প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী ভূতেশানন্দজী - Spirituality Religion

Header Ads

প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী ভূতেশানন্দজী

প্রাচীন সাধুদের কথা _স্বামী ভূতেশানন্দজী

Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna


তারপর প্যাকেট খুলে একটি দিলাম।
 তিনি চায়ের সঙ্গে খেলেন। 
তারপর আমি ingredient পড়ে দেখলাম, ক্ষতিকর কিছু নেই। তাঁকেও পড়ে শােনালাম। 
তিনি বালকের মতাে খুশি হয়ে বললেন,
 “দেখলে তাে—তুমি আমার জন্য এনেছ, অথচ দিতে ভয় পাচ্ছিলে।”
 তারপর সেবককে ডেকে বললেন যে, রােজ বিকালে যেন চায়ের সঙ্গে ঐ আমেরিকান বিস্কুট তাঁকে দেওয়া হয়।

শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণলীলাপ্রসঙ্গ-এর ওপর কতকগুলাে প্রশ্ন পূর্বে চিঠির দ্বারা জিজ্ঞাসা করেছিলাম।

 তিনি উত্তরও দিয়েছিলেন।
 কিন্তু একটি ব্যাপারে তাঁর উত্তরে আমার সংশয় দূর হয়নি।
 বিষয়টি হলাে—চন্দ্রমণি দেবী ঠাকুরের জন্য কামারপুকুরে ওঝাদের দিয়ে চণ্ড নামিয়েছিলেন।
 মহারাজ লিখেছিলেন : “চণ্ড মানে ভূত বা spirit.” অভিধানেও তা-ই আছে। 

আমি মহারাজকে বললাম, “Christopher Isherwood চণ্ডকে medium বলেছে। 
কারণ, ভূত কী করে কথা বলবে?
যেমন, ঠাকুরকে চণ্ড বলল, ‘ও গদাই, তুমি অত সুপারি খাও কেন?
 ” মহারাজ একগাল হেসে বললেন, “ওটা একটা hoax বা বুজরুকি ব্যাপার।

 কামারপুকুর অঞ্চলের লােকেদের ঐরূপ বিশ্বাস ছিল।

 ওদেশে সব দোতলা মাটির বাড়ি আছে।

 একজন চণ্ড আগে থাকতে attic-এ উঠে বসে থাকে।

 তারপর ওঝা মন্ত্র পড়ে আর প্রশ্ন করে।

 ওপর থেকে চাপা গলায় চণ্ড উত্তর দেয়।

 একবার এক চণ্ড ওপরে অন্ধকারে বসে আছে, আরেক চণ্ড ওপরে উঠে ঐ চণ্ডের শরীর স্পর্শমাত্র চিৎকার করে উঠল।

 তারপর দু-জনই ওপর থেকে ভয়ে জড়াজড়ি করে নিচে পড়ল।” 
আমরা দু-জনে খুব হাসলাম এবং চণ্ড নামানাের ব্যাপারটা বুঝলাম।

Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna


//১৯৯৭, বেলুড় মঠ, সকাল ৭টা।

সেবকদের কাছে শুনলাম, রাতে মহারাজের শ্বাসকষ্ট হয়েছিল এবং oxygen দিতে হয়েছিল।
 তবুও সকালে সাধুদের দর্শন দিলেন হাসিমুখে।

আমি—সাধুজীবনের করণীয় কী?
মহারাজ—সে কথা তাে ‘প্রেষমন্ত্র’-এ আছে সর্বত্যাগ এটিই প্রথম কথা। 
আর দ্বিতীয় কথা—তাঁতে সমস্ত সমর্পণ।
 প্রথমটি negative, অপরটি positive—সব তাঁতে অর্পণ।

আমি—পাশ্চাত্যে renunciation শব্দ শুনলে ভয় পায়। তারা ভাবে ওটা negative.
মহারাজ—যতক্ষণ ভােগাসক্তি আছে ততক্ষণ ত্যাগটা ভয়ের জিনিস ভােগাসক্তি চলে গেলে ত্যাগে ভয় নেই।
 সেটি স্বাভাবিক। উপায়—সর্বস্ব তাঁতে সমর্পণ।

আমি—কী করে?
মহারাজ–‘অহং ত্যাগ করে।
 মন থেকে ‘অহং ত্যাগ করে সেখানে ঈশ্বরকে বসাও।

 তােমার কাজ হলাে অহং ত্যাগ।
 তােমাকে বসাতে হবে না
তিনি সেখানে সর্বদাই রয়েছেন।

আমি—হরি মহারাজ বলেছেন—যােগবাসিষ্ঠ রামায়ণ-এ আছে যে মনোনাশ, বাসনাক্ষয় ও তত্ত্বজ্ঞান একসঙ্গে হয়।

 কীভাবে?

মহারাজ—“আত্মা বা অরে দ্রষ্টব্যঃ শ্রোতব্যো মন্তব্যো নিদিধ্যাসিতব্য।
(বৃহদারণ্যক উপনিষদ, //) মননটা উপায়।

 তারপর বাসনা। যে-বিষয়ে বাসনা ইষ্টলাভের প্রতিকূল, মনন করলে সে বাসনা চলে যায়।

 তখন স্বাভাবিকভাবে মানুষের মুক্তি হয়।

...আত্মার মনন করলে এষণাত্রয় (লােকৈষণা, পুত্রৈষণা, বিত্তৈষণা) ক্ষয় হয়। তারপর তত্ত্বজ্ঞান হয়। 

এ তিনটি পরপর আসে, তা নয়—একই জিনিস।
 আলাে আসে, অন্ধকার যায়।

আমি-বাসনাক্ষয় না হলে তাে মনােনাশ হয় না।

 কোনটা আগে?
মহারাজ-বাসনাক্ষয় ও মনােনাশ টাকার এপিঠ-ওপিঠ।
 আগুপিছনে একটার সঙ্গে অপরটা simultaneous.

আমি—বৌদ্ধদের বিপাসনা ধ্যানটা কী?
Sri Ramakrishna

Sri Ramakrishna



মহারাজ‘সর্বং ক্ষণিকং দুঃখং ত্যজ্যম্।
 দুঃখনিবৃত্তির উপায় আর্যসত্য। চতুষ্টয়। 

Zen Buddhist-রা বলে—constant alertness. তুমি যা কাজ কর বা চিন্তা কর, সদাজাগ্রত ভাব নিয়ে করবে।

Mindfulness—যা করবে। 
সম্পূর্ণ মন দিয়ে করবে, আংশিক মন দিয়ে নয়।

 যেটা ধরবে সেটা সর্বান্তঃকরণে করবে, তাহলে বিক্ষেপ আসবে না। 

তখন সত্য প্রতিভাসিত হবে। 

  • বৌদ্ধদের লক্ষ্য হলাে শূন্য-Void. 
  • মাধ্যমিকদের মতে শূন্য Void নয়,
  • বিক্ষেপের অভাব বা alertness of truth. 
  • একজন দু-বছর ধরে বাসন মেজেছে।

 তখন তার মনে হলাে—আমি বাসন মাজার সময় অন্য কথাও তাে ভাবি।

 সে-কথা গুরুকে বলায়, তিনি বললেন, ‘পুরাে মন দিয়ে।

 বাসন মাজো, তাহলে তুমি গােটা বিশ্বের রহস্য উন্মােচন করতে পারবে।

 স্বামীজী কর্মযােগের কথায় বলেছেন—আমরা যদি সম্পূর্ণ মন দিয়ে কর্ম করতে পারি, তাহলে আমাদের মনের সব চঞ্চলতা দূর হয়ে যাবে।

 চঞ্চলতা দূর হলে, তার পিছনে যে সত্তা অর্থাৎ আত্মা আছেন তাঁর প্রকাশ হয়।

আমি-গীতা-র কর্মযােগ ও স্বামীজীর কর্মযােগের মধ্যে কোনাে পার্থক্য আছে?

মহারাজ-গীতা-র ফলাৰ্পণ’ আর স্বামীজীর ‘ফলাকাঙ্ক্ষা বর্জন’ একই। একই সত্যের positive negative দিক।

 গীতা-তে আছে সমস্ত কর্মের ফল ঈশ্বরে অর্পণ করতে হবে।

 স্বামীজীর কর্মযােগ হচ্ছে স্বার্থশূন্য হয়ে কর্ম করা। 

স্বার্থপরতা ছাড়তে হবে।
 ফলাভিসন্ধিহীন হয়ে কর্ম করাে।

 কর্ম মনে বিক্ষেপ আনছে, কারণ, আমরা এটার-ওটার পেছনে ছুটোছুটি করছি।

 স্বামীজীর ও বুদ্ধের কর্মযােগের খুব মিল আছে।

 বন্ধন থেকে মুক্তি পেতে হলে সমগ্র মন দিয়ে কর্ম করাে।

 এতে মনের বিক্ষেপ ভাব চলে যাবে এবং সত্য প্রকাশিত হবে। সত্যের প্রকাশ স্বতঃসিদ্ধ।

 আবরণ সরানােই হচ্ছে আধ্যাত্মিক জীবন।

 আর কিছু দরকার নেই। 

এটিই কর্মযােগের উদ্দেশ্য।
শঙ্কর-মতে, কর্মযােগের দ্বারা চিত্তশুদ্ধি—তারপর জ্ঞান।

 কিন্তু তিনি এ-দুটির ভিতর আবার উপাসনা যােগ করেছেন।

 এর দরকার ছিল না, কারণ, ব্রহ্ম স্বয়ং-প্রকাশিত।

 কেউ ব্ৰহ্মকে প্রকাশ করতে পারে না।

 নিষ্কাম কর্মের দ্বারা কেবল বিঘ্নগুলি সরালেই সব হবে।

 শঙ্কর-মতে, অজ্ঞান কেবল জ্ঞানের দ্বারা নিবৃত্ত হবে।

 তাই মাঝখানে তিনি ব্রহ্মকারা বৃত্তি যােগ করে দিলেন। 

এই বৃত্তি অজ্ঞান বৃত্তিকে সরিয়ে দেবে। 

স্বামীজী বলেছেন—অজ্ঞান বৃত্তি সরে গেলে আর কী থাকবে? ব্ৰহ্ম তাে স্বয়ংপ্রকাশ।

সকাল সাড়ে দশটায় মহারাজের কাছে যাওয়ার আগে সেবক আমাকেই কথা বলতে বলল, যাতে মহারাজ বেশি কথা না বলেন।

 আমি মহারাজকে আনন্দ দেওয়ার জন্য কয়েকটি গল্প বললাম।

 একজন সন্ন্যাসিনী কনভেন্টে খুব অভিযােগ করত। তাতে Mother Superior ঐ সন্ন্যাসিনীকে বললেন, “তুমি দশ বছরে মাত্র দুটি শব্দ ব্যবহার করতে পারবে। 

প্রথম দশ বছর পরে সন্ন্যাসিনীটি বলল, “Food bad.” দ্বিতীয় দশ বছর পরে বলল, “Very tired.” আর তৃতীয় দশ বছর অর্থাৎ তিরিশ বছর পরে বলল
“I quit.”
মহারাজ হাসলেন এবং বললেন,
 “অনেকে চলে যায়। বেশি rules পদ্য করে না।”


আমি God Lived with Them বই থেকে শরৎ মহারাজের জীবনী শেষাংশটুকু পড়ে শােনালাম।

 সেটি ছিল প্রব্রাজিকা ভারতীপ্রাণার স্মৃতিকথা।

 যা আমি অশেষানন্দজীর ঘরে একটা drawer-এ পাই। 

শরৎ মহারাজ ঠাকুরের কাছে সর্বভূতে ব্ৰহ্মদর্শনের প্রার্থনা করেছিলেন; তাতে ঠাকুর। বলেন, “তাের হবে।”

প্ৰব্রাজিকা ভারতীপ্রাণার স্মৃতিকথা :
 “জনৈক ভক্ত একবার স্বামী সারদানন্দকে জিজ্ঞাসা করে, ‘মহারাজ, আপনি আমাদের এত ভালবাসেন কেন?

দেখুন, শেষে জড়ভরতের মতাে বদ্ধ না হয়ে যান!' 
স্বামী সারদানন্দ কোনাে উত্তর দিলেন না।

 কয়েক দিন পরে ঐ ভক্ত উদ্বোধনে এলে মহারাজ বললেন, ‘সেদিন বেলুড় মঠে গিয়ে ঠাকুরের সামনে প্রণাম করলাম।

 ঠাকুর আবির্ভূত হয়ে আমাকে বললেন—তুই সবাইকে ভালবাসিস, কারণ, তুই আমাকে সবার মধ্যে দেখিস।

 সেদিন তুমি যা প্রশ্ন করেছিলে, এই হলাে তার উত্তর।

 ”তারপর দেখলাম ছলছল চোখে মহারাজ একটা নিঃশ্বাস ফেলে গীতা

 এই শ্লোকটি বললেন,
যযা মাং পশ্যতি সর্বত্র সর্বং চ ময়ি পশ্যতি।
তস্যাইং ন প্রণশ্যামি স চ মে ন প্রণশ্যতি৷” (/৩০)


No comments

Powered by Blogger.