শ্রীশ্রীমায়ের বাড়িতেই কৃপালাভে ধন্য_স্বর্ণকুমারী দেবী
ঠাকুর মাকে বলেছিলেন ঃ- তুমি যাদের আশ্রয় দেবে অন্তিমকালে তাদের আমি নিজে এসে নিয়ে যাব।
Sri Ramakrishna |
স্বর্ণকুমারী দেবী [স্বর্ণকুমারী দেবী বৃহত্তর কুমিল্লার ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলার শ্যামগ্রামে বসবাস করেন।
তাঁর স্বামী উপেন্দ্রচন্দ্র রায়ও শ্রীশ্রীমায়ের কৃপাপ্রাপ্ত ছিলেন।
পরবর্তিকালে চাকরিসূত্রে বিহারের পাটনায় থাকতেন।
এঁরা ১৯১৮ সনে বাগবাজারে শ্রীশ্রীমায়ের বাড়িতেই কৃপালাভে ধন্য হন।
আমার স্বামীর নাম উপেন্দ্রচন্দ্র রায়।
আমাদের আদি নিবাস পূর্ববঙ্গে (বাংলাদেশ)।
আমরা তখন রাঁচীতে থাকি।
সেখানে বেশ কয়েকজন বাঙালিকে চিনতাম যারা ছিলেন বেলুড় মঠের ভক্ত।
সেই যােগাযােগের সূত্রে বাগবাজারে মায়ের বাড়িতে আমি এবং আমার স্বামী এসে শ্রীশ্রীমাকে দর্শন করি এবং দীক্ষা প্রার্থনা করি।
শ্রীশ্রীমা কৃপা করে আমাদের প্রার্থনা মঞ্জুর করেছিলেন।
বাগবাজারে শ্রীশ্রীমায়ের বাড়িতেই আমাদের দীক্ষা হয়েছিল।
দীক্ষার সালতারিখ ঠিক মনে নেই।
মনে হয় ১৯১৮ সনে আমাদের দীক্ষা হয়েছিল।
মায়ের সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলার বিশেষ সুবিধা হয়নি,
দীক্ষার সময়েই মায়ের সঙ্গে যতটুকু কথা হয়েছিল।
তবে একদিনের কথা মনে পড়ে।
শ্রীশ্রীমায়ের বাড়িতে মাকে দর্শন করতে গিয়েছি।
শ্রীশ্রীমায়ের ঘরে মেয়েরা অনেকে বসেছিলেন।
আমি শ্রীশ্রীমাকে প্রণাম করে একপাশে গিয়ে বসলাম।
আমার তখন বয়স অল্প এবং তখনকার দিনের গৃহবধূ।
স্বভাবতই আমি সেখানে কোন কথা বলছিলাম না, শুধু শ্রীশ্রীমার কথা শুনছিলাম।
শ্রীশ্রীমা কি বলছিলেন তা মনে নেই, শুধু মনে আছে মার গলার স্বর ছিল খুব মিষ্টি এবং কথা বলছিলেন আস্তে আস্তে, মৃদু কণ্ঠে।
শ্রীশ্রীমায়ের মাথায় ছিল খুব সুন্দর একরাশ রেশমের মতাে কালোচুল।
খুব ইচ্ছে করছিল-শ্রীশ্রীমায়ের চুলে যদি একটু হাত দিতে পারতাম ! জানতাম, তা অসম্ভব।
আমার অত সাহস ছিল না যে শ্রীশ্রীমার কাছে আমার মনের ইচ্ছে প্রকাশ করব।
কিন্তু কী আশ্চর্য ! আমার যখন মনে এই চিন্তা চলছে, তখন হঠাৎ শ্রীশ্রীমা আমার দিকে চেয়ে আমাকে কাছে ডাকলেন।
আমি তাে ভয় পেয়ে গিয়েছি।
যাই হােক, শ্রীশ্রীমার কাছে যেতে শ্রীশ্রীমা পরম স্নেহে বললেন ঃ
“মাথাটা চুলকোচ্ছে, মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দাও তাে মা।”
বুঝলাম, যা জগজ্জননী-অন্তর্যামিনী।
সকলের মনের কথা শ্রীশ্রীমা জানতে পারেন।
আরেকটা কথা বলি।
আমার স্বামী তখন অন্তিম শয্যায়।
হঠাৎ বললেন ঃ
ঠাকুর আমায় নিতে এসেছেন, তােমরা কেঁদো না আমি যাচ্ছি।
বলতে বলতেই চোখ বুজলেন।
তারিখটি ছিল ১৯৩৭ সনের ১ জুলাই।
পরবর্তিকালে শুনেছিলাম,
ঠাকুর শ্রীশ্রীমাকে বলেছিলেন ঃ-
তুমি যাদের আশ্রয় দেবে অন্তিমকালে তাদের আমি নিজে এসে নিয়ে যাব।
আমার স্বামীর ক্ষেত্রে দেখলাম ঠাকুরের অঙ্গীকার তিনি রক্ষা করেছেন।
দীক্ষার কয়েক বছর পর আমার পুত্রের জন্ম হয়।
No comments