প্রাচীন সাধুদের কথা _এই ভর কাদের হয়, কেন হয়?
প্রাচীন সাধুদের কথা _এই ভর কাদের হয়, কেন হয়?
Sri
Ramakrishna
|
– এই
ভরটা কাদের হয়,
কেন
হয়?
আমি
দেখেছি ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষ
ভরে পড়ে থাকে।
মহাশক্তিসম্পন্ন
দেবদেবীদের কি খেয়েদেয়ে আর
কোনও কাজ নেই?
অশুভ
আত্মা,
সাধক
মহাপুরুষ আর দেবদেবী,
এঁদের
কার আগমনে কি রকম অবস্থা হয়
ভরকারীর দয়া করে বলবেন?
তিনি বললেন,
– বেটা,
ভরে
যখন কোনও দেবদেবী বা সাধকেরআবির্ভাব হয় তখন ভরকারীর
চোখমুখ কণ্ঠস্বরের অদ্ভুত
একটা পরিবর্তন ঘটে।
তবে তা
মোটেই ভয়ঙ্কর নয়।
কণ্ঠস্বরে
কোনও উগ্রতা থাকে না,
কর্কশও
নয়।
ভাবটা সম্পূর্ণ শান্ত।
তাতে থাকে প্রেম ও স্নেহের
ভাব।
বিশেষ করে ভরে যদি কোনও
দেবীর আবির্ভাব ঘটে।
কণ্ঠস্বর
যেমন কোমল ও কমনীয় হয় তেমনই
কথায় থাকে একটা মাতৃস্নেহের
ভাব।
কোনও দেবতা বা সাধক
মহাপুরুষের ভরে আবির্ভাবেও
ওই ভাব। কণ্ঠস্বরে কোনও পরিবর্তন
ঘটে না।
তাঁরা এবং দেবদেবী
ব্যতীত অন্য কেউ ভরে আসলে ভাব
ও কণ্ঠস্বরের আমূল পরিবর্তন
ঘটে।
Sri
Ramakrishna
|
যেমন
ধর চোখে মুখে উগ্রতা দেখা দেয়,
চিৎকার
করে কথা বলে,
কণ্ঠস্বরে
কোন মধুরতা থাকে না,
মাথা
ঝাঁকানো চুল ছেঁড়া,
দাপাদাপি
করা,
স্থির
হয়ে বসে বা শুয়ে না থাকা,
মুখ
থেকে কুকথা বলা,
কোনও
কিছু খাবার বা পুজো চাওয়া,
কারও
উপরে ক্রোধ প্রকাশ করা,
এটা
না করলে তোর ক্ষতি হবে,
ভয়
দেখানো কথা বলা ইত্যাদিতে
জানবি ভরে কোনও দেবদেবী বা
সাধক মহাপুরুষ আসেননি।
তাঁদের
কেউ এলে এমনটা হবে না।
আরও
একটা বিষয় লক্ষ্য করবি,
দেবদেবী
বা সাধক মহাপুরুষরা ভরে এলে
ভরকারীর চোখের পলক পড়বে না
যতক্ষণ না তাঁরা চলে যাচ্ছেন।
একমাত্র দেবদেবীরা যার উপরে
আসছেন,
তাকে
কেউ স্পর্শ করলে তৎক্ষণাৎ
তার দেহ পরিত্যাগ করেন।
দেবদেবী
ভিন্ন অন্য কেউ এলে ভরকারীকে
স্পর্শ করলে ভর ভঙ্গ হয় না।
এক
নাগাড়ে বলে সাধুবাবা থামলেন।
বুঝতে এতটুকু দেরি হল না যে,
আমার
দেখা ভরে কে এসেছিল,
কার
কথা মিলেছে আর কাদের কথা মেলেনি।
তবে ভরগুলোর মধ্যে শতকরা
নিরানব্বইটা ক্ষেত্রেই এখন
বুঝতে পারছি কোনও দেবদেবীর
আগমন ঘটেনি।
যেক্ষেত্রে
আবির্ভাব ঘটেছে তাঁদের কথাই
ঠিকঠাক হয়েছে।
একটু বিশ্রাম
নিয়ে সাধুবাবা বললেন,
Sri
Ramakrishna
– বেটা,
দেবদেবীর
ভরটা সকলের হয় না।
হাজারে এক
আধটা হয়।
বাদ বাকি যাদের ভর
হয়,
দেবদেবীর
আগমন তাদের মধ্যে প্রায়ই ঘটে
না।
আর বাবা,
এটা
তো বুঝিস যে একটা মহাশক্তির
আবির্ভাব ঘটতে গেলে যার মধ্যে
ঘটে তার একটা শুদ্ধ সাত্ত্বিক
নির্লোভ সুখদুঃখে বিকারহীন
জীবনযাপন প্রয়োজন।
তাই
সাধনভজনশীল নারী বা পুরুষের
মধ্যেই সেই মহাশক্তির আবির্ভাব
ঘটে ক্ষণকালের জন্য।
Sri
Ramakrishna
|
যার
ভর হয় তার ইচ্ছায় দেবদেবীরা
আসেন না,
তাঁরা
আসেন ভক্তের উপর কৃপাপরবশ
হয়ে।
ভগবানকে ডাকলাম অমনি
এসে গেল,
ফটাফট
সব বলে দিয়ে গেল,
অত
সস্তা নয়!
তবে
সাধনভজন বা শুদ্ধ সাত্ত্বিক
জীবনযাপন করলেই যে ভর হবে এমন
কোনও কথা নেই।
তাঁদের আসাটা
বা পাত্রপাত্রী নির্বাচন
করাটা সম্পূর্ণ তাঁদের ইচ্ছাধীন,
বুঝলি?
কথাগুলো
শুনলাম তবে হ্যাঁ বা না আমি
কিছু বললাম না।
ভাবতে লাগলাম।
মিলিয়ে নিতে থাকলাম আমার দেখা
বিভিন্ন জায়গার ভরের সঙ্গে।
এই প্রসঙ্গে আরও কিছু কথা হল।
মোদ্দা কথা ওইটুকু।
সাধুবাবা
হাসতে হাসতে বললেন,
– কিরে
বেটা,
আমার
সঙ্গে বসে তোর লাভই হল,
বল?
No comments