শ্রীশ্রীমায়ের নিকট মন্ত্রদীক্ষা _সরযূবালা সেন
কোটি কামনায় জড়িত মানুষ আমরা ঐ দেববাণীর মর্ম কি বুঝব ?
(সরযূবালা সেন বৃহত্তর ফরিদপুরের গােপালগঞ্জ জেলার খান্দারপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। পুরােনাম সরযূবালা সেনগুপ্ত। ১৩১৮ সনে উদ্বোধনে শ্রীশ্রীমায়ের নিকট মন্ত্রদীক্ষা লাভ করেন। সরযুবালার ছােটবােনের নাম সুমতিৰালা। সুমতিবালার স্বামীর নাম শােকহরণ দাশগুপ্ত। এঁরাও শ্রীশ্রীমায়ের কৃপাপ্রাপ্ত। শােকহরণের পৈত্রিক নিবাসও একই গ্রামে ছিল। পরবর্তিকালে তারা কোলকাতায় বসবাস করতেন। সরযূবালা শেষ বয়সে কাশীতেই বাস করতেন।]
প্রথম দর্শন—১৩১৭
কোলকাতা পটলডাঙার বাসায় শুক্রবার সকালে শ্রীমান—বলে গেল,
কাল শনিবার মায়ের শ্রীচরণদর্শন করতে যাব ; আপনি তৈরি হয়ে থাকবেন।
কাল তবে মায়ের দর্শন পাব ! সারা রাত আমার ঘুমই এলাে না।
আজ ১৩১৭ সাল,
প্রায় চৌদ্দ-পনর বৎসর হয়ে গেল কোলকাতায় আছি,
- এত কাল পরে মায়ের দয়া হলাে কি ?
- এত দিনে কি সুযােগ মিলল ?
পরদিন বিকালে গাড়ি করে সুমতিকে ব্রাহ্ম বালিকা বিদ্যালয় হতে নিয়ে শ্রীশ্রীমায়ের শ্রীচরণদর্শন করতে চললুম।
কি আকুল আগ্রহে গিয়েছিলুম, তা ব্যক্ত করার ভাষা জানি না ! গিয়ে দেখি মা বাগবাজারে তাঁর বাড়িতে ঠাকুরঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।
এক পা চৌকাঠের উপর, অপর পা পাপােশখানির ওধারে ; মাথায় কাপড় নেই, বাঁ হাতখানি উঁচু করে দরজার উপর রেখেছেন, ডান হাতখানি নিচুতে, গায়েরও অর্ধাংশে কাপড় নেই, একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন।
গিয়ে প্রণাম করতেই পরিচয় নিলেন।
সুমতি বললে, 'আমার দিদি।'
সে পূর্বে ক’দিন গিয়েছিল ; তখন মা একবার আমার দিকে চেয়ে বললেন,
এই দেখ মা, এদের নিয়ে কি বিপদে পড়েছি।ভাই-এর বউ, ভাইঝি, রাধু, সব জ্বরে পড়ে। কে দেখে, কে কাছে বসে, ঠিক নেই। বস আমি কাপড় কেচে আসি।
আমরা বসলুম। কাপড় কেচে এসে দু'হাত ভরে জিলিপি-প্রসাদ এনে দিয়ে বললেন,
বৌমাকে (সুমতি) দাও, তুমিও নাও।
সুমতিকে শীঘ্র স্কুলে ফিরতে হবে, তাই সেদিন একটু পরেই প্রণাম করে বিদায় নিলুম।
মা বললেন, “আবার এস।' এই পাঁচ মিনিটের জন্য দেখা, আশা মিটল না ! অতৃপ্ত প্রাণে বাসায় ফিরলুম।
শ্রীশ্রীমা সেদিন বলরামবাবুর বাড়ি গিয়েছিলেন।
আমি তার বাগবাজারের বাড়িতে গিয়ে একটু অপেক্ষা করতেই মা ফিরলেন।
প্রণাম করে উঠতেই হাসিমুখে জিজ্ঞেস করলেন,
কার সঙ্গে এসেছ ?
কার সঙ্গে এসেছ ?
আমি বললুম, আমার এক ভাগ্নের সঙ্গে।
মা ঃ ভাল আছ ?
বৌমা ভাল আছে ?
এত দিন আসনি–ভাবছিলুম অসুখ করল না কি।
বৌমা ভাল আছে ?
এত দিন আসনি–ভাবছিলুম অসুখ করল না কি।
বিস্মিত হয়ে ভাবলুম একদিন মাত্র পাঁচ মিনিটের দেখা, তাতে মা আমাদের কথা মনে করেছেন ! ভেবে আনন্দে চোখে জলও এলাে।
মা ঃ (আমার পানে সস্নেহে চেয়ে) তুমি এসেছ, তাই ওখানে (বলরামবাবুর বাড়িতে) বসে আমার মন চঞ্চল হয়ে উঠেছিল।
আমি একেবারে অবাক হয়ে গেলুম !
মায়ের একটি শিশু ভাইপাের (ক্ষুদের) জন্য সুমতি দুটি পশমের টুপি দিয়েছিল, মাকে তা দিতে এ সামান্য জিনিসের জন্য কতই খুশি হলেন।
তক্তপােশের উপর বসে বললেন,
“বস এখানে, আমার কাছে।”
—পাশেই বসলুম, মা আদর করে বললেন,
“তােমাকে যেন মা, আরও কত দেখেছি—যেন কত দিনের জানাশােনা!”
আমি বললুম, “কি জানি, মা, একদিনতাে কেবল পাচ মিনিটের জন্য এসেছিলুম।”
শ্রীশ্রীমা হাসতে লাগলেন ও আমাদের দুই বােনের অনুরাগ-ভক্তির অনেক প্রশংসা করলেন।
আমরা কিন্তু ঐ সকল কথার কতদূর যােগ্য তা জানি না।
ক্রমে ক্রমে অনেক স্ত্রী-ভক্ত আসতে লাগলেন।
ভক্তি-বিগলিত চিত্তে সকলেই শ্রীশ্রীমায়ের হাসিমাখা স্নেহভরা মুখখানির পানে একদৃষ্টে চেয়ে আছেন, ওরূপ দৃশ্য আমি আর কখনাে দেখিনি।
মুগ্ধ হয়ে তাই দেখছি, এমন সময় বাসায় ফিরবার তাগিদ এলাে—গাড়ি এসেছে।
শ্রীশ্রীমা তখন উঠে প্রসাদ দিয়ে ‘খাও খাও’ করে একেবারে মুখের কাছে ধরলেন।
অত লােকের মধ্যে একলা অমন করে খেতে আমার লজ্জা হচ্ছে দেখে বললেন, “লজ্জা কি ? নাও।”
অত লােকের মধ্যে একলা অমন করে খেতে আমার লজ্জা হচ্ছে দেখে বললেন, “লজ্জা কি ? নাও।”
তখন হাত পেতে নিলুম।
“তবে আসি, মা”, বলে প্রণাম করে বিদায় নেবার সময় বললেন, “এস মা, এস, আবার এস।
- একলা নেমে যেতে পারবে তাে ?
- আমি আসব ?”
এ বলে সঙ্গে সঙ্গে সিঁড়ি পর্যন্ত এলেন।
তখন আমি বললুম,
আমি যেতে পারব, মা। আপনি আর আসবেন না ।
শ্রীশ্রীমা তাই শুনে বললেন, “আচ্ছা, একদিন সকালে এস।”
পরিপূর্ণ প্রাণে ফিরলুম। ভাবলুম—এ কি অদ্ভুত স্নেহ !
আজ গিয়ে প্রণাম করতেই শ্রীশ্রীমা বললেন, “এসেছ মা, আমি মনে করছি কি হলাে গাে, কেন আসে না।
এতদিন আসনি কেন ?”
আমি বললুম, “এখানে ছিলুম না, মা, বাপের বাড়ি গিয়েছিলুম।
” শ্রীশ্রীমা ঃ বৌমা (সুমতি ) আসে না কেন ?
পড়াশুনার চাপে?
আমি ঃ না, ভগ্নীপতি এখানে ছিলেন না।
মা ও তা, ও তাে স্কুলে যাচ্ছে ; আচ্ছা,
ওরা সংসার-ধর্ম করে তাে ?
আমি বললুম,
কাকে বলে সংসার, কাকে বলে ধর্ম, তা কি জানি মা-আপনিই জানেন।
শ্রীশ্রীমা একটু হাসলেন।
মা ও কি গরম পড়েছে !' বলে বাতাস খেতে পাখাখানা হাতে দিয়ে বললেন, “আহা, দুটো ভাত খেয়েই ছুটে আসছ—এখন আমার কাছে একটু শােও।”
মাকে নিচে মাদুর পেতে দিয়েছে।
তার বিছানায় শুতে সঙ্কুচিত হচ্ছি।
দেখে বললেন, “তাতে কি মা, শােও আমি বলছি শােও।”
অগত্যা শুলুম।
শ্রীশ্রীমার একটু তন্দ্রা আসছে দেখে চুপ করে আছি এমন সময় দুই-একটি স্ত্রী-ভক্ত এবং শেষে দুজন সন্ন্যাসিনী এলেন।
একজন প্রৌঢ়া, অপরটি যুবতী।
মা চোখ বুজেই বলছেন,
“কে গাে মা, গৌরদাসী এলে ?”
যুবতী বললেন, “আপনি কি করে জানলেন, মা ?”
শ্রীশ্রীমা বললেন, ‘টের পেয়েছি।
কিছুক্ষণ পরে উঠে বসলেন।
যুবতী বললেন, “বেলুড় মঠে গিয়েছিলুম।
যুবতী সিন্দুর পরেননি দেখে শ্রীশ্রীমা তাঁকে একটু বকলেন।
পরে শ্রীশ্রীমায়ের কাছে আমার পরিচয় নিয়ে গৌরীমা একদিন তাদের আশ্রমে আমাকে যেতে বলে বললেন,
“সেখানে প্রায় ৫০/৬০ জন মেয়েকে শিক্ষা দেওয়া হয়। তুমি সেলাই জান ?”
আমি সামান্য কিছু জানি’ বলাতে তিনি তাঁর আশ্রমের মেয়েদের তাই শিখিয়ে আসতে বললেন।
মায়ের আদেশ নিয়ে গৌরীমার আশ্রমে একদিন গেলুম।
তিনি খুব স্নেহ-যত্ন করলেন এবং প্রত্যহ দু’এক ঘণ্টা করে এসে মেয়েদের পড়িয়ে যেতে অনুরােধ করলেন।
আমি বললুম, “এই সামান্য শিক্ষা নিয়ে শিক্ষয়িত্রী হওয়া বিড়ম্বনা।
ক, খ পড়াতে বলেন তাে পারি।”
গৌরীমা কিন্তু একেবারে নাছােড়। অগত্যা স্বীকৃত হয়ে আসতে হলাে।
একদিন স্কুলের ছুটি হলে গৌরীমার আশ্রম হতে শ্রীশ্রীমায়ের শ্রীচরণদর্শন করতে গেলুম।
গ্রীষ্মকাল।
সেদিন একটু পরিশ্রান্তও হয়েছিলুম।
দেখি, মা একঘর স্ত্রী-ভক্তের মধ্যে বসে আছেন।
আমি গিয়ে প্রণাম করতেই মুখপানে চেয়ে মশারির উপর হতে তাড়াতাড়ি পাখাখানি নিয়ে আমায় বাতাস করতে লাগলেন।
ব্যস্ত হয়ে বললেন, “শিগগির গায়ের জামা খুলে ফেল, গায়ে হাওয়া লাগুক।”
কি অপূর্ব স্নেহ-ভালবাসা ! অত লােকের মধ্যে এত আদর-যত্ন ! আমার ভারি লজ্জা করতে লাগল—সবাই চেয়ে দেখছিল ; মা নিত্যান্ত ব্যস্ত হয়েছেন দেখে জামা খুলতেই হলাে।
আমি যত বলি, “পাখা আমাকে দিন, আমি বাতাস খাচ্ছি”, ততই স্নেহভরে বলতে লাগলেন, “তা হােক, হােক ; একটু ঠাণ্ডা হয়ে নাও!” তারপর প্রসাদ ও এক গ্লাস জল এনে খাইয়ে তবে শান্ত হলেন ! স্কুলের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, তাই দু-একটি কথা কয়েই সেদিন ফিরতে হলাে।
১৮ শ্রাবণ, ১৩১৮
আজ সকালে কিছু জিনিসপত্র নিয়ে দীক্ষা নেবার আকাঙ্ক্ষায় গেলুম।
কি কি দ্রব্যের দরকার হয় তা গৌরীমার নিকট জেনে তাঁকেও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলুম।
মায়ের বাড়ি গিয়ে দেখি-মা তগতচিত্তে ঠাকুরপূজা করছেন, আমরা যাবার একটু পরে চেয়ে ইঙ্গিতে বসতে বললেন।
পূজা শেষ হলে গৌরীমা আমার দীক্ষার কথা বললেন।
পূর্বে মার সঙ্গে একদিন আমারও ঐ বিষয়ে কথা হয়েছিল।
মর্তমান কলা নিয়ে গেছি, মা দেখে বললেন, “এই যে মৰ্তমান কলা এনেছ। (একজন সাধুর নাম করে) সে কলা খেতে চেয়েছিল, বেশ করেছ।”
পরে বললেন, “ঐ আসনখানা নিয়ে আমার বাঁদিকে এসে বস।”
আমি বললুম, “গঙ্গাস্নান তাে করা হয়নি।” মা ও তা হােক।
কাপড়চোপড় তাে ছেড়ে এসেছ ?
কাছে বসলুম।
বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ করতে লাগল।
মা তখন ঘর হতে সবাইকে বেরিয়ে যেতে বললেন।
তারপর জিজ্ঞেস করলেন, “স্বপে কি পেয়েছ বল।”
আমি বললুম,
“লিখে দেব, না মুখে বলব ?”
মা ও মুখেই বল।
দীক্ষার সময় শ্রীশ্রীমা স্বপ্নে প্রাপ্ত মন্ত্রের অর্থ বলে দিলেন।
বললেন, “আগে ঐটি জপ করবে।” পরে তিনি আর একটি বলে দিয়ে বললেন, “শেষে এইটি জপ ও ধ্যান করবে।”
মন্ত্রটির অর্থ বলার পূর্বে মাকে কয়েক মিনিটের জন্য ধ্যানস্থ হতে দেখেছিলুম।
মন্ত্র দেবার সময় আমার সমস্ত শরীর কাঁপতে লাগল এবং কেন বলতে পারি না, কাঁদতে লাগলুম।
মা কপালে বড় করে একটা রক্ত-চন্দনের ফোঁটা পরিয়ে দিলেন।
দক্ষিণা ও ঠাকুরের ভােগের জন্য কিছু টাকা দিলুম।
শ্রীশ্রীমা পরে গােলাপ-মাকে ডেকে ভােগের টাকা তার হাতে দিলেন।
দীক্ষার সময় মাকে খুব গম্ভীর দেখলুম।
পরে পূজার আসন হতে মা উঠে গেলেন।
আমাকে বললেন,
“তুমি খানিক ধ্যান, জপ ও প্রার্থনা কর।”
আমি ঐরূপ করার পরে উঠে মাকে প্রণাম করতেই মা আশীর্বাদ করলেন-“ভক্তি লাভ হােক।”
মনে মনে মাকে বললুম,
“দেখাে মা, আমার কথা মনে রেখাে, ফাকি দিও না যেন।”
শ্রীশ্রীমা এবার গঙ্গাস্নানে যাবেন—গােলাপ-মা সঙ্গে।
আমিও মায়ের কাপড়-গামছা নিয়ে সঙ্গে গেলুম।
স্নানের জন্য মা গঙ্গায় নেমেছেন, এমন সময় অল্প অল্প বৃষ্টি আরম্ভ হলাে।
স্নান করে উঠে ঘাটের পাণ্ডা-ব্রাহ্মণকে একটি কলা, একটি আম ও একটি পয়সা দিয়ে মা বললেন,
“ফল আমি দিলুম বটে, কিন্তু দানের ফল তােমার !”
হায় ! পাণ্ডাঠাকুর, জান না কার হাতের দান আজ পেলে ! আর কত বড় কথা শুনলে !
কোটি কামনায় জড়িত মানুষ আমরা ঐ দেববাণীর মর্ম কি বুঝব ?
আমার কাছ থেকে কাপড়খানি নিয়ে পরে, ভিজে কাপড়খানি আমার হাতে দিয়ে মা বললেন, 'চল।
গােলাপ-মা আগে, মা মাঝে, আমি পেছনে চললম।
ছােট একটি ঘটিতে গঙ্গাজল নিয়ে মা রাস্তার ধারে প্রতি বটবৃক্ষে জল দিয়ে প্রণাম করে যেতে লাগলেন।
মা তখন রাজার ঘাটে স্নান করতেন।
কারণ নতুন ঘাট (দুর্গাচরণ মুখার্জীর ঘাট) তখনাে হয়নি।
গােলাপ-মা ছােট একটি ঘড়ায় গঙ্গাজল নিয়ে এসেছিলেন, বাড়িতে ফিরে তা ঠাকুরঘরে রাখতে গেলেন।
নিচের কলতলায় চৌবাচ্চার কাছে একটা ঘটিতে জল ছিল, মা তাই দিয়ে পা ধুয়ে আমায় বললেন, “কাদা লেগেছে, ধুয়ে এসাে।”
আমি জল খুঁজছি দেখে বললেন, “ঐ ঘটির জলেই ধােও না।”
গােলাপ-মা আগে, মা মাঝে, আমি পেছনে চললম।
ছােট একটি ঘটিতে গঙ্গাজল নিয়ে মা রাস্তার ধারে প্রতি বটবৃক্ষে জল দিয়ে প্রণাম করে যেতে লাগলেন।
মা তখন রাজার ঘাটে স্নান করতেন।
কারণ নতুন ঘাট (দুর্গাচরণ মুখার্জীর ঘাট) তখনাে হয়নি।
দুর্গাচরণ মুখার্জীর ঘাট |
গােলাপ-মা ছােট একটি ঘড়ায় গঙ্গাজল নিয়ে এসেছিলেন, বাড়িতে ফিরে তা ঠাকুরঘরে রাখতে গেলেন।
নিচের কলতলায় চৌবাচ্চার কাছে একটা ঘটিতে জল ছিল, মা তাই দিয়ে পা ধুয়ে আমায় বললেন, “কাদা লেগেছে, ধুয়ে এসাে।”
আমি জল খুঁজছি দেখে বললেন, “ঐ ঘটির জলেই ধােও না।”
আমি বললুম, “আপনি যে ও জল ছুঁয়েছেন।”
মা ঃ আগে একটু মাথায় দিয়ে নাও, তাহলেই হবে !
মা ঃ আগে একটু মাথায় দিয়ে নাও, তাহলেই হবে !
আমার কিন্তু মন সরল না, বললুম “তা কি হয় ?
আমি আর একটা পাত্র এনে চৌবাচ্চা হতে জল নিয়ে পা ধুয়ে নিলুম।
মা ততক্ষণ আমার জন্য দাঁড়িয়ে রইলেন।
তারপর উপরে গিয়ে ঠাকুরের প্রসাদ দুখানি শালপাতায় সাজিয়ে নিজে একখানি নিলেন এবং আমাকে একখানি দিয়ে কাছে বসে খেতে বললেন।
আমি প্রসাদ পাবার পূর্বে মায়ের চরণামৃত পাবার আকাঙ্ক্ষা জানাতে মা বললেন,
“তবে জালা হতে একটু কলের জল নিয়ে এস” এবং আমি তা আনলে পাত্রটি আমাকে হাতে করে ধরে রাখতে বলে নিজে বাম ও দক্ষিণ পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ জলে দিয়ে কি বলতে লাগলেন—বুঝতে পারলুম না, শুধু ঠোট নড়তে দেখলুম।
শেষে বললেন, ‘নাও এখন।
আমি নিজেকে কৃতার্থ জ্ঞান করে তা পান করলুম।
তারপর খেতে খেতে প্রত্যেক জিনিসটি নিজে এক একটু খেয়ে আমার পাতে দিতে লাগলেন।
ক্রমে অনেকগুলি স্ত্রী-ভক্তের আগমন হলাে।
কাউকেই চিনি না।
শুনলুম-তারা সকলেই এখানে প্রসাদ পাবেন।
ঠাকুরের ভােগের পর আমরা সকলে প্রসাদ পেতে বসলুম।
মাও তার নির্দিষ্ট আসনে বসলেন।
তিনবার অন্ন মুখে দিয়ে মা আমাকে ডাকলেন এবং আমার হাতে প্রসাদ দিলেন।
প্রসাদ গ্রহণ করলুম।
কি যে একটি সুগন্ধ পেলুম এখনাে সে কথা ভাবলে অবাক হই।
তারপর একে একে সকলের পাতেই মার প্রসাদ বিতরিত হলাে।
গােলাপ-মা সকলকে দিয়ে শেষে নিজে খেতে বসলেন।
মা এবার খুব হাসি খুশি গল্প-সল্প করতে করতে খেতে লাগলেন।
তা দেখে আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলুম।
দীক্ষার সময় হতে এতক্ষণ পর্যন্ত তাকে যেন আর এক মা মনে হচ্ছিল।
সে কি গম্ভীর, অন্তর্মুখী নিগ্রহানুগ্রহসমর্থ দেবীমূর্তি ! ভয়ে জড়সড় হয়েছিলুম।
পরে কত লােককে দীক্ষা দিতে দেখেছি, দু-চার মিনিটেই হয়ে গেছে, কিন্তু সেরূপ গম্ভীর ভাব তার আর কখনাে দেখিনি।
কতজনকে হাসতে হাসতে দাঁড়িয়ে বা বসে দীক্ষা দিয়েছেন।
তারা খুশি হয়ে তখনই তৃপ্ত হয়ে চলে গেছে।
কৌতূহলাক্রান্ত হয়ে কাউকে বা জিজ্ঞেসই করে ফেলেছি, দীক্ষার সময় মায়ের কেমন রূপ দেখলেন ?”
একটি বিধবা স্ত্রী-ভক্ত আমার ঐ প্রশ্নে বলেছিলেন,
“এই এমিই আমি পূর্বে কুলগুরুর কাছে দীক্ষা নিয়েছিলুম-পরে মায়ের কথা শুনে এখানে দীক্ষা নিতে এসেছি।
পূর্বে কুলগুরু যেটি দিয়েছে, মা আমাকে সেটি রােজ প্রথমে দশবার জপ করে নিতে বললেন—পরে নিজে যেটি দিয়েছেন সেটি দিয়ে ঠাকুরকে দেখিয়ে বললেন,
“উনি গুরু (অন্য এক মূর্তি দেখিয়ে) আর ইনি ইষ্ট’, আর এ বলে প্রার্থনা করতে বললেন যে,
“ঠাকুর, আমার পূর্বজন্মের, ইহজন্মের কুকর্মের ভার তুমি নাও’ ইত্যাদি।
আমার কি হয়েছে বলুন তাে, যখনই জপ করতে বসি, আধ ঘণ্টার বেশি জপ করতে পারি নে, কে যেন ঠেলা দিয়ে তুলে দেয়।
আপনাদের এমন হয় ?
ভাবি মার কাছে কত কথা বলি—কিছুই বলতে পারি নে।
আপনারা তাে বেশ মায়ের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
মা কি আমাকে ফাঁকি দিলেন ?”
আমি কিন্তু অত কথা জানতে চাইনি, স্ত্রীলােকটির প্রায় প্রৌঢ়াবস্থা—সরল ভাবেই নিজেই বলে যাচ্ছেন।
আমি বললুম,
আমি আর একটা পাত্র এনে চৌবাচ্চা হতে জল নিয়ে পা ধুয়ে নিলুম।
মা ততক্ষণ আমার জন্য দাঁড়িয়ে রইলেন।
তারপর উপরে গিয়ে ঠাকুরের প্রসাদ দুখানি শালপাতায় সাজিয়ে নিজে একখানি নিলেন এবং আমাকে একখানি দিয়ে কাছে বসে খেতে বললেন।
আমি প্রসাদ পাবার পূর্বে মায়ের চরণামৃত পাবার আকাঙ্ক্ষা জানাতে মা বললেন,
“তবে জালা হতে একটু কলের জল নিয়ে এস” এবং আমি তা আনলে পাত্রটি আমাকে হাতে করে ধরে রাখতে বলে নিজে বাম ও দক্ষিণ পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ জলে দিয়ে কি বলতে লাগলেন—বুঝতে পারলুম না, শুধু ঠোট নড়তে দেখলুম।
শেষে বললেন, ‘নাও এখন।
আমি নিজেকে কৃতার্থ জ্ঞান করে তা পান করলুম।
তারপর খেতে খেতে প্রত্যেক জিনিসটি নিজে এক একটু খেয়ে আমার পাতে দিতে লাগলেন।
ক্রমে অনেকগুলি স্ত্রী-ভক্তের আগমন হলাে।
কাউকেই চিনি না।
শুনলুম-তারা সকলেই এখানে প্রসাদ পাবেন।
ঠাকুরের ভােগের পর আমরা সকলে প্রসাদ পেতে বসলুম।
মাও তার নির্দিষ্ট আসনে বসলেন।
তিনবার অন্ন মুখে দিয়ে মা আমাকে ডাকলেন এবং আমার হাতে প্রসাদ দিলেন।
প্রসাদ গ্রহণ করলুম।
কি যে একটি সুগন্ধ পেলুম এখনাে সে কথা ভাবলে অবাক হই।
তারপর একে একে সকলের পাতেই মার প্রসাদ বিতরিত হলাে।
গােলাপ-মা সকলকে দিয়ে শেষে নিজে খেতে বসলেন।
মা এবার খুব হাসি খুশি গল্প-সল্প করতে করতে খেতে লাগলেন।
তা দেখে আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলুম।
দীক্ষার সময় হতে এতক্ষণ পর্যন্ত তাকে যেন আর এক মা মনে হচ্ছিল।
সে কি গম্ভীর, অন্তর্মুখী নিগ্রহানুগ্রহসমর্থ দেবীমূর্তি ! ভয়ে জড়সড় হয়েছিলুম।
পরে কত লােককে দীক্ষা দিতে দেখেছি, দু-চার মিনিটেই হয়ে গেছে, কিন্তু সেরূপ গম্ভীর ভাব তার আর কখনাে দেখিনি।
কতজনকে হাসতে হাসতে দাঁড়িয়ে বা বসে দীক্ষা দিয়েছেন।
তারা খুশি হয়ে তখনই তৃপ্ত হয়ে চলে গেছে।
কৌতূহলাক্রান্ত হয়ে কাউকে বা জিজ্ঞেসই করে ফেলেছি, দীক্ষার সময় মায়ের কেমন রূপ দেখলেন ?”
একটি বিধবা স্ত্রী-ভক্ত আমার ঐ প্রশ্নে বলেছিলেন,
“এই এমিই আমি পূর্বে কুলগুরুর কাছে দীক্ষা নিয়েছিলুম-পরে মায়ের কথা শুনে এখানে দীক্ষা নিতে এসেছি।
পূর্বে কুলগুরু যেটি দিয়েছে, মা আমাকে সেটি রােজ প্রথমে দশবার জপ করে নিতে বললেন—পরে নিজে যেটি দিয়েছেন সেটি দিয়ে ঠাকুরকে দেখিয়ে বললেন,
“উনি গুরু (অন্য এক মূর্তি দেখিয়ে) আর ইনি ইষ্ট’, আর এ বলে প্রার্থনা করতে বললেন যে,
“ঠাকুর, আমার পূর্বজন্মের, ইহজন্মের কুকর্মের ভার তুমি নাও’ ইত্যাদি।
আমার কি হয়েছে বলুন তাে, যখনই জপ করতে বসি, আধ ঘণ্টার বেশি জপ করতে পারি নে, কে যেন ঠেলা দিয়ে তুলে দেয়।
আপনাদের এমন হয় ?
ভাবি মার কাছে কত কথা বলি—কিছুই বলতে পারি নে।
আপনারা তাে বেশ মায়ের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
মা কি আমাকে ফাঁকি দিলেন ?”
আমি কিন্তু অত কথা জানতে চাইনি, স্ত্রীলােকটির প্রায় প্রৌঢ়াবস্থা—সরল ভাবেই নিজেই বলে যাচ্ছেন।
আমি বললুম,
“যা আপনার ইচ্ছা হবে মায়ের কাছে বলুন না, দু-চার দিন বলতে বলতে সহজ হয়ে আসবে।
আমরাও প্রথম প্রথম অত কথা বলতে পারিনি। এখনাে এক এক সময় এমন গম্ভীরভাব ধারণ করেন, কাছেই এগুনাে যায় না।”
বেলা পড়ে আসতে সমাগত ভক্ত-মহিলাগণ শ্রীশ্রীমাকে প্রণাম করে একে একে বিদায় নিতে লাগলেন, কেহ বা আরতি দেখে যাবেন বললেন।
এশ্রিীমা কাপড় কেচে এসে ঠাকুরের বৈকালী-ভােগ দিয়ে প্রত্যেককে প্রসাদ দিলেন ।
এশ্রিীমা কাপড় কেচে এসে ঠাকুরের বৈকালী-ভােগ দিয়ে প্রত্যেককে প্রসাদ দিলেন ।
ক্রমে সন্ধ্যা হয়ে এলাে।
মা রাধু, মাকু প্রভৃতিকে ঠাকুরঘরে এসে জপ করতে বসতে বললেন।
তারা আসতে বিলম্ব করায় মা অসন্তোষ প্রকাশ করে বললেন,
মা রাধু, মাকু প্রভৃতিকে ঠাকুরঘরে এসে জপ করতে বসতে বললেন।
তারা আসতে বিলম্ব করায় মা অসন্তোষ প্রকাশ করে বললেন,
“সন্ধ্যার সময় এখন এসে সব জপ-টপ করবে, না কোথায়। কি করছে দেখ।”একটু পরে তারা এসে জপ করতে বসল।
পূজনীয় গােলাপ-মা, যােগীন-মা, প্রভৃতি এসে সন্ধ্যাকালে ভক্তিভরে শীশ্রীমায়ের পদধূলি গ্রহণ করলেন, মা তাদের মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করলেন।
কারও বা চিবুক স্পর্শ করে চুমাে খেলেন, আবার হাতজোড় করে নমস্কারও করলেন।
তারপর ঠাকুরপ্রণাম করে একখানি আসন পেতে জপে বসলেন।
সন্ধ্যারতির উদ্যোগ হচ্ছে, শ্রীশ্রীমা কিছুক্ষণ পরে জপ শেষ করে উঠলেন।
বাসা হতে একটি ছেলে নিতে এসেছে, মায়ের কাছে বিদায় নিতে গিয়ে বললুম,
কারও বা চিবুক স্পর্শ করে চুমাে খেলেন, আবার হাতজোড় করে নমস্কারও করলেন।
তারপর ঠাকুরপ্রণাম করে একখানি আসন পেতে জপে বসলেন।
সন্ধ্যারতির উদ্যোগ হচ্ছে, শ্রীশ্রীমা কিছুক্ষণ পরে জপ শেষ করে উঠলেন।
বাসা হতে একটি ছেলে নিতে এসেছে, মায়ের কাছে বিদায় নিতে গিয়ে বললুম,
- “মা, কই সেদিনকার সেই কাপড়খানি তাে পরলেন না ?”
- মা বললেন, “তাই তাে মা, তখন মনে করে দিলে কই ?”
No comments