প্রাচীন সাধুদের কথা _শ্রীরামকৃষ্ণ-একজন লেবাসবিহীন সাধু
প্রাচীন সাধুদের কথা _শ্রীরামকৃষ্ণ-একজন লেবাসবিহীন সাধু
Sri
Ramakrishna
|
শ্রীরামকৃষ্ণ-একজন লেবাসবিহীন সাধু
শ্রীরামকৃষ্ণদেব
ছিলেন প্রকৃত সাধু।
সাধু কেমন
করে চেনা যায় একজন প্রতিবেশীর
এমন প্রশ্নের উত্তরে শ্রীরামকৃষ্ণদেব
বলেছিলেন,
“যার
মন প্রাণ অন্তরাত্মা ঈশ্বরে
গত হয়েছে তিনিই সাধু।
যিনি
কামিনী-কাঞ্চনত্যাগী,
তিনিই
সাধু ।...
সাধু
সর্বদা ঈশ্বরচিন্তা করেন,
ঈশ্বরীয়
কথা বই কথা কন না।
আর সর্বভূতে
ঈশ্বর আছেন জেনে তাদের সেবা
করেন।
স্বয়ং তিনি ছিলেন সকল
দৃষ্টান্তের মূর্তিমান বিগ্রহ।
পন্ডিত ও সাধুর শিক্ষার পার্থক্য
হলাে পন্ডিতের সব কিছুই
বাক্-সর্বস্ব।
তিনি বলেন এক,আর
করেন আর এক।
Sri
Ramakrishna
|
বেশীর
ভাগ ক্ষেত্রে যা বলেন তার
উল্টোটিই করে থাকেন।
এদের
দ্বারা সমাজ বা প্রতিষ্ঠানের
অকল্যাণই বেশী হয়ে থাকে।
এরা অনেক সুন্দর চেহারার
অধিকারী হতে পারেন,
বিদ্বান,
বুদ্ধিমান
হতে পারেন,
বা
চাতুরীর দ্বারা মানুষকে
সাময়িক ক্ষণকালের জন্য
প্রভাবিত করতে পারেন কিন্তু
তা মানুষের হৃদয়ে গভীর রেখাপাত
করে না।
মানব চরিত্রের উপর
প্রভাব বিস্তার করতে অক্ষম।
শ্রীরামকৃষ্ণদেব যেমন বলতেন,
- “যার কাছে গুড়ের নাগরি আছে,
- সে যদি রােগীকে বলে,
- ‘গুড় খেয়াে না,
- রােগী তার কথা তত শুনে না।
Sri
Ramakrishna
|
” শ্রীরামকৃষ্ণদেব
বলতেন,
‘চিল
শকুনি খুব উচুতে উঠে,
কিন্তু
ভাগাড়ের দিকে কেবল নজর!
পন্ডিত
অনেক বই শাস্ত্র পড়েছে শােলক
ঝাড়তে পারে,
কি
বই লিখেছে;
কিন্তু
মেয়ে মানুষে আসক্ত,
টাকা,
মান
সারবস্তু মনে করেছে;
সে
আবার পন্ডিত কি?
“...শুধু পান্ডিত্যে মানুষকে ভােলাতে পারবে, কিন্তু তাঁকে পারবে না।”
পন্ডিত
অর্থের জন্য,
নাম
যশের জন্য ভাগবত পাঠ অর্থাৎ
ধর্মালােচনা করে থাকেন।
শ্রীরামকৃষ্ণদেব এসব পন্ডিতদের
পাঠ-আলােচনা
নকল করে তার অন্তরঙ্গ ভক্তদের
দেখাতেন।
নামের আগে কিম্ভুতকিমাকার
একটা বিশেষণ লাগিয়ে ভক্তদের
উদ্দেশ্য আশীর্বানী দেন।
ওদের বক্তব্যে নিজেদের অন্তরের
দীনতাই প্রকাশিত হয়।
Sri
Ramakrishna
|
ঠাকুর
দেবতার স্থলে তাদেরকেই ভক্তরা
পূজা করুক এটা তাদের আন্তরিক
অভিলাষ।
শুধু তাই নয়,
ঈশ্বরলাভ
অনেক আগেই হয়ে গেছে শুধু
ভক্তের কল্যাণেই শরীর রক্ষা
করতে হচ্ছে এটি আকার ইঙ্গিতে
বুঝিয়ে দিতে ভুল করেন না।
শরীর রক্ষা’ ‘শরীর ধারণ’ বেশ
কিছু সুন্দর সুন্দর শব্দ তাদের
মুখ থেকে প্রায়ই শােনা যায়।
আবার পাপ,
দুর্বলতা
ও পারিপার্শ্বিক কারণে শরীর
অসুস্থ হলে বলেন-শরীরের
যত রােগ ব্যাধি সবই তাে ভক্তদের
পাপতাপ টেনে নিয়ে এ শরীরের
মাধ্যমে ভােগ করতে হচ্ছে।
যেন পূর্ণব্রহ্ম নারায়ণ,
দয়ায়
শরীর গ্রহণ!
হরে
কৃষ্ণ!
স্বামী
বিরজানন্দ মহারাজ বলছেন-...‘অবতাররা
অন্যের পাপের ভার নেন,
তাঁদেরও
সেইজন্য রােগ-ভােগ
করতে হয়।
পােশাক-আশাকের
চিত্র বিচিত্রতাও চোখে পড়ার
মতাে।
এদের পােশাকী সাধুতা
সাধারণ জনগণকে সহজে আকৃষ্ট
করে,
মানুষের
আবেগ অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে
প্রতারিত করে সহজেই।
এরা
পরনিপীড়নকারী।
সৎ লােক
ব্যতিব্যস্ত করে না,
মিথ্যাকষ্ট
দেয় না।
নদের নিমাইর মতাে
বেশভূষা-চেহারা
দেখে ভয়-সম্ভ্রমের
কারণে মানসিক পীড়ন ও নানাবিধ
অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করেন
সমাজের সাধারণ জনগণ।
নামযশ
প্রতিষ্ঠাভিলাসী ও ধূর্ত
পরপীড়নকারী এসব পােশাকী
সাধুদেরই আজ জয় জয়কার।
সাধারণ মানুষও এসব লেবাস
দেখতেই বেশী ভালবাসেন।
পােশাক
দেখে অভ্যস্ত এসব সাধারণ ভক্ত
পােশাকই দেখেন,
পােশাকের
ভেতরের মানুষটিকে দেখতে চেষ্টা
করেন না।
এই সুযােগটিই লেবাসধারী
সাধুরা লুফে নেয়,
সমাজে
অনর্থ সৃষ্টি করে।
পৃথিবীর
কোন ধর্মেই এদের অভাব নেই।
দিনদিন বেড়েই চলেছে।
আসলে
সহজেই নাম-যশ,
সহজেই
প্রতিষ্ঠা কেনা চায়।
শ্রীরামকৃষ্ণের তীক্ষ্ণ
অনুসন্ধানী দৃষ্টি থেকে এসকল
এড়িয়ে যেতে পারেনি।
দক্ষিণেশ্বরে
সাধনকালে এরকম বহু লেবাসধারী
সাধু,
- বৈষ্ণব,
- বাবাজী,
- বেদান্তীর সংস্পর্শে
তিনি এসেছেন;
দেখেছেন
খুব কাছে থেকে এবং অনুভব
No comments