শ্রীশ্রীমায়ের মন্ত্রশিষ্য ছিলেন_নিরুপমা রায় এবং প্রফুল্লমুখী বসু
শ্রীশ্রীমায়ের মন্ত্রশিষ্য ছিলেন_নিরুপমা রায়।
Sri Ramakrishna |
[নিরুপমা রায় বৃহত্তর ঢাকার মানিকগঞ্জ জেলা-এর শিবালয় উপজেলার তেওতা গ্রামে বসবাস করতেন।
তার স্বামী অভয়শঙ্কর রায় এবং জা হেমপ্রভাও শ্রীশ্রীমায়ের মন্ত্রশিষ্য ছিলেন। পরবর্তিকালে এরা কোলকাতা বসবাস করতেন।
নিরুপমা রায় বিভিন্ন সময়ে শ্রীশ্রীমায়ের নিকট হতে মূল্যবান অনেকগুলি পত্র পেয়েছেন। এ গ্রন্থে সে মূল্যবান পত্রগুলির কিছু কিছু পত্র সংযােজিত করা হয়েছে।
আমি তখন পিতার কর্মস্থল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে ছিলাম। আমার মন্ত্র নেওয়ার প্রবল আকাক্ষা জন্মে এবং স্বামীকে তা লিখে জানাই।
স্বামী লােক পাঠিয়ে আমাকে কোলকাতায় আনালেন, উভয়ে একসঙ্গে মাকে দর্শন করতে গেলাম।
দু’তিন বার দর্শনের পর দীক্ষার প্রস্তাব করতেই মা সম্মত হলেন।
স্বামীর মনে একটা সংশয় ছিল, আমাকে অনুমতি দিয়েও নিজের দীক্ষাগ্রহণ বিষয়ে চিত্ত স্থির করতে পারছিলেন না।
স্বামীর মনে একটা সংশয় ছিল, আমাকে অনুমতি দিয়েও নিজের দীক্ষাগ্রহণ বিষয়ে চিত্ত স্থির করতে পারছিলেন না।
শেষরাত্রে তিনি এক দিব্য দর্শনে উল্লসিত হয়ে চিৎকার করে বলতে থাকেন,—আমার আর দ্বিধা নেই।
ঠাকুর স্বয়ং—সিংহাসনে আসীন, জ্যোতির্ময় মূর্তি, সেই জ্যোতিতে ঘর ভরে গিয়েছে—উপর হতে নেমে এসে আমাকে ডেকে বললেন, “ওরে, ওঁর কাছে মন্ত্র নিতে তাের মনে দ্বিধা, যেখানে মন্ত্র নিলে পুনর্জন্ম হবে না ? যা যা, কোন সংশয় রাখিস নি ।
” দীক্ষার পর মা বলেছিলেন, “তােমার তাে বাবা, অনেকদিন সময় হয়েছে,
এতদিন মন্ত্র নাও নি কেন ?
তােমার মনে যে বড় দ্বিধা ছিল !' তিনি শ্রীমার পাদপদ্মে পড়ে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, মা আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। (শ্রীশ্রীসারদাদেবী, পৃঃ ১৩৬)
১৯১৫ সন থেকে ১৯২০ সনের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে আমার সুখে-দুঃখে শ্রীশ্রীমাকে পত্র লিখতাম।
আমার বড় ছেলে ও মেয়ে প্রায়ই অসুস্থ থাকত।
আমি তাদের সুস্বাস্থ্য কামনায় তাঁর আশীর্বাদ চেয়ে পাঠাতাম।
আমি তাদের সুস্বাস্থ্য কামনায় তাঁর আশীর্বাদ চেয়ে পাঠাতাম।
মা-ও করুণাপরবশ হয়ে আশীর্বাদ জানাতেন শ্রীশ্রীঠাকুরের নামে।
সে আশীর্বাদের জোরে আমার ছেলে-মেয়ে শীঘ্রই সুস্থ হয়ে উঠেছিল।
শ্রীশ্রীমায়ের মন্ত্রশিষ্য ছিলেন_প্রফুল্লমুখী বসু।
(প্রফুল্লমুখী বসু বৃহত্তর ফরিদপুর-এর গােপালগঞ্জ জেলার ওলপুরের অধিবাসী।
মাত্র তেরাে বছর বয়সে বিবাহের মাত্র আঠাশ দিন পরে বিধবা হয়ে ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে তিনি মায়ের সান্নিধ্যে ছুটে আসেন এবং তাঁর অশান্ত মন শ্রীশ্রীমায়ের কৃপায় শান্ত হয়।
পরবতিকালে অসহযােগ আন্দোলনে বাংলার নারী-স্বাধীনতা সত্যাশীদের মধ্যে তিনি ছিলেন উল্লেখযােগ্য।
কুমিল্লা, হিজলী, বহরমপুর প্রভৃতি জেলে তিনি বন্দী ছিলেন।
স্বাধীনতা অর্জনের পর কুমিল্লার ‘সারদাদেবী মহিলা সমিতি’র তিনি প্রাণশক্তি ছিলেন।
কুমিল্লা শহরেই তিনি শেষদিনগুলি অতিবাহিত করেন ।
১৩২১ সালে দেবীর বােধনের দিন শ্রীশ্রীমাকে প্রথম দর্শন করি ।
মা আমাকে তার কাছে বসতে বললেন।
জানি না কেন তখন আমার সমস্ত প্রাণ।
আকুল করে চোখ ফেটে জল বের হতে লাগল।
তখন আমাকে বিধবা বলে চেনা সহজ ছিল না, চওড়া পাড়ের শাড়ী, গহনা সবই পরা ছিল ।
মা কিন্তু প্রথমেই আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
“মা, তাের স্বামী নেই ?”
আশৈশব সকলের আদরে পালিত হয়েছি,
তথাপি আমার মনে হয়েছিল অমন স্নেহমাখা কথা কখনও শুনিনি।
চেষ্টা করেও একটি কথা বলতে পারলাম না ।
মা আস্তে আস্তে বললেন,
“অত নিরাশ কেন মা?
তুমি তাে তুচ্ছ নও।
- ভয় কী মা,
- তােমাদের ঠাকুর আছেন ;
- তিনি দেখবেন,
- তিনিই তােমাদের শান্তি দেবেন,
- আনন্দ দেবেন।
তােমাদের দ্বারা তিনি অনেক কাজ করাবেন।
কোন ভয় নেই মা, কোন ভাবনা নেই মা।” (শ্ৰীশ্ৰীসারদা দেবী, পৃঃ ২১১)
এক বিকালে উদ্বোধনে এসে দেখলাম,
শ্রীশ্রীমায়ের সেবিকা নবাসনের বউ (মন্দাকিনী রায়) ছাদ হতে লেপ-তােশক ইত্যাদি এনে ওয়াড় পরিয়ে বিছানা করছেন।
দেখে ভাবছি,
“যদি এ কাজটি করতে পেতুম।”
নবাসনের বউ চলে যেতেই মা ঘরে এসে বিছানার দিকে চেয়ে বললেন, “দেখেছ, মা, সব ভুল করে রেখেছে ; ওয়াড়গুলাে ওলট-পালট করে ফেলেছে।
তুমি, মা, ওয়াড়গুলাে বদলে ঠিক করে পরিয়ে বিছানা করে দাও তাে!” শ্রীশ্রীমায়ের কৃপায় বাসনা পূর্ণ হলাে।
শ্রীশ্রীমায়ের মন্ত্রশিষ্য ছিলেন_নিরুপমা রায় ,প্রফুল্লমুখী বসু
সারদা মায়ের প্রনাম মন্ত্র......
নম: যথাগ্নের্দাহিকা শক্তি, রামকৃষ্ণে স্থিতা হি যা।
সর্ববিদ্যাস্বরূপাং তাং সারদাং প্রণমাম্যহম্।।
No comments