শ্রীমা সারদাদেবীকে প্রথম দর্শন করে কৃপালাভ করেন_শ্রীনির্মলচন্দ্র গােস্বামী
শ্রীমা সারদাদেবীকে প্রথম দর্শন করে কৃপালাভ করেন_শ্রীনির্মলচন্দ্র গােস্বামী
পরবর্তিকালে প্রতিভাবান, সুপুরুষ, উজ্জ্বল গৌরকান্তি, নির্মলচন্দ্রের মেধা, কায বিশ্লেষণে মুগ্ধ হয়ে ভাইসরয় তাঁকে তাঁর অফিসে প্রাইভেট অ্যাসিস্ট্যান্ট যােগ দেন।
তিনি ১৯০৮ সনে শ্রীমা সারদাদেবীকে প্রথম দর্শন করে তাঁর কৃপালাভ করেন।]
শ্রীরামকৃষ্ণ ভাবান্দোলনে একসময় বৃহত্তর সিলেটের অনেক ভক্তই যােগদান করেন।
রামকৃষ্ণ সঙ্রে স্বামী জগদানন্দ, স্বামী প্রেমেশানন্দ ও স্বামী সারদেশানন্দ প্রমুখ সন্ন্যাসীর পূর্বাশ্রম একই জেলায় পাশাপাশি থাকার কারণে তাঁদের সঙ্গে নির্মলচন্দ্রের ঘনিষ্ট যােগাযােগ ছিল ।
সুমিষ্ট কণ্ঠের অধিকারী নির্মলচন্দ্র সুরেলা গলায় প্রাণমাতানাে গানে তাদের আনন্দ দান করতেন।
উল্লেখ্য এসব সন্ন্যাসীগণ শ্রীরামকৃষ্ণ-শক্তি শ্রীমা সারদাদেবীর মন্ত্রশিষ্য ছিলেন।
এর ফলে শ্রীমা সারদাদেবীর শ্রীপাদপদ্ম দর্শনে নির্মলচন্দ্রের আগ্রহ বেড়ে যায়।
এসব সন্ন্যাসীদের মধ্যে বিশেষ করে প্রেমেশানন্দ (ইন্দ্রদয়াল ভট্টাচার্যকে) শ্রীশ্রীমা বিশেষ স্নেহ করতেন।
শ্রীমা এক সময় শারীরিক অসুস্থ ছিলেন বলে দীক্ষাদান বন্ধ ছিল ।
শ্রীহট্ট থেকে তখন কালীপ্রসন্ন ও হরসুন্দর নামে দুটি যুবক দীক্ষার জন্য জয়রামবাটী যান।
তাঁরা ইন্দ্রদয়ালকে চেনেন, তাঁর পরিচিত—শুনেই শ্রীশ্রীমা তাঁদের দীক্ষাদানে সম্মত হন।
সেই ইন্দ্রদয়াল ভট্টাচার্য নির্মলচন্দ্রের ঘনিষ্টজন সুহৃদ।
কাজেই তাঁর পরিচয়ই শ্রীশ্রীমায়ের নিকট যেতে তাঁকে প্রেরণা যুগিয়েছে নিঃসন্দেহে।
সম্ভবত ১৯০৮ সনে উনিশ বছর বয়সে নির্মলচন্দ্র গােস্বামী শ্রীরামকৃষ্ণ-সহধর্মিনী শ্রীমা সারদাদেবীর শ্রীপাদপদ্ম দর্শন করেন।
হৃদয়ের প্রেরণাবশতই নির্মলচন্দ্র শ্রীশ্রীমায়ের নিকট নিজ জীবন ধন্য মার জন্য মহামূল্য মহামন্ত্র প্রার্থনা করেন।
ভক্তিমান নির্মলচন্দ্রকে মা কৃপা করলেন ।
ধন্য করলেন মানব জীবন।
আশ্রয় পেল নির্মলচন্দ্র।
বাংলাদেশে শ্রীমা সারদাদেবীর শিষ্যবৃন্দ ও তাঁদের স্মৃতিমালা। শ্রীমা সারদাদেবীকে প্রথম দর্শন করে কৃপালাভ করেন_শ্রীনির্মলচন্দ্র গােস্বামী
নির্মলচন্দ্রের সর্বত্যাগী মন ও নিষ্ঠা এমনই ছিল যে, তিনি এক সময় সংসার ছেড়ে রামকৃষ্ণ সঙ্ঘে যােগদান করার জন্য শ্রীশ্রীমায়ের কাছে অনুমতি প্রার্থনা করেন।
নির্মলচন্দ্রের আকুল আবেদন শুনে শ্রীশ্রীমা তার মুখের দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন।
অন্তর্যামিনী বুঝতে পারলেন নির্মলচন্দ্রের ভবিষ্যৎ।
তাই তাঁকে বিরত করে বললেন, “না বাবা, তােমার সন্ন্যাসী হতে হবে না।
তুমি সংসার পালন কর।
তােমার পরিবার থেকেই পরে একাধিক সন্ন্যাসী আসবে।”
শ্রীশ্রীমা সারদাদেবীর অনুমতি ক্রমেই নির্মলচন্দ্র সংসারজীবনে প্রবেশ করেন।
বৃহত্তর শ্রীহট্টের হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচঙ্গ গ্রামের চন্দ্রকুমার বিশ্বাস এর জ্যেষ্ঠা কন্যা প্রমীলাদেবীকে বিয়ে করেন।
চাকরিসূত্রে সিমলাতেই থাকতেন।
তার বিবাহিত জীবন বেশ সুখের ছিল।
ইতােমধ্যে দুটি পুত্রের জনক হলেন।
বিধাতার নিষ্ঠুর নিয়মে হঠাৎ হৃদরােগে আক্রান্ত হয়ে নির্মলচন্দ্র মাতৃলােকে চলে গেলেন।
এ সময় তাঁর স্ত্রী ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।
নির্মলচন্দ্রের দেহত্যাগের মাত্র ২ মাস পরে অর্থাৎ ২৯শে জুন, ১৯২১ সনে প্রমিলা দেবীর কোল আলােকিত করে একটি পুত্রসন্তান ভূমিষ্ঠ হয়।
এ সন্তানটির নাম রাখা হয় বিপদভঞ্জন গােস্বামী।
- পরবর্তিকালে এই সন্তানই রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসী সুপুরুষ,
- দীর্ঘদেহী,
- উজ্জ্বল গৌরবর্ণ,
- উন্নত ললাট,
- সুপণ্ডিত দেশ-বিদেশে প্রখ্যাত বেদান্ত প্রবক্তা ও বাগ্মী রামকৃষ্ণ সঙ্ঘে সর্বজন প্রিয়
- স্বামী স্বাহানন্দ (বিপদভঞ্জন মহারাজ)।(29 June 1921 – 19 October 2012)
তিনি আমেরিকার হলিউড সেন্টারের অধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
নির্মলচন্দ্রের পৌত্র অর্থাৎ তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র নিরঞ্জন (হরিপদ) গােস্বামী-এর একমাত্র সন্তান নিশীথরঞ্জন গােস্বামী
(ডাঃ নিশীথ মহারাজ ,বেলুড় মঠ ) যিনি পরিবর্তিকালে স্বামী প্রিয়ব্রতানন্দ নামে রামকৃষ্ণ সঙ্ঘে পরিচিতি লাভ করেন।
শ্রীমা সারদাদেবী নির্মলচন্দ্রকে প্রথম দর্শনেই যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন অর্থাৎ—তােমার পরিবার থেকেই রামকৃষ্ণ সঙ্ঘে একাধিক সন্ন্যাসী আসবে’–এ যেন তারই বাস্তব প্রতিফলন।
No comments