প্রাচীন সাধুদের কথা_স্বামী ধীরেশানন্দ (১৯০৭-১৯৯৮)
প্রাচীন সাধুদের কথা_স্বামী ধীরেশানন্দ (১৯০৭-১৯৯৮)
Sri
Ramakrishna
|
শেখার
শেষ নেই। রােজ নতুন কিছু শিখলে
জ্ঞানভাণ্ডার বৃদ্ধি পায়
এবং মানুষকে পুরানাে হতে দেয়
না। মনে জং ধরলে মানুষ গতিহীন
হয়ে যায়। এই গতিহীনতাই একরকম
মৃত্যু। এদের লক্ষণ হলাে ঃ
এরা খায় আর ঘুমােয়—easy
going life lead করে।
১৯৭৭
সালে হলিউড থেকে যখন দেশে যাই
কাশীতে কয়েক দিন ছিলাম।
কাশীতে তখনও অনেক প্রাচীন
সাধু ছিলেন। সময় পেলেই আমি
বিভিন্ন সাধুর ঘরে গিয়ে
প্রশ্ন করতাম বা তাঁদের
স্মৃতিকথা শুনতাম। তারপর ঘরে
এসে তা diary-তে
লিখতাম বা টেপ করতাম।
Sri
Ramakrishna
|
সাধুজীবনের
প্রথম দশ বছর আমি কলকাতার
অদ্বৈত আশ্রমে কর্মে লিপ্ত।
ছিলাম। হিমালয়ে গিয়ে নিরালম্ব
হয়ে তপস্যার বাসনা মনে জাগত,
কিন্তু
কোনাে সুযােগ পাইনি। ঠাকুরের
সন্ন্যাসি-শিষ্যদের
ত্যাগ,
তপস্যা,
কঠোরতা
আমার তরুণ মনে অনুপ্রেরণা
জাগাত। স্বামী ধীরেশানন্দ
মহারাজের কাছে আমি বিশেষ ঋণী।
তিনি আমার অতৃপ্ত বাসনা কিছুটা
মিটিয়েছেন তাঁর নিজস্ব
ডায়েরিগুলাে আমাকে দান করে।
তিনি প্রকৃতপক্ষে একজন
বেদান্তনিষ্ণাত সাধু ছিলেন
এবং মধুকরের মতাে মঠ-মিশনের
ও অন্য সম্প্রদায়ের সাধুদের
কাছ থেকে সারা জীবনব্যাপী
যেসব অধ্যাত্ম-মধু
সংগ্রহ করেছিলেন,
তা
ঐ ডায়েরিগুলিতে লিখে রেখেছিলেন
অতি সুন্দর হস্তাক্ষরে। নাম
দিয়েছিলেন‘সৎসঙ্গ রত্নাবলী'।
বলতে গেলে আমি বিনা পরিশ্রমে
একজন সাধুর সারাজীবনের কষ্টলব্ধ
সম্পদ পেয়ে গেলাম। তাঁর ঐ
ডায়েরি থেকে প্রাচীন সাধুদের
কিছু কথা উদ্বোধন পত্রিকায়
ছাপা হয়েছিল;
আর
এখন নিবােধত পত্রিকায়
ধারাবাহিকভাবে ছাপা হচ্ছে।
মহারাজের ডায়েরির তথ্য নিয়ে
From
the Diary of a Monk' নামে
আমি ত্রিশটা বক্তৃতা দিয়েছি।
এই ডায়েরিগুলি অধ্যাত্মপিপাসুদের
অমূল্য সম্পদ।
Sri
Ramakrishna
|
মহারাজের
অনেক রকম ডায়েরি ছিল। হিমালয়ের
সাধুদের নিয়ে লেখা ডায়েরির
দুই খণ্ডের নাম ‘সৎসঙ্গ
রত্নাবলী’,
আর
তাঁর private
ডায়েরিতে
ছিল রামকৃষ্ণ সঙ্ঘের সাধুদের
কথা। এছাড়া আরাে অনেকগুলি
ডায়েরি ছিল।
এই
private
ডায়েরি
বা ছােট নােটবই সম্বন্ধে তিনি
২৪/১২/১৯৮২
তারিখে নিজে লিখেছেন :
“একটা
ছােট নােটবইতে খুব ছােট ছােট
অক্ষরে ৪০/৫০
বছর ধরে
Sri
Ramakrishna
|
টুকে
টুকে রেখেছি অনেক কথা। খুলে
দেখলাম আগের অনেক লেখার কালি
অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নিজেরও
সাধ্য নেই যে সেগুলি copy
করি।
অনেক অপ্রকাশ্য কথাও তাতে
আছে—ফস্টিনস্টি। সেগুলি
ছাঁটাই করতে হবে। তাই ভাবছি,
এ
যক্ষের ধন’ তােমাকেই দিয়ে
দিই। ডায়েরি পাঠাব কী করে?
অদ্বৈত
আশ্রম বই-এর
সঙ্গে পাঠাবে কি?
আমি
এসব জানি না। ওদেশ থেকে শীঘ্র
কেউ India-তে
আসবে কি?
তাহলে
তাদের হাতে দিতে পারি। মহারাজদের
বিষয়ে অনেক নতুন কথা অবশ্য
তাতে পাবে,
যা
প্রাচীন সাধুদের মুখে শুনেছি।
এতকাল ঐ খাতা কাউকে দিইনি।
হঠাৎ মরে গেলেত তা ওগুলি
dustbin-এ
ফেলে দেবে।”
Sri
Ramakrishna
|
৪/২/১৯৮৩
তারিখে মহারাজ লেখেন ঃ “তােমার
কথামতাে (যক্ষের
ধন)
আমার
ছােট নােটবইটি গত ১/২/৮৩
তারিখে Registered
air mail যােগে
পাঠানাে হয়েছে। খরচ বেশ যাক,
এখন
তুমি ওটি পেলেই হয়। পেয়ে
অবশ্যই প্রাপ্তিসংবাদ দেবে,
কারণ
আমি ঐজন্য চিন্তিত থাকব।
খাতাটি অতি ছােট ছােট অক্ষরে
সম্পূর্ণ নিজের জন্যই লেখা,
যাতে
আর কেউ সহজে না পড়তে পারে।
প্রথম কয়েক পৃষ্ঠা কেটে
দিয়েছি,
কারণ
ঐগুলি মহারাজদের কোনাে প্রসঙ্গ
নয়,
উত্তরাখণ্ডের
প্রাচীন সাধুদের কথা প্রায়
৫০ বছর আগের লেখা। খাতার শেষভাগে
রয়েছে প্রভাস মহারাজ কথিত
মহাত্মা মথুরাদাসের কথা।
তিনি হরিদ্বারের একজন প্রসিদ্ধ
সাধু ছিলেন। স্বামীজীর ভাই
মহেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর ‘সাধু
চতুষ্টয়’ বইতে মথুরাদাসের
কাহিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে লিখেছেন।
খাতাতে বহু কথা আছে,
তবে
এমন কিছু ছাপিও না যার জন্য
আমাকে সকলের কাছে অপদস্থ হতে
হয়। লেখাগুলির কিছু তােমার
কাজে লাগল কি না জানিও।”
No comments