প্রাচীন সাধুদের কথা_ বাবা, দয়া করে বলবেন, কেন গৃহত্যাগ করে এপথে এলেন ?
প্রাচীন সাধুদের কথা_বাবা, দয়া করে বলবেন, কেন গৃহত্যাগ করে এপথে এলেন ?
Sri
Ramakrishna
|
আমিও
হাসতে হাসতে মাথাটা নাড়ালাম।
জিজ্ঞাসা করলাম,
– বাবা
এ পথে তো আছেন বহু বছর ধরে।
শান্তি পাওয়ার পথের কোনও হদিশ
পেলেন?
প্রসন্ন
হাসিতে ভরা সাধুবাবার মুখখানা।
মাথাটা নাড়িয়ে বললেন,
– হাঁ
বেটা পেয়েছি। সংসারে যার চাওয়া
গেছে তার চিন্তা গেছে। মন যার
কোনও কিছুরই পরোয়া করে না,
কিছুই
চায় না সেই মনের দিক থেকে প্রকৃত
রাজা। সেই শান্তি লাভ করে।
অন্তরে চাওয়া পাওয়ার বাসনা
যার ঘোচেনি,
সংসারে
সে কিছুতেই শান্তি পাবে না।
এই
প্রসঙ্গে সাধুবাবা একটা
শ্লোকের মতো বলেছিলেন। বহু
বছর আগের কথা। আজ আর অতটা মনে
নেই। এতক্ষণ পর গৃহত্যাগের
কারণ জানতে চেয়ে জিজ্ঞাসা
করলাম,
উত্তরে
বললেন,
Sri
Ramakrishna
– হাঁ
হাঁ বেটা,
জরুর
বলব। আমি যখন তোকে ডেকে বসিয়েছি
তখন তোর জিজ্ঞাসার উত্তর কি
না দিয়ে পারি!
একটু
অবাক হয়ে গেলাম কথাটা শুনে।
এতদিন ধরে যেসব সাধুদের জিজ্ঞাসা
করেছি তাদের অতীত জীবন ও
গৃহত্যাগের কথা তারা কিন্তু
কেউই চট করে বলতে রাজি হননি।
কখনও পায়ে ধরে,
কখনও
কাকুতি মিনতি করে,
কখনও
অনেক অনুরোধের পর বলেছেন তার
ফেলে আসা জীবন কথা,
গৃহত্যাগের
কথা। অথচ এই সাধুবাবাকে বলা
মাত্রই রাজি হলেন দেখে মনে
একটা ধন্দের সৃষ্টি হল। জানার
অপেক্ষায় রইলাম। সাধুবাবা
বলতে লাগলেন,
– বেটা,
নির্দোষ
জীবন যে কিভাবে কলুষিত হতে
পারে তার প্রমাণ আমি নিজে।
আমার মতো নিরপরাধ এমন কত হাজার
হাজার মানুষ সংসারে বিভিন্ন
অপরাধের বোঝা নিয়ে ঘুরে
বেড়াচ্ছে,
ব্যর্থ
জীবনযাপন করছে,
জেল
খাটছে,
কেউবা
আত্মহত্যা করে প্রাণ দিয়েছে,
তার
কোনও হিসাব সমাজের কেউ করেনি,
রাখেওনি।
ভাগ্যিস বেরিয়ে পড়েছিলাম,
নইলে
সংসারে থাকলে আজও নির্দোষ
হয়েও মানসিক গ্লানি নিয়ে বেঁচে
থাকতে হত আমাকে।
কথাটুকু
বলে একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস
ফেললেন। গৃহত্যাগের ঘটনা যে
মর্মান্তিক হবে কথাবার্তার
আঁচেই তা বুঝতে পারলাম,
যদিও
আসল কথাটা এখনও শোনা হয়নি।
সাধুবাবার মুখখানা দেখলাম,
কেমন
যেন একটা যন্ত্রণায় ভরে উঠল।
এ যন্ত্রণা নিজের না অন্য কারও
জন্য তা বুঝতে পারলাম না।
লক্ষ্য করলাম বৃদ্ধের চোখদুটোও
জলে বেশ ঝাপসা হয়ে এল। বললেন,
Sri
Ramakrishna
|
– বেটা
বিহারের দেওঘরের কাছে এক গাঁয়ে
আমার বাড়ি ছিল। বয়স যখন বছর
কুড়ি তখনকার কথা বলছি। আমার
এক ঘনিষ্ঠ দোস্ত ছিল। বলতে
পারিস আমরা কেউ কাউকে ছেড়ে
থাকতাম না শুধু খাওয়া আর শোয়ার
সময়টুকু ছাড়া। এক গাঁয়ের
পাশাপাশি বাড়িতে থাকতাম। রাম
লক্ষ্মণের মত সম্পর্ক ছিল
আমাদের। বয়েসে ও ছিল আমার চেয়ে
বছর দুয়েকের বড়। যাইহোক একসময়
বন্ধুটি গাঁয়েরই একটা মেয়ের
প্রেমে পড়ল। তাকে আমি চিনতাম।
আমার সঙ্গে তার সম্পর্কও ছিলও
অত্যন্ত প্রীতির। ওদের বাড়িতে
বন্ধুটির মতো আমারও যাতায়াত
ছিল অবাধ। তবে মেয়েটির প্রতি
বিন্দুমাত্র দুর্বলতা বা
আকর্ষণ ছিল না। ওদের বাড়িতে
বন্ধুটির যাতায়াতের ফলে প্রেম
মন থেকে গড়িয়ে গেল দেহে। তারপর
যা হবার তাই হল।
No comments