প্রাচীন সাধুদের কথা _ স্বামী ধর্মেশানন্দ(ধীরেন মহারাজ) ১৮৯৯-১৯৯৪
প্রাচীন সাধুদের কথা _ স্বামী ধর্মেশানন্দ(ধীরেন মহারাজ) ১৮৯৯-১৯৯৪
BANERSHAR
SHIVA LINGA
|
একবার
স্বামী বিশ্বানন্দ বােম্বাই
থেকে এক ধনী শেঠকে শ্ৰীম-র
কাছে নিয়ে গিয়েছেন।
তিনি
তাঁকে ভগবানের কথা অনেক বললেন।
তারপর তাঁরা যখন চলে যাচ্ছেন,
শ্ৰীম
বিশ্বানন্দ মহারাজকে ডেকে
বললেন,
“দেখ,
সাধুর
পেছনে পেছনে ভক্ত যাওয়া ভাল,
কিন্তু
ধনিভক্তের পেছনে পেছনে।
সাধুর
যাওয়া ভাল নয়।
তােমার প্রতি
যদি তাদের শ্রদ্ধা না থাকে,
তােমার
কথার প্রতিও তাদের শ্রদ্ধা
হবে না।
ভগবানের ওপর নির্ভর
করবে,
ধনীদের
ওপর নয়।”
একদিন
সকাল ১১টার সময় শ্রীম-র
কাছে গিয়েছি।
তিনি তখন খােলা
বাথরুমে বসে বালতির জলে স্নান
করছেন।
আমি দেখলাম ভারী বালতি
তুলতে তাঁর খুব কষ্ট হচ্ছে।
একটি ঘটি বালতিতে ডুবিয়ে
স্নান করছেন।
আমি বললাম,
তিনি
বললেন,
“কী
আর করব?
এখানে
আমাকে দেখার কেউ নেই।”
আমি
বললাম,
“আপনি,
বেলুড়
মঠে গিয়ে থাকলে সবাই আপনাকে
যত্ন করে রাখবে।”
তিনি আমাকে
ধমক দিয়ে বললেন,
“কী
বলছ?
সাধু
কত বড়।
মেরুসর্ষপয়াের্যদ
যৎ সূর্যখদ্যোতয়ােরিব।
সরিৎসাগরয়াের্য যৎ তথা
ভিক্ষুগৃহস্থয়ােঃ ॥
—মেরু
ও সর্ষেতে যে প্রভেদ,
প্রচণ্ড
সূর্য এবং খদ্যোতে
Sri
Sarada Devi
|
(জোনাকিতে)
যে
প্রভেদ,
অনন্ত
সমুদ্র ও ক্ষুদ্র গােস্পদে
যে প্রভেদ,
সন্ন্যাসী।
এবং গৃহীতেও সেই প্রভেদ।
গৃহস্থ কখনও সাধুর সেবা নেবে
না।”
এভাবে তিনি আমাদের সাধু
ও গৃহস্থের আদর্শ দেখাতেন।
শ্ৰীম
যিশুখ্রিস্টের কথা খুব বলতেন।
তিনি বলেছিলেন,
“কৃষ্ণ
যেমন গােচারণ করতেন,
যিশুও
তেমনি মেষচারণ করতেন।
একবার
এক মেষশাবক হারিয়ে যায়।
অনেক খুঁজে তিনি মেষশিশুটিকে
পেয়ে কোলে করে নিয়ে আসছেন;
তখন
অন্যান্য মেষ তাঁর পেছন পেছন
আসতে লাগল।
যিশু বললেন,
“দেখ,
মেষদের
মধ্যে কী ভালবাসা।
এই মেষশিশু
বিপথে গিয়েছিল।
যারা ভগবানের
ওপর নির্ভর করে ভগবান তাদের
বিপথ থেকে রক্ষা করেন।
A
good shepherd goes to search for a sheep gone astray.
সুতরাং,
ভগবানের
ওপর নির্ভর করাে;
তাহলে
তােমাদের কোনাে ভয় নেই।”
Swami
Shivananda
|
Don't
sell your birthright. নিজের
birthright-টা
সদা রক্ষা করবে।
এই প্রসঙ্গে
শ্ৰীম যিশুর একটা parable
বলেছিলেন,
“এক
ধনি-।
ব্যক্তির দুই ছেলে বিদেশে
ব্যবসা করতে গেল।
মরুভূমির
পথে ছােট ছেলের জল ও খাবার সব
ফুরিয়ে গেল।
সে দাদার কাছে
গিয়ে বলল,
“আমাকে
জল ও খাবার দাও।'
তখন
দাদা বলল,
“আমি
জল ও খাবার দিতে পারি তবে তােমার
birthright
অর্থাৎ
সম্পত্তির অর্ধাংশটা আমাকে
দিতে হবে।
তারা ছিল বিরাট
ধনী।”
শ্ৰীম
আমাদের জিজ্ঞাসা করলেন,
“তাহলে
ছােট ছেলে কি তার birthright-টা
দিয়ে দেবে?”
আমরা
বললাম,
“Birthright-টা
না দিলে যে সে না খেয়ে মরে
যাবে।”
শ্ৰীম বললেন,
“তাহলে
ছােট ভাইকে তাে চিরকাল বড়
ভাই-এর
দাস হয়ে থাকতে হবে।
না,
birthright দেওয়ার
চেয়ে মরণও ভাল।
আমাদের ভগবানের
কাছে birthright
আছে।
আমরা আত্মা—অবিনাশী।
আমরা
আত্মজ্ঞান লাভ করব।
দেখ,
বিবেক-বৈরাগ্য
আসল জিনিস।
খাওয়া-পরা
এসব নিয়ে তা যেন ভুলে না যাই।
মৃত্যুপণ করে ভগবানের কাছে
প্রার্থনা করতে হয়,
দাবি
করতে হয় আত্মজ্ঞানের জন্য।”
শ্ৰীম
যিশুখ্রিস্টের আরেকটা parable
বলতেন—Follow
me'—“এক
বড় merchant
(বণিক)
ছিল।
সে তার ব্যবসা বিক্রি করে একটা
pearl
(মুক্তা)
কিনল।
সেই pearl-এর
দাম কোটি কোটি টাকা।
ইচ্ছা
করলে তা
Swami
Vivekananda
|
বিক্রি
করে সে আবার ব্যবসা করতে পারত।
বলাে দেখি,
ঐ
pearl-টা
কী?
তা
ভক্তি।
দেখ,
ত্যাগ
না হলে ভক্তি হয় না।
ঠিক তেমনি
সব মন গুটিয়ে ভগবানকে দিলে
ভগবানলাভ হয়।”
এরকম করে তিনি
বিভিন্ন গল্পের মাধ্যমে আমাদের
শিক্ষা দিতেন।
আমি
যখন উদ্বোধনে থাকি তখন কখনাে
কখনাে মঠে মহাপুরুষ মহারাজের
কাছে যেতাম।
শ্ৰীম আমাকে
বলেছিলেন,
“গুরুবাক্যে
বিশ্বাস ও গুরুসেবা আধ্যাত্মিক
পথে বিশেষ প্রয়ােজন।
গুরু
যেমন বলেন তেমনি করবে।
তােমার
ভাবভক্তি ও কোন্ পথে গেলে
তােমার মঙ্গল হবে গুরুই বেশি
জানেন।”
১৯২৫ সালে আমি মহাপুরুষজীর
কাছে দীক্ষা পাই।
তারপর ১৯২৮
সালে ব্রহ্মচর্য ও ১৯৩৩ সালে
সন্ন্যাস।
দীক্ষার পর আমি
বুঝলাম দীক্ষার মূল উদ্দেশ্য
হলাে ভগবানকে আপন করে নেওয়া।
ভগবান ও ভক্তের মধ্যে কোনাে
ভেদ নেই—অনন্তকালের সম্পর্ক।
তিনি অন্তর্যামী।
আমাদের
ভিতর-বার
সব জানেন।
শ্ৰীম বলতেন,
“গুরু
ও ইষ্ট ধর্মজীবনের প্রধান
সম্বল।
গুরু হচ্ছেন সেই বাজিকর,
যিনি
হাজার গাঁটওয়ালা দড়ি লাগ
ভেলকি লাগ’ বলে খুলে দিতে
পারেন।”
No comments