎ স্কন্ধ। মা স্কন্ধে বা কোলে রেখেছেন তাতেই শিশুদের আনন্দ।” বিরােধী পক্ষ-মৎস্য ভােক্ষ্যসি সর্বগ্রাসী।
উত্তরপক্ষ–দেখ হে, আমরা জানি আমরা মায়ের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। আমরা সব ব্রহ্মময়ীর বেটা। আমরা অবিনাশী।
আমিষ-নিরামিষদের বিবাদ শেষ হলাে হাসির মাধ্যমে। তিনি রসিকও ছিলেন।



 স্বামী বােধাত্মানন্দ(ভব মহারাজ)
 স্বামী বােধাত্মানন্দ(ভব মহারাজ)

No comments

Powered by Blogger.