প্রাচীন সাধুদের কথা _– ঘর ছেড়ে বেরনোর পর কি করলেন
– ঘর ছেড়ে বেরনোর পর কি করলেন, কোথায় গেলেন, কেমন করে পেলেন এ জীবন আর গুরুর আশ্রয়?
Sri
Ramakrishna
|
প্রাচীন সাধুদের কথা _– ঘর ছেড়ে বেরনোর পর কি করলেন,
কোথায় গেলেন,
কেমন করে পেলেন এ জীবন আর গুরুর আশ্রয়?
বছর
ষোলোর মেয়েটির পেটে বাচ্চা
এল।
বন্ধুটির বাবা ছিল গ্রামের
মধ্যে সবচেয়ে অবস্থাপন্ন।
সম্মান বাঁচাতে বন্ধুটি
অবাঞ্ছিত এই ঘটনার দায় অস্বীকার
করল।
ওদের সামাজিক প্রভাব
প্রতিপত্তি এতটাই প্রবল যে,
- মেয়েটির স্বীকারোক্তি উড়িয়ে দিয়ে সম্পূর্ণ দায়টা চাপিয়ে দিল আমার উপর,
- যেহেতু যাতায়াত ছিল ওদের বাড়িতে,
- সম্পর্ক ছিল মধুর।
ফলে একদিন মেয়েটির
ইচ্ছার বিরুদ্ধে বন্ধুর বাবা
গ্রামবাসীদের সঙ্গে জোট বেঁধে
আমাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিল
সেই অন্তঃসত্ত্বা মেয়েটির
সঙ্গে।
এই বিয়ের পর লজ্জায় ও
ঘৃণায় মেয়েটির দেহ তো স্পর্শ
করিইনি,
মনের
মধ্যে সংসারের প্রতি একটা
বিতৃষ্ণা,
ক্রোধ
জন্মে গেল।
ভাবলাম,
সংসারে
থাকলে এই অযাচিত গ্লানি ও
অসম্মানের বোঝা বয়ে নিয়ে
বেড়াতে হবে আমৃত্যু।
এইভাবে
আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে
বাবা মা ভাই বোন আর পাড়া
প্রতিবেশীদের কাছে বেঁচে
থাকাটা মৃত্যুরই সমান।
মাথা
তুলে জীবনে চলতে পারব না।
তাই
মনেমনে ঠিক করলাম,
এ
শালার সংসারে আর কিছুতেই থাকব
না।
দুচোখ যেদিকে যায় সে দিকেই
চলে যাব।
Sri
Ramakrishna
|
সাধু
হব এসব এক মুহুর্তের জন্য
ভাবিনি জীবনে,
যখন
ঘর ছেড়েছিলাম তখনও না।
বিয়ের
ঠিক দুদিনের দিন গভীর রাতে
পালালাম বাড়ি ছেড়ে।
অপরাধ না
করেও অপরাধীর মতো।
বুঝলি বেটা,
এই
হল আমার গৃহত্যাগের কথা।
সংসারে নিরপরাধ হয়ে মানুষ যে
কত ভাবে,
কত কষ্টপাচ্ছে আর এ যে ভগবানের
কত বিচিত্র খেলা তা আজও বুদ্ধিতে
এল না।
বেটা আমি বেরিয়ে পরেছিলাম
বলে আজ শান্তিতে আছি।
কিন্তু
বিনাদোষে দোষী হয়ে যারা সংসারে
আছে তাদের মানসিক যন্ত্রণার
কথা ভাবলে গা-টা
আমার আজও শিউড়ে ওঠে,
কারণ
আমি একজন ভুক্তভোগী।
একটানা
বলে বৃদ্ধ একটু থামতেই বললাম,
Sri
Ramakrishna
|
– ঘর
ছেড়ে বেরনোর পর কি করলেন,
কোথায়
গেলেন,
কেমন
করে পেলেন এ জীবন আর গুরুর
আশ্রয়?
বৃন্দাবনে দেহটাকে
রেখে মনটাকে নিয়ে গেলেন ফেলে
আসা সুদূর অতীতে।
বললেন,
– ওই
দিন রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে
হাঁটতে হাঁটতে এলাম স্টেশনে।
দেওঘর থেকে সোজা যশিডি।
তারপর
ট্রেন ধরে একেবারে মোঘলসরাই।
ওখান থেকে বেনারস।
বেনারসে
এসে খাওয়ার অভাব হল না।
দীপাবলির
পর সেই সময় চলছিল অন্নকূট
উৎসব।
কয়েকদিন আহার জুটে গেল।
এই সময়েই পেয়ে গেলাম এক সাধুবাবার
আশ্রয়।
তাঁকে জানালাম আমার
সমস্ত কথা।
তিনি থাকেন
গঙ্গোত্রীতে।
এসেছিলেন অন্নকূট
উৎসবে।
তার কথামতো সেই সময়
আমি জামাকাপড় ছেড়ে একটা চেলি
পরে চেলা বনে গেলাম সাধুবাবার।
অবশ্য দীক্ষা আমার অনেক পরেই
হয়েছিল।
Sri
Ramakrishna
|
একটা
দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে তাকালেন
আমার মুখের দিকে।
ভাবটা এমন
তখন আমায় আর পায় কে?
কোনও
কথা বললাম না।
সাধুবাবা বললেন,
– অন্নকূট
উৎসব শেষ হতে আমি আর সাধুবাবা
বেনারস থেকে চলে গেলাম
বিন্ধ্যাচলে।
ওখানে থাকলাম
কয়েকদিন।
তারপর রওনা দিলাম
গঙ্গোত্রীর পথে।
তখন যেমন
ঠান্ডা তেমনই সে বার অসম্ভব
বরফ পড়ছিল পাহাড়ে।
আমরা ধরাসুর
পর আর এগোতে পারলাম না।
কয়েক
মাস ওখানে থাকার পর বরফ পড়া
বন্ধ হল,
ঠান্ডা
কমল।
যাওয়ার পথ সুগম হলে গেলাম
গঙ্গোত্রীতে।
ওখানে আমি আর
সাধুবাবা থাকতাম একটা পাহাড়ি
গুহায়।
আগে সাধুবাবা ওখানেই
থাকতেন।
তারপর একদিন এক শুভক্ষণে
দীক্ষা হল গঙ্গোত্রীতে।
সেই
সাধুবাবা তখন থেকে হলেন আমার
পরমধন গুরুজি।
No comments