গুরু দক্ষিণা _পরিব্রাজিকা শাস্তিহৃদয়া II Ramakrishna Mission, Shillong_Flower
গুরু দক্ষিণা _পরিব্রাজিকা শাস্তিহৃদয়া II Ramakrishna Mission, Shillong_Flower
কয়েকমাস
আগেকার সেই রবিবারটা কী আশীষই
না বয়ে এনেছিল!
গঙ্গাস্নানে
যাবার ঠিক আগে আমি তােমার কাছে
ছুটে গিয়েছিলাম,
আবার
স্নান করে ফিরে এসেই মুহূর্তের
জন্য দৌড়ে তােমার পাশে গেলাম।
তােমার ঘরখানির স্বাগত পরিবেশে
তুমি সেদিন আমায় যে আশীর্বাদ
করলে,
তা
আমায় দিয়েছিল একটি অদ্ভুত
মুক্তির অনুভূতি।
_প্রেমময়ী
মা,
চমৎকার
একটি স্তোত্র বা প্রার্থনা
যদি তােমার উদ্দেশ্যে লিখে
পাঠাতে পারতাম!
কিন্তু
তাতেও মনে হয় বড্ড বেশি শব্দ
করা হবে,
সেটা
শােনাবে কোলাহলের মতাে!
সত্যিই
তুমি ঈশ্বরের আশ্চৰ্যতম
সৃষ্টি!
শ্রীরামকৃষ্ণের
বিশ্বপ্রেম-সুধা-ধরণের
পাত্র!—এই
সঙ্গহীন দিনে তুমিই রয়েছ
তাঁর সন্তানদের কাছে তাঁর
প্রতীক;
আর
আমাদের উচিত তােমার কাছে
অত্যন্ত স্তব্ধ ও শান্ত হয়ে
থাকা—অবশ্য কখনও কখনও একটু
মজা করবার সময় ছাড়া।
ভগবানের
যা-কিছু
বিস্ময়কর সৃষ্টি সবই হচ্ছে
অতি শান্ত।
ধীর পদক্ষেপে
অজ্ঞাতে তারা প্রবেশ করে
আমাদের জীবনে—যেমন
- বাতাস,
- সূর্যের আলাে,
- যেমন বাগানের সৌন্দর্য-সুবাস,
- গঙ্গার স্নিগ্ধতা,
- এইসব শান্ত নীরব জিনিসই তােমার তুলনা।
- Read More
একটি বাস্তব জীবন কাহিনীঃ বাবা মার বিচ্ছেদ যে দিন
Ramakrishna Mission, Shillong |
Ramakrishna Mission, Shillong |
গুরু
দক্ষিণা
পরিব্রাজিকা
শাস্তিহৃদয়া
শ্রীরামকৃষ্ণ
সারদা পীঠ,কন্যাগুরুকুল।
সেদিন
ছিল পয়লা সেপ্টেম্বর ।
কিরণ
প্রথম বারের জন্য মাইনা পেয়েছে।
আজ থেকে ছয় মাস আগে সে একটি
উচ্চ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে
কেরাণী-পদে
কর্মরতা হয়।
একটু অতীতের
দিকে ফিরে তাকাল কিরণ।
তার
এই চাকরি ও পড়াশুনায় যীর
অবদান এত বেশী,
তীর
কথা একটু ভাবতে ইছা হল।
বড়
দুঃস্থ পরিবারে তার জন্য।
বাল্য অবস্থায় বাবাকে হারায়
সে।
মা বড় কষ্ট করে তাকে মানুষ
করেন।
মাধ্যমিক পরীক্ষায়
পাস করার পর কিরণের পড়াশুনা
বন্ধ হয়ে যায়।
এই রকমেই চলে
যায় চারটি বছর।
ওই চারটি বছর
কিরণকে খুব কষ্টে কাটাতে হয়
।
পড়াশুনাতে খুব ভাল না হলেও
মন্দ ছিলনা সে।
কিন্তু বাড়ির
অভাব -
অনটনের
জন্য তাকে বাধ্য হয়ে পড়াশুনা
বন্ধ রাখতে হয়।
মা বললেন,
“বেশী
পড়লে।
ভাল বর কোথায় পাব তাের
জন্য ?
আমার
ত অবস্থা এমন নয় যে তাের জন্য
ডাক্তার,
ইঞ্জিনিয়ার
যােগাড় করতে পারব ।
চুপ রইল
কিরণ।
চোখের জল মুছে বিয়ের
জন্য প্রস্তুতি নিল।
রানা ও
বাড়ির অন্যান্য কাজে শুরু
হল তালিম।
Ramakrishna Mission, Shillong, Flower |
পরদিন
কিরণ কবিতাদির বাড়ি যায়।
কবিতাদি তখন অবসর প্রাপ্ত
শিক্ষিকা ।
তারই তত্ত্বাবধানে
কিরণ এম এ পাস করে ।
ইতি মধ্যে
কেটেগেছে তিনটি বছর।
কবিতাদির
সঙ্গে দেখা করার সুযােগ আর
হয়নি।
কবিতাদির সাহায্য
ছাড়া তার জীবন সফল হতে পারত
না।
শুধু তারই জন্য সে নিজের
পায়ে দাঁড়াতে পেরেছে।
আজ
এত বড় দিনে তার খুব ইচ্ছা
হছিল সেই শ্রদ্ধেয় দিদিমণিকে
দেখা করে একটা প্রণাম করতে।
কিন্তু পরিস্থিতির তাড়নায়
আজ তা সম্ভব হচ্ছেনা।
৩রা
সেপ্টেম্বর,
শনিবার,
স্কুল
হাফ ছুটি,
সেই
দিন দেখা করতেই হবে। স্থির
করল,
সে
।
Ramakrishna Mission, Shillong, Flower |
স্কুল
ছুটির পর কিরণ সােজা গেল
কবিতাদির বাড়ি। মনের আনন্দে
পা তার নিচে পy
না।
মনে কত ভাবনা।
কবিতাদি তাকে
দেখে খুশি হবেন।
আবার এত দিনের
পর বলে একটু কেমন সংকোচও লাগছিল।
কবিতাদি চিড়ে ভাজা ভালবাসেন।
মা কিছু চিড়ে ভালা আর কিরণ
তার মাইনার-টাকায়
একটি হালকা রং-এর
৩াতের কাপড় কিনেছে তাঁর জন্য
।
এত দিন কবিতাদি তাকে দেখে
কি বলবেন ?
তার
চাকরি ও মাইনার কথাশুনে তিনি
কত খুশি হবেন।
তথাপি সে।
যে
প্রায় দুই বছর ধরে বিভিন্ন
ঝড়-ঝঞ্জায়
কবিতাদির সঙ্গে দেখা করতে বা
তার খবর নিতে পারেন।
এসব কবিতাদি
কিছু ভাববেন না এইটা তার দৃঢ়
বিশ্বাস। কবিতাদি খুবই আদর্শ
ও নিম্বার্থপর শিক্ষিকা।
Ramakrishna Mission, Shillong, Flower |
এই
সব কথা ভাবতে ভাবতে কিরণ কখন
এসে কবিতাদির বাড়ির সামনে
পৌঁছে গেছে।
কিন্তু একি!
কবিতাদির
বাড়ির দরজায় তালা ।
তবে
কবিতাদি ???
হাতের
ঘড়িকে তাকাল কিরণ ।
তখন আড়েইটা বাজে।
দিন দুপুর।
পাশাপাশি কোন জনপ্রাণী দেখতে
পেলনা।
সামনের বাড়ির দরজায়
কড়া নাড়ল সে।
বাড়ি থেকে
বেরিয়ে আসলেন এক জন মধ্য
বয়স্ক ভদ্রলােক। তাকে কবিতাদির
খবর জিজ্ঞাসা।
করতে,
ভদ্রলােক
একটু বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস
করলেন
, “আপনি কি তাঁর কোনও আত্মীয়”?
কিরণ
উত্তর দিল
, “না আমি তার ছাত্রী''।
ভদ্রলােক একটু চিন্তিত হয়ে
বললেন,
‘‘ভদ্রমহিলা
এখন নার্সিং হােমে। হঠাৎ
অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
শরীরে
ব্লাড নেই। ওনার ব্লাড গ্রুপ
পওয়া যাছে না”।
Ramakrishna Mission, Shillong, Flower |
কিরণের
মাথায় যেন বাজ পড়ল। ভদ্রলােকের
কাছ থেকে নার্সিং হােমের
ঠিকানা নিয়ে তার নির্দিষ্ট
ওয়ার্ডে গিয়ে উপস্থিত হল
সে ।
দিদিমণির অবস্থা যে খুবই
খারাপ,
তা
দেখে সে বেশ অনুমান করতে পমিল।
স্যালাইন ও অক্সিজেন চলছিল।
কবিতাদি অজ্ঞান অবস্থায়
ছিলেন।
কবিতাদিকে ভালােকরে।
পরীক্ষাকরে,
কাছে
দাঁড়ানাে ডাক্তারবাব কিরণকে
জিজ্ঞাসা করলেন,
“আপনি
কি পেসেন্টের রিলেটিভ মিনস
ডটার” ?
কিরণ
মাথা নেড়ে বলল :
‘না’’।
বুঝেনিল ডাক্তারবাবু তাঁর
মেয়ের অপেক্ষায় রয়েছেন।
এক মুহূর্তে নিজেকে প্রস্তুত
করে যথেষ্ট নম কণ্ঠে সে জিজ্ঞাসা
করল :
‘‘ডাক্তরবাবু
!
একটা
কথা জিজ্ঞাসা করছি,
ওনার
অবস্থা কেমন ?
উনি
সুস্থ হয়ে যাবেন ত ?
ডাক্তারবাবু
চিন্তিত হয়ে,
কবিতাদির
দিকে তাকিয়ে বললেন :
" একটু
অসুবিধা হয়ে যাছে ।
যদি ওনার
গ্রুপের ব্লাড পাওয়া যেত,
তবে
বাঁচার সম্ভাবনা আছে ।
নইলে
আজ রাতটা কাটা মুস্কিল”।
কিরণ
একথা কখনাে আশা করেনি।
কবিতাদিকে
সে এমন অবস্থায়।
কখনাে যেতে
দেবেনা ।
অসম্ভব ।
সে ডাক্তারবাবুর
সামনে গিয়ে অনুনয় করে বলল
:
ডাক্তারবাবু
যদি আমার ব্লাড গ্রুপ একবার
চেক করা হয় ?
ডাক্তারবাবু
এক মুহুর্তে রাজি হয়ে গেলেন।
সৌভাগ্যবশতঃ কবিতাদির ব্লাড
গ্রুপের সাথে কিরণের ব্লাড
গ্রুপ মিলে গেল।
সঙ্গে সঙ্গে
কবিতাদির পাশের বেডে শুইয়ে
কিরণের থেকে এক বােতল ব্লাড
নেওয়া হয় ।
Ramakrishna Mission, Shillong, Flower |
তারপরদিন
সকালে কবিতাদির জ্ঞান ফিরল
।
তখন কবিতাদির সামনে কিরণ
দাঁড়ানাে।
এত অসুস্থতা
সত্ত্বেও কবিতাদি একটু হাসতে
চেষ্টা করলেন।
সারা দিন তিনি
আবার আছন্ন অবস্থায়।
কাটালেন।
অক্সিজেন খুলে দেওয়া হল ।
স্যালাইন সেইরকম চলতে লাগল।
সন্ধ্যার সময় ডাক্তারবাবু
ঘােষণা করলেন পেসেন্ট এবার
নিরাপদ ।
নিশ্চিন্তে কিরণ
একটি দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
Ramakrishna Mission, Shillong, Flower |
সকাল
হল শুধু সকাল নয় ।
শুভ সকাল।
সুপ্রভাত ।
ইতিমধ্যে কবিতাদির
মেয়ে মেঘা। মুম্বাই থেকে
পৌঁছে গিয়েছিল।
কিরণের কথা
তখন নার্সিং হােমে চারদিকে
ছড়িয়ে পড়েছিল।
এই সমস্ত
খবর মেঘার কানে আসতে বেশী সময়
লাগল না ।
মেঘা কিরণের পাশে
এসে তার হাত দুটি ধরে।
বলল
; “কিরণদি! তুমিই মেয়ের কর্তব্য করে ধন্য হলে। যা আমি পারিনি”।
মেঘার চোখে
জল ।।
কবিতাদি সব দেখছিলেন ও
তাদের কথা শুনছিলেন ।
Ramakrishna Mission, Shillong, Flower |
এবার
কিরণের মনে পড়ল বাডি ও স্কুলের
কথা।
এখন স্কুলে যাওয়ার পালা।
কিরণ মেলায় বলল :
“আমি
এবার এলাম মেঘা !
তুমি
মাকে দেখ ।
আবার কবিতাদির
বেডের দিকে আর দু পা এ এসে
কবিতাদির উদ্দেশ্যে রুদ্ধ
ও অস্পষ্ট কণ্ঠে,
সজল
নয়নে বলল :
“আমি
এবার এলাম দিদি !
ভাল।
থাকবেন।
আবার ফিরব তাড়াতাড়ি আর দেরি করব না।
হঠাৎ তার
ব্যাগের কথা মনে পড়ল ব্যাগে।
আছে কবিতাদির জন্য ভাজা চিড়ে
ও কাপড়।
খুব সংকোচে সেইগুলি
বের করতে গিয়ে হাতটা তার আর।
ব্যাগ থেকে সহজে বেরছিল না ।
মেঘা কবিতাদির জন্য কত কি দামী
দামী খাবার এনেচে। কিরণকে
এমন।
ইতস্তত করতে দেখে মেঘা
হাসি মুখে জিজ্ঞাসা করল :
“কি
হল কিরণদি ?
মনে
হচ্ছে তুমি মায়ের জন্য।
কিছু
এনেছ। তাই না ?
দেখি
কি এনেছ ?
এই
বলে সে তার হাত থেকে জোর করে
নিয়ে দেখে -
একটি।
কৌট ভর্তি চিড়ে ভাজা ও একখানি
সুন্দর তীতের কাপড়।
কিরণ
কেমন অপরাধী -
স্বরে
বলল ;
এনেছিলাম
দিদির জন্য’ ।
কবিতাদি সব
শুনছিলেন।
হাত বাড়িয়ে
কাপড়টি ধরে খুব ভাল করে দেখলেন।
মেঘা দুটি চিড়ে ভাজা
তার মুখে দিল ।
অসুস্থ অবস্থায়
চিড়ে ভাজা তার মুখে ছিল বেশ
রুচিকর।
Ramakrishna Mission, Shillong, Flower |
কিরণের
চোখে আনন্দা ।
রুদ্ধ কণ্ঠে
বলল :
“আমি
চাকরি পেয়েচি দিদি !
সেই
মাইনের টাকায় আপনার জন্য
কাপড় কিনেছি।
সামান্য হাসলেন
কবিতাদি। সন্তোষের হাসি ।
সবার চোখে |
আনন্দাশ্রু
।
ক্ষিণ কণ্ঠে কবিতাদি বললেন
:
“তুমি
ত আমার প্রাণ বাঁচালে কিরণ”।
তখন মেঘা বলে উঠল। :
“আজ
৫ই সেপ্টেম্বর। শিক্ষকদিবস।
এমন সুন্দর যােগাযােগ!
৫ই
সেপ্টেম্বর শুনে কবিতাদি উঠে
বসলেন।
কিরণ তীর বুকে লুটিয়ে
পড়ল আবেগে।
এই দিদিমণির জন্য
সে আজ আলােকের সন্ধান পেয়েছে।
তার এই নিজের পায়ে দাঁড়ানাের
পিছনে যে এই দিদিমণির কতখানি
অবদান তা সে আজ বেশ ভাল ভাবে
বােঝে ।
কবিতাদি কিরণের মাথায়
হাত বুলিয়ে আর্শিবাদ করলেন।
মনে পড়ল গুরু প্রণামের একটি
শ্লোক -
Ramakrishna Mission, Shillong, Flower |
‘অজ্ঞানতিমিরান্ধস্য
জ্ঞানাঞ্জনশলাকয়া ।।
চক্ষুরুন্মীলিতং যেন তস্মৈ
শ্রীগুরবে নমঃ ।।
Ramakrishna Mission, Shillong, Flower |
Ramakrishna Mission, Shillong, Flower |
Ramakrishna Mission, Shillong, Flower |
Ramakrishna Mission, Shillong, Flower |
Ramakrishna Mission, Shillong, Flower |
Ramakrishna Mission, Shillong, Flower |
Ramakrishna Mission, Shillong, Flower |
Ramakrishna Mission, Shillong, Flower |
Ramakrishna Mission, Shillong, Flower |
Ramakrishna Mission, Shillong, Flower |
Ramakrishna Mission, Shillong, Flower |
Ramakrishna Mission, Shillong, Flower |
Ramakrishna Mission, Shillong, Flower |
Ramakrishna Mission, Shillong, Flower |
Ramakrishna Mission, Shillong, Flower |
Ramakrishna Mission, Shillong_Flower |
No comments