প্রাচীন সাধুদের কথা _শ্রীরামকৃষ্ণ-একজন লেবাসবিহীন সাধু
প্রাচীন সাধুদের কথা _শ্রীরামকৃষ্ণ-একজন লেবাসবিহীন সাধু
Sri
Ramakrishna
|
করেছেন
তাদের আধ্যাত্মিক দৈন্য।
তিনি এক কপট বেদান্তী সাধুকে
বিদ্রুপ করে বলেছিলেন-
“তাের
অমন বেদান্তজ্ঞানে আমি মুতে
দি!
আসলে
কলিকালে অধিকাংশ মানুষের
স্বভাব কেমন হবে তা অনেক পূর্বেই
শুকদেব ভাগবতে বর্ণনা করেছেন-
“বিত্তমেব
কলৌ নৃণাং জন্মাচার গুণােদয়ঃ।
ধর্মন্যায়-ব্যবস্থারাং
কারণংবলবেম হি”
-
কলিকালে
ধনের উপরই মানুষের জন্ম,
গুণ
এবং আচারের উৎকর্ষ নির্ভর
করবে;
বাহুবলই
ধর্ম,
ন্যায়
নীতির নিয়ন্তা হবে।
স্ত্রী
পুরুষের আকর্ষণেই বিবাহ হবে-
এতে
- কুল,
- শীল,
- শিক্ষা,
- ব্যবহারের
কোন প্রভাব থাকবে না।
ব্যবসাতে
প্রবঞ্চনা প্রাধান্যলাভ
করবে।
কেবলমাত্র যজ্ঞসূত্র
থাকলেই লােক ব্রাহ্মণ বলে
পরিচিত হবে।
বেশী কথা বলতে
পারলেই লােক পন্ডিত বলে গণ্য
হবে।
দম্ভ প্রকাশেই সাধুত্বের
লক্ষণ প্রমানিত হবে।
নাম যশের
জন্য ধর্মের আচরণ করা হবে।
এমন পরিস্থিতিতে প্রকৃত সাধু
সন্ত কেমন হবে তা শ্রীমদ্ভগবদ্
গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ
বলেছেন-
“জ্ঞেয়ঃ
স নিত্যসন্ন্যাসী যাে ন দ্বেষ্টি
ন কাভক্ষতি।
নির্দ্বন্দো হি
মহবাহাে সুখংবন্ধাৎ প্রমুচ্যতে।।”
৭ -
তাঁকেই
নিত্যসন্ন্যাসী বলে জানবে,
যিনি
রাগদ্বেষ রহিত,
কারণ
হে মহাবাহাে,
যিনি
দ্বন্দ্বমুক্ত,
তিনিই
সহজে সংসার বন্ধন থেকে মুক্ত
হন।
Sri
Ramakrishna
|
ভগবান
শ্রীকৃষ্ণ বলতে চেয়েছেন এই
গুণগুলি যার মধ্যে রয়েছে
তিনিই সন্ন্যাসী।
সেই ব্যক্তি
বনেই থাকুক আর আশ্রমেই থাকুক
তা ভাবনার বিষয় নয়।
শ্রীকৃষ্ণের
মতে,
যে
বিমূৰ্ট ব্যক্তি কর্মেন্দ্রিয়
পাঁচটি সংযত রেখে মনে মনে
ইন্দ্রিয়ের বিষয় সকল স্মরণ
করেন তিনি মিথ্যাচারী।
সন্ন্যাসী
হচ্ছে আমাদের মনটি যা আমরাই
কর্ম ও সাধনার মাধ্যমে গড়ে
তুলি।
পবিত্রতা আর নিঃস্বার্থপতাই
এর মূল এবং প্রধান ভিত্তি।
শাস্ত্রমতে আধ্যাত্মিক জীবনে
সন্ন্যাসীর যেমন স্থান আছে,
গৃহস্থেরও
তেমনি স্থান আছে।
কর্মযােগের
একটি অধ্যায়ে সন্ন্যাসী আর
গৃহস্থ প্রসঙ্গে আলােচনা করে
স্বামীজী বলেন যে মানুষ ভিন্ন
ভিন্ন পথ দিয়ে তার চরমলক্ষ্যে
পৌঁছায়।
পথগুলি ভিন্ন ভিন্ন
হলেও লক্ষ্যটি ভিন্ন নয়।
লক্ষ্য একই,
একই
জায়গায় উভয়েই পৌছায়,
কেবল
চলবার সময় তাদের পথটা ভিন্ন
ভিন্ন দেখায়।
অনেক গৃহস্থদের
মধ্যে এক ধরনের হীনম্মন্যতা
কাজ করে।
আমরা গৃহস্থ,
আমরা
পাপী,
আমরা
নিকৃষ্ট।
Sri
Ramakrishna
|
শ্রীরামকৃষ্ণদেব
সকলের ভেতর থেকে এসব হীনম্মন্যতা,
দুর্বলতা
দূর করে আত্মশ্রদ্ধা জাগাতে
এসেছিলেন।
যিনি নিজে মহান
তিনি সকলকেই মহান দেখে থাকেন
আর যিনি নিজে নিকৃষ্ট তিনি
সকলকে তাই ভাবেন।
অপরদিকে
পন্ডিত বাবুদের শিক্ষা ঠিক
তার বিপরীত।
ছল-চাতুরী
করে অপরের কাছ থেকে প্রভুত্ব
লাভ করাই তাদের লক্ষ্য।
স্বামী
বিবেকানন্দ এক পত্রে লিখেছেনঃ
“শ্রীরামকৃষ্ণদেবের সান্নিধ্যে আমরা এক অতুল ঐশ্বর্যের অধিকারী হইয়াছি, কেবল বাক্-সর্বস্ব না হইয়া যথার্থ জীবন যাপনের জন্য একটা ঐকান্তিক ইচ্ছা ও বিরামহীন সাধনার অনুপ্রেরণা তাহার নিকট আমরা লাভ করিয়া ছিলাম।”
শ্রীরামকৃষ্ণ কোন
বুজরুকিতে ছিলেন না,
কোন
অলৌকিকতা দেখাননি বরং অলৌকিকতাকে
বেশ্যার বিষ্ঠার সাথে,
বার
বছর তপস্যা করে নদীর উপর দিয়ে
হেটে যাওয়াকে এক পয়সায়
নদী পার হওয়ার সাথে তুলনা
করে চরম অবজ্ঞা করতেন।
ধর্ম
জগতের মানুষের নিকট যা প্রচন্ড
গর্বের বস্তু শ্রীরামকৃষ্ণ
তাকে বিদ্রুপ করতেন।
তাঁর
সন্ন্যাসের কোন বাহ্য চিহ্ন
ছিল না,
অথচ
বাহ্যিক রূপ ও পােশাক আশাকের
ব্যাপারে হিন্দু সাধু খুবই
সচেতন।
তারা গেরুয়া এবং
বিভিন্ন কালারের কাপড় চোপড়ও
পরেন,
খাবার
দাবারের ব্যাপারেও বিভিন্ন
নিয়ম কানুন মেনে চলেন।
শ্রীরামকৃষ্ণের ক্ষেত্রে
এসব কিছুই দেখতে পাইনা।
বাহ্যিক
লেবাসের কোন তােয়াক্কাই
তিনি করতেন না।
শ্রীরামকৃষ্ণের
ছবি দেখলে তা সহজেই বুঝা যায়।
তিনি কাপুড়ে সাধু,
লেবাসধারী
সাধু জীবনে বহু দেখেছেন,
দেখে
বিরক্ত হয়ে তিনি এ সকল পরিহার
করেছেন।
যদিও গর্ভধারীনী
মায়ের দুঃখ লাঘবও এর একটা
কারণ ছিল।
তিনি বলতেন,
“মিথ্যা কিছুই ভাল নয়। মিথ্যা ভেক
No comments