শ্রীশ্রীমায়ের কৃপালাভে ধন্য_সুরেন্দ্রনাথ ভৌমিক
শ্রীশ্রীমায়ের কৃপালাভে ধন্য_সুরেন্দ্রনাথ ভৌমিক
(সুরেন্দ্রনাথ ভৌমিক বৃহত্তর ময়মনসিংহ-এর টাঙ্গাইল জেলার শিবপুর গ্রামের বাসিন্দা। শ্রীশ্রীমায়ের কৃপাপ্রাপ্ত। এই ভৌমিক পরিবারের আটজন সদস্য শ্রীশ্রীমায়ের কৃপালাভে ধন্য। তিনি বল্লারতনগঞ্জ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। ১৩২০ সালের ২৫ জ্যৈষ্ঠ, জয়রামবাটী মায়ের পুরাতন বাড়িতে তিনি শ্রীশ্রীমাকে দর্শন করেন।
আজ অপরাত্নে আমরা রওনা হবাে।
পূর্বাঙ্গে স্নানান্তে আমরা শ্রীশ্রীমাকে প্রণাম করতে গেলাম।
মা আমাদের মাথায় হাত দিয়ে আর্শীবাদ করলেন এবং বসতে বললেন।
দুই-এক কথার পর আমি মাকে জিজ্ঞেস করলাম,
“মা, ঠাকুরকে পূজা করতে গিয়ে একটা খটকা বাধে।
যেমন, একজনের হয়তাে ইষ্টদেবী ও ঠাকুরকে এক বলে সাধারণ বিশ্বাস আছে।
কিন্তু ঠাকুরের মূর্তিতে ইষ্টদেবীর পূজা করে জপ-বিসর্জনের সময় প্রসাদান্মহেশ্বরী’ বলতে তার কেমন একটা খট্রা বাধে।”
মা ঃ (সহাস্যে) তা বাবা, তিনিই মহেশ্বর, তিনিই মহেশ্বরী। তিনিই সর্বদেবময়, তিনিই সর্ববীজময়। তাতে সব দেবদেবীর পূজা হয়। মহেশ্বর বললেও হবে, মহেশ্বরী বললেও হবে।
আমি ঃ মা, ধ্যান-ট্যান তাে কিছুই হয় না।
মা ঃ তা নাই বা হলাে।
ঠাকুরের ছবি দেখলেই হবে।
ঠাকুরের তখন অসুখ, কাশীপুরে।
ছেলেরা পালা করে থাকত। তখন গােপাল রয়েছে।
ঠাকুরকে ফেলে সে গিয়ে ধ্যান করতে বসেছে। অনেকক্ষণ ধ্যান করছে।
গিরিশবাবু এসে শুনে বললেন, ‘চোখ বুজে যাঁর ধ্যান করছে তিনি এখানে রােগশয্যায় পড়ে কষ্ট পাচ্ছেন, আর ও কি না ধ্যান করতে গেল ! গােপালকে ডেকে পাঠালেন।
ঠাকুর তাকে পা টিপে দিতে বললেন।
বললেন, ‘পায়ে ব্যথা হয়েছে বলে টিপতে বলছি কি ?
তা নয়, তাের অনেক করা ছিল (জন্মান্তরে), তাই।'
“ওঁকে দেখবে, তাহলেই হবে।”
আমি ঃ মা, যথানিয়মে তিন বেলা জপ করাও সব সময় হয়ে উঠে না।
শ্রীশ্রীমায়ের কৃপালাভে ধন্য_সুরেন্দ্রনাথ ভৌমিক
Sri Sri Ramakrishna
মা ঃ তা নাই বা হলাে, স্মরণ-মনন রাখবে।
যখন পার জপ করবে।
অন্তত প্রণামটা তাে করতে পারবে ?
•••••
আমি ঃ এই তাে, মা, সংসারে দশজন নিয়ে বাস।
রান্না হতে হয়তাে দুজন অগ্রভাগ খেয়ে গেছে।
তারপর সেই অন্ন এলাে ! তা নিবেদন করতেও দ্বিধা লাগে।
মা ঃ তা সংসারে ওরকম হবেই।
আমাদেরও হয়।
ধর না, একজন হয়তাে রােগা, তার জন্য আগে একটু উঠিয়ে রাখতে হলাে।
তা খাবার এলে, তিনিই খেতে দিলেন মনে করে তাকে স্মরণ করে খাবে। দোষ হবে না।
আমি ঃ মা, মনের যা অবস্থা তার আর কি বলব।
আপনি অন্তর্যামিনী, বুঝতেই পারছেন।
আর যে ভােগ কবছর ভুগছি।
আপনার আশীর্বাদ না থাকলে হয়তাে এতদিনে মরে যেতুম ।
মা ঃ হঁ্যা, বাবা, সংসারে যা কষ্ট তা আর বলতে ! কষ্টের পার নেই।
তােমাদের তাে আছেই ; আমাকেই বাবা, যেভাবে ঠাকুর রেখেছেন ! এ মেয়েটাকে (রাধুকে) নিয়ে কি কষ্টই পাচ্ছি !
আমি : হঁ্যা, মা, এখানকার এ ভাব দেখেই মনকে প্রবােধ দিই, আর ভরসা হয়। মা তাে সংসারের যন্ত্রণা নিজে দেখছেন, কাজেই দয়া হবে।
মা ঃ তা ভয় নেই, বাবা, ঠাকুর আছেন।
তিনিই তােমাদের ইহকাল পরকাল সব রক্ষা করবেন।
আমি ঃ মা, দূরে পড়ে থাকি ; স্বপ্ন কি সত্য ?
মা ঃ হঁ্যা, সত্য বইকি! তাঁর স্বপ্ন সত্য। তাঁর স্বপ্ন আবার তিনি তাঁর কাছেই বলতে নিষেধ করতেন।
আমি ঃ মা, ঠাকুর কেমন জানিনি, দেখিনি। আমাদের ঠাকুর বলুন, যা বলুন সবই এখানে (আপনি)।
মা ঃ ভয় নেই, ঠাকুর দেখবেন, বাবা। ইহকাল পরকাল সব দেখবেন, সব রক্ষা করবেন।
আহারাদির পর আমরা রওনা হলাম।
সঙ্গে বরদা মামা ; তিনি কোলকাতা আসবেন।
আমরা ক্রমে উত্তরদিকের মাঠে পড়লাম।
মা কিছুদূর
বাংলাদেশে শ্রীমা সারদাদেবীর শিষ্যবৃন্দ ও তাঁদের স্মৃতিমালা শ্রীশ্রীমায়ের কৃপালাভে ধন্য_সুরেন্দ্রনাথ ভৌমিক
Sri Sri Ramakrishna |
পর্যন্ত এসে যতক্ষণ দেখা গেল চেয়ে রইলেন।
আমি যখন বল্লারতনগঞ্জ স্কুলে হেডমাস্টার ছিলাম, সেসময় তথাকার কসাইগণ জীবন্ত গরুর চামড়া খসিয়ে নেয় জেনে বড়ই ব্যথিত হলাম।
দুবৃত্তেরা একদিন স্কুলের সামনেই ঐরূপ করল।
হিন্দু, মুসলমান ছাত্র ও শিক্ষকগণ এবং আমি এর খুব প্রতিবাদ করলাম।
কসাইগণ মারও খায় ।
এ নিয়ে তথায় একটা গণ্ডগােল বাধে।
কসাইগণ আমার উপর অত্যাচার করবে বলে ভয় দেখায়।
এসময় স্কুলের দু’তিনটি ছাত্র শ্রীশ্রীমায়ের কৃপালাভের জন্য জয়রামবাটীতে যায়।
আমি ঐসঙ্গে শ্রীশ্রীমাকে পত্র দেই ; তারাও সব ঘটনা শ্রীশ্রীমাকে নিবেদন করে।
মা শুনে শিউরিতে লাগলেন এবং আমাকে উদ্দেশ্য করে লিখলেন, তােমরা যদি এমন কাজের প্রতিবাদ না কর, তবে কে করবে ?'
শ্রীশ্রীমা অভয় দিয়ে আমাকে পত্র লিখলেন এবং যাতে এরূপ নৃশংস ব্যাপার আর না ঘটে তারই বিশেষ চেষ্টা করতে বললেন।
আমার দ্বিতীয় পত্রের উত্তরে মা লিখলেন, ভগবান যদি সত্য হন, তবে নিশ্চয়ই এর প্রতিবিধান হবে।
এ ঘটনা উপলক্ষে মকদ্দমা হয়েছিল।
এর ফল আশানুরূপ না হলেও ক্রমে প্রকাশ্যভাবে ঐ নৃশংস কর্মের অনুষ্ঠান একেবারে বন্ধ হয়ে গেল ।
সারদা মায়ের প্রনাম মন্ত্র......
নম: যথাগ্নের্দাহিকা শক্তি, রামকৃষ্ণে স্থিতা হি যা।
সর্ববিদ্যাস্বরূপাং তাং সারদাং প্রণমাম্যহম্।।
No comments