শ্রীশ্রীমায়ের কাছে দীক্ষালাভ করেন_ জ্যোতির্ময়ীদেবী - Spirituality Religion

Header Ads

শ্রীশ্রীমায়ের কাছে দীক্ষালাভ করেন_ জ্যোতির্ময়ীদেবী


শ্রীশ্রীমায়ের কাছে দীক্ষালাভ করেন_ জ্যোতির্ময়ীদেবী

শ্রীশ্রীমায়ের কাছে দীক্ষালাভ করেন_ জ্যোতির্ময়ীদেবী
Sri Ramakrishna

জ্যোতির্ময়ী বসু যশাের শহরের বাসুরিয়া পল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন। বিবাহসূত্রে নড়াইল জেলার শ্রীধরপুর গ্রামের বাসিন্দা।
মায়ের কৃপাপ্রাপ্ত যশােরের ডাঃ দুর্গাপদ ঘােষ-এর বড় দাদা ছিলেন।
১৩১৬ সালের ৩২ আষাঢ় উদ্বোধনবাড়িতে শ্রীশ্রীমায়ের কাছে দীক্ষালাভ করেন। জ্যোতির্ময়ীদেবী একজন কবি ছিলেন

আমার পনের বছর বয়সে ভক্তপ্রবর অক্ষয়কুমার সেন মহাশয়ের লিখিত শ্রীরামকৃষ্ণ পুঁথিপড়েও ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণকেঅবতারবলে মনের মধ্যে বিশ্বাস আসে নি।

তখন তাঁকেএকজন উচ্চশ্রেণীর সাধু এইমাত্র বলেই মনে হচ্ছিল।

একদিন রাত্রে ঘুমাবার পূর্বে স্থির চিত্তে চিন্তা করতে লাগলামঠাকুর যদি তুমি সত্যই অবতার হও, তাহলে আজ রাত্রে আমার গর্ভধারিণী মাকে আমি স্বপ্ন দেখব।

সত্যই সে রাত্রে আমি আমার মাকে স্বপ্ন দেখলাম এবং সেই সঙ্গে বেলুড় মঠের ঠাকুরঘর, ঠাকুরের শয়নঘর, বারান্দাও স্বপ্নে দেখে দাদাকে (ডাক্তার দুর্গাপদ ঘােষ) পত্রে জানালাম।

বেলুড় মঠ দেখব বলে দাদাও খুব সম্ভষ্টচিত্তে শ্বশুরবাড়ি হতে আমাকে এনে বেলুড়ে নিয়ে গেলেন।

আমি গিয়ে বেলুড় মঠের ঠাকুরঘর প্রভৃতি দেখে হতবাক হয়ে গেলাম।

ইতিপূর্বে স্বপ্নে যেখানে যেমন যেমনটি দেখেছিলাম সে সমস্ত ঠিক ঠিক সেরূপই সেখানে রয়েছে তাই দেখলাম

আমার মনের কামনা ছিল শ্রীশ্রীমায়ের নিকট দীক্ষা নেব।

স্বপ্নে দেখেছিলামমঠের ঠাকুরঘরে যেস্থানে চরণামৃতের পঞ্চপাত্র থাকে তা হতে ঠাকুর (রামকৃষ্ণদেব) চরণামৃত একটি বিল্বপত্র আমায় দিছেন।

স্বপ্নাবস্থাতেই আমি ঠাকুরকে বললাম আমার বাসনা কি পূর্ণ হবে ? (আমার বাসনা মায়ের কাছে দীক্ষাপ্রাপ্তি।)

ঠাকুর বললেন, 'হবে।

উক্ত স্বপ্ন-বৃত্তান্ত কারও কাছে প্রকাশ করিনি।

ঐসময়ে আমার দৃঢ়সঙ্কল্প ছিলযেমন করেই হােক শ্রীমায়ের কাছে দীক্ষা নেবই।

পরে আমি খুঁজে নিয়ে ১৩১৬ সালের ৩১ আষাঢ় বিকালে উদ্বোধন-এর বাড়িতে শ্রীমায়ের দর্শন পাই।

৩২ আষাঢ় শ্ৰীমা আমায় দীক্ষা দিয়ে অকূলে কূল দেন।

শ্রীমাকে আমার সেই স্বপ্ন-বৃত্তান্ত বললাম।

মা আমাকে(জ্যোতির্ময়ী বসু) বিশদভাবে তা বুঝিয়ে দিলেনমাত্র পনের বছৱেৱ একটি মেয়ে একটি মানুষকে অবতার বললে (বিশেষত তখন প্রচার বিশেষ কিছু হয় নি

সেসময়ে অলৌকিক এমন কিছু না দেখলে তাঁকে অবতার বলে বিশ্বাস করবে কেন ?
আমেরিকা হতে একটি মহিলা উদ্বোধন-এর বাড়িতে ঐসময়ে শ্রীমায়ের নিকট আসতেন।

শ্রীমা এই আমেরিকান মহিলাটিকেদেবমাতাবলে ডাকতেন।

-মহিলাটি প্রত্যহ ৭টা আন্দাজ শ্রীমায়ের কাছে আসতেন।

আমি মার মুখে শুনেছিলাম, -মহিলাটি দেখেছিলেন ঠাকুর তাঁর দুই কাঁধে পা দিয়ে দাঁড়িয়ে।

তা দেখেই দেবমাতা অজ্ঞান হয়ে যান।

পরে স্বামীজী দেশে গেলে তাঁর নিকট ঠাকুরের ছবি দেখে ঠাকুরকে তিনি চিনতে পারেন।

দেবমাতা তা দেখেছিলেন।

তিনি কয়েক বছর পরে ভারতে আসেন ৪৭নং বােসপাড়া লেনে (বাগবাজার, কোলকাতায়) একটি বাড়িতে অবস্থান করেন।

তিনি প্রত্যহ মায়ের ঘরে ধ্যানে বসতেন, আর তার দুটি চোখে ভক্তির আবেশে জলধারা বইত।

সে এক এমনি আশ্চর্য জলধারা যে, না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না

ভগিনী দেবমাতার সঙ্গে শ্রীমা আমাদের সকলকে নিয়ে পাশের ঘরে বসতেন।

রাধু (শ্রীমায়ের ভাইঝি) ভাত খেয়ে স্কুলে যাবে, তাকে মা খাইয়ে দিচ্ছেন।

রাধুর খাওয়া হয়ে গেলে মা নিজেই এঁটো পরিষ্কার করছেন

আমরা সকলেই বসে দেখছি।

আশ্চর্যের বিষয় বিদেশিনী মেয়ে তীরের মতাে উঠে 'মাতাদেবী, মাতাদেবীবলে মায়ের হস্ত হতে থালা-বাটি নিয়ে সকড়ির মধ্যেই বসে পড়ে দুই হস্ত দিয়ে এঁটো পরিষ্কার করতে আরম্ভ করলেন।

তা দেখে নলিনী-দিদি হেসে উঠলেন।

মা নলিনী-দিদিকে চক্ষু দ্বারা ইঙ্গিত করে নিষেধ করলেন।

দেবমাতা কলঘরে বাসন রাখতে গেলে মা বললেন, মেয়েটি আমাদের ভাষা বুঝে না, তুই যে অমন করে হেসে উঠলি, তাতে ভাববে না জানি কি অন্যায় কাজ করে ফেলেছি।

আর সেসব কথা মনে হলেও কত কষ্ট পাবে

দেবমাতা অনেক পরে তাঁর বাসস্থানে চলে গেলে আমরাই পুনরায় গােবর-ন্যাতা জল দিয়ে -ঘর পরিষ্কার করে ফেললাম।

তার পরে হেসে শ্রীমাকে বললাম, মেয়েটির কাপড়ও যে সব সকড়ি হয়ে গেছে।

মাও সেকথা শুনে 'তাইতাে সব সকড়ি হয়ে গেলবলে হাসলেন

সর্বধর্মসমন্বয় সাধন সেভাব প্রচারের জন্য ঠাকুর এযুগে মানবদেহ ধারণ করে এসেছিলেন।
শ্রীশ্রীমায়ের কাছে দীক্ষালাভ করেন_ জ্যোতির্ময়ীদেবী
Sri Ramakrishna


বাংলাদেশে শ্রীমা সারদাদেবীর শিষ্যবৃন্দ তাঁদের স্মৃতিমালা_ শ্রীশ্রীমায়ের কাছে দীক্ষালাভ করেন_ জ্যোতির্ময়ীদেবী


নশ্বর মানবদেহ ত্যাগের পরে ঠাকুর কোন কোন ভাগ্যবান ভাগ্যবতীদের কাকেও প্রত্যক্ষ, আবার কাকেও স্বপ্নের ভিতর দিয়ে দেখা দিয়ে বিশ্বাস করিয়ে শ্রীমায়ের চরণপ্রান্তে এনে দিয়েছেন।

শ্রীমাও তাদের অন্তরের ধূলা ঝেড়ে নিজের অঞ্চলপ্রান্তে তাদের ঢেকে নিয়েছেন।

সর্বধর্মসমন্বয়কারী যুগধর্ম প্রবর্তক শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর প্রধান শিষ্য বিশ্ববিখ্যাত বিবেকানন্দের মূলাধার ছিলেন স্বয়ং জগদম্বা সারদারূপে আমাদের মা।

যে চরণপ্রান্তে বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ আমেরিকা হতে ফিরে সাষ্টাঙ্গে লুটিয়ে পড়েছিলেন,

আবার সেই চরণপ্রান্তেই আমাদের মতাে দুর্ভাগা অভাবগ্রস্তা অভাগিনীদের পরম করুণাময়ী শ্রীমা সমান স্নেহে আশ্রয় দিয়েছেন।

অযােগ্য, অক্ষম, দীন, ভক্তসন্তানদের প্রতি শ্রীমায়ের এই করুণা, স্নেহ, ক্ষমার সঙ্গে আশ্রয়দানের মহিমা অবর্ণনীয় ব্যাপার।

শ্রীমায়ের সেই দীনবৎসলতার কথা মুখে বলে বুঝাতে পারা যায় না।

এসব কথা লিখে বর্ণনা করাও আমাদের সাধ্যাতীত

শুধু তারাই জানেন যারা শ্রীমায়ের চরণপ্রান্তে তার আশ্রিত সন্তানরূপে বসার দুর্লভ সৌভাগ্যলাভ করেছেন।

শ্রীমায়ের পরম স্নেহময়ী মূর্তি দর্শন তাঁর অভয়বাণী শ্রবণে যে অবর্ণনীয় আনন্দের বন্যা সমাগত ব্যক্তিদের অন্তরে বয়ে যেত তা সকলেরই প্রাণের বস্তু।

তা প্রত্যেকের মর্মস্থলে গভীরভাবে প্রবিষ্ট হয়ে গিয়েছে।

সে আনন্দ, সে পবিত্রতাকে মুখে প্রকাশ করা যায় না।

শ্রীমায়ের অভয়পদে আশ্রয়লাভ এবং তাঁর অহেতুক অবিশ্রান্ত করুণার কথা আমি এতকাল ধরে কৃপণের ধনের মত অন্তরে গােপন করে রেখেছিলাম।

কিন্তু এখন এই প্রবীণ বয়সে সেকথা প্রকাশ করলাম, তার যথেষ্ট কারণ আছে।

এসম্বন্ধে আমি বলছিআমার ন্যায় অতি সামান্য একজন ব্যক্তিরও শ্রীমায়ের পুণ্যস্মৃতির কথা পড়ে যদি কারও প্রাণে শান্তি আশার সঞ্চার করে তাহলে স্মৃতিকথা প্রকাশ করা আমি সার্থক মনে করব

বহু বছর অতীত হলাে নশ্বর শরীর ত্যাগ করে শ্রীমা জ্যোতির্ময়ধামে চলে গিয়েছেন।

তাঁর সান্নিধ্যের সেই পুণ্যস্মৃতি অভয়বাণী এক্ষণে আমাদের সান্ত্বনা সম্বল।

শ্রীমায়ের অপার অযাচিত করুণা স্মরণ করে তার উদ্দেশে কবিতার আকারে আমার অন্তরের এই প্রার্থনা ভক্তিপূর্ণ প্রণামের সাথে নিবেদন করে প্রসঙ্গ শেষ করছি
শ্রীশ্রীমায়ের কাছে দীক্ষালাভ করেন_ জ্যোতির্ময়ীদেবী
Sri Ramakrishna


বাংলাদেশে শ্রীমা সারদাদেবীর শিষ্যবৃন্দ  তাঁদের স্মৃতিমালা_ শ্রীশ্রীমায়ের কাছে দীক্ষালাভ করেন_ জ্যোতির্ময়ীদেবী

 রামকৃষ্ণ-লীলাময়ি জননি সারদে
সন্তান-সন্তাপহরা অভয়ে বরদে 
জ্যোতির্ময়ী মাতৃমূর্তি হে আনন্দময়ি
সতত প্রসন্ননেত্রা ক্ষেমঙ্করী অয়ি
বহুদিন হেরি নাই তােমার মূরতি
তাই মাগাে চিত্ত মাের সকাতর অতি ।। 
তােমার আশ্রয়ে মাতঃ জুড়ায় জীবন 
শান্তিধারে করে স্নিগ্ধ তাপদগ্ধ মন।। 
যখনি গিয়েছি মাতঃ তব পদতলে 
প্রাণের সকল ব্যথা গেছে কোথা চলে
ব্যথিত অভাগা দীন উপেক্ষিত সবে 
ডেকেছ সতত কাছে সুমধুর রবে।। 
সব দোষ ক্ষমা করে দিয়েছ আশ্রয়
ঘুচায়ে অন্তরগ্লানি করেছ নির্ভয় 
কত যে করুণা তব অগাধ অপার
কভু নাহি হেরি কোথা তুলনা তাহার
তােমার শ্রীপাদপদ্মে দিনু পুস্পাঞ্জলি
ধুয়ে দাও অন্তরের মলিনতা-ধূলি 
দাও ভক্তি অনুরাগ শান্তি পবিত্রতা
মুক্তি দাও, শান্তি দাও, হে জগত্মাতা



1.

No comments

Powered by Blogger.