প্রাচীন সাধুদের কথা_স্বামী সত্যস্বরূপানন্দ(বিশেষ মহারাজ)
প্রাচীন সাধুদের কথা_স্বামী সত্যস্বরূপানন্দ(বিশেষ মহারাজ)
Sri
Ramakrishna
|
“বেলুড়
মঠের পুরােনাে কথা স্বামীজীর
শিষ্য কানাই মহারাজের (স্বামী
নির্ভয়ানন্দ)
কাছে
শুনেছিলাম।
তিনি ছিলেন স্বামীজীর
সেবক।
“এক
গােয়ালা বেলুড় মঠে রােজ
দুধ জোগান দিত।
একদিন দুধ
দিয়ে মঠের গেটের বাইরে বসে
মদ খাচ্ছে আর আবােলতাবােল
বকছে।
স্বামীজী সেসব শুনে
গােয়ালাকে ডেকেছেন।
তারপর
তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন,
‘এই
ব্যাটা,
তুই
দুধে এত জল মেশাস কেন?’
মত্ত
অবস্থায় সে উত্তর দিল,
‘হ্যাঁ,
আমি
একটু জল দিই।
তবে আমার বাবা
দাদা গেড়ে ডােবার জল মেশাত।
আমি কিন্তু চাপকলের (টিউবওয়েলের)
জল
মেশাই।
মাতাল গােয়ালার সত্য
কথা শুনে স্বামীজী খুব খুশি
হলেন।
স্বামীজী ছিলেন সত্যের
পূজারি।
“স্বামীজী
যখন দ্বিতীয়বার আমেরিকায়
যান তখন শরৎ মহারাজের ওপর
বেলুড় মঠের কাজকর্ম দেখার
ভার দিয়ে যান।
তিনি মঠকে খুব
ফিটফাট
রাখার চেষ্টা করতেন।
মঠে তখন
সুশীল মহারাজ (স্বামী
প্রকাশানন্দ)
ভাণ্ডারি।
শরৎ মহারাজ একদিন ভাণ্ডার
inspection
করতে
গিয়ে দেখেন,
মেঝেতে
কিছু ঘি পড়ে রয়েছে।
Sri
Ramakrishna
“আরেক
বার মঠে খাটা পায়খানা চার-পাঁচ
দিন পরিষ্কার হয়নি।
মেথর
আসছে না।
খুব বিশ্রী অবস্থা
কেউ পরিষ্কার করছে না।
তারপর
একদিন দুপুরবেলায় খাওয়ার
পর সবাই যখন শুতে গিয়েছে,
স্বামী
বােধানন্দ ও আরেক জন সাধু
পায়খানা পরিষ্কার করে
গঙ্গাস্নান করেছেন ও সাবান
দিয়ে সারা শরীর ধুয়েছেন।
এদিকে বাবুরাম মহারাজ ছিলেন
খুব আচারী।
তিনি সব শুনে
বােধানন্দ ও অন্য সাধুটিকে
বললেন,
‘তােরা
দু-জনে
ময়লা ঘেঁটেছিস।
তােরা ঠাকুরঘরে
যেতে পারবি না।
বিকালে শরৎ
মহারাজ ঘােষণা করলেন,
‘এই
দু-জন
সাধু যে বিরাট কাজ করেছে,
এদের
সম্মানার্থে আজ রাতে লুচি,
তরকারি
ও মিষ্টির ভাণ্ডারা হবে।
আমি
সব টাকা দেব।
রাতে মহানন্দে
সাধুরা ভাণ্ডারা খেলেন।
বাবুরাম মহারাজ আর কিছু বললেন
না।
Sri
Ramakrishna
|
“কানাই মহারাজ খুব দুরন্ত প্রকৃতির ছিলেন। তাঁর ভয়ডর ছিল না। সাধুদের বড় আমল দিতেন না, তবে মহাপুরুষ মহারাজকে একটু ভয় করতেন। তখন মঠের ভিজিটার্স রুমে তামাক খাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। একদিন সন্ধ্যার পর মহাপুরুষ মহারাজ অন্ধকারে বসে হুঁকোতে তামাক খাচ্ছিলেন। কানাই মহারাজ ঘরে ঢুকে ভাবলেন সুধীর মহারাজ (শুদ্ধানন্দ) তামাক খাচ্ছেন। কানাই মহারাজ বললেন, ‘ভাই সুধীর, হুঁকোটা দে, একটু তামাক টানি। কোনাে উত্তর নেই। আবার বললন, ‘দে ভাই হুঁকোটা। তখনাে কোনাে উত্তর না পেয়ে তিনি হুঁকোটা ধরে বলছেন, দে রে শালা। অমনি মহাপুরুষ মহারাজ বললেন, ‘নে রে শালা। যেই মহাপুরুষের গলার স্বর শুনেছেন, কানাই মহারাজ দৌড়ে ঘর থেকে পালিয়ে গেলেন।”
রামকৃষ্ণ
সঙ্ঘের সাধুদের রঙ্গপ্রিয়তা
দেখে আমাদের হাসি পায় এবং
তা জানিয়ে দেয় শ্রীরামকৃষ্ণ
প্রদর্শিত অধ্যাত্মজীবন
শুষ্ক ও নীরস নয়।
No comments