শ্রীমা সারদাদেবীর শিষ্যশৃন্দ _বিনােদনী (বিনু)
বাংলাদেশে শ্রীমা সারদাদেবীর শিষ্যশৃন্দ ও তাদের স্মৃতিমালা _বিনােদনী (বিনু)
Sri Sri Ramakrishna |
কয়েক দিন যাবৎ শ্রীশ্রীমাতাঠাকুরানীকে দেখার জন্য মনটা বড়ই ব্যাকুল হয়েছে; কিন্তু দেখতে যাবার কোন উপায় নেই, কাকে নিয়ে যাই।
মা যদি অধম সন্তানকে দয়া করে দর্শন দেন তবেই দেখব-এরূপ বসে ভাবছি এমন সময় কমলা ও বিমলা এসে বলল, “দিদি, তােমায় মা ডাকছেন।”
একথা শুনে আমার মনে হলাে—অভিষ্টসিদ্ধির বুঝি একটি পন্থা বের হবে।
কে যেন কানে কানে বলে দিল—“ওরে, মা ডেকেছেন।
আমি শীঘ্র প্রস্তুত হয়ে বিমলাদের বাড়ি গেলাম, তখন সকাল ৭টা হবে।
গিয়ে দেখি ললিত ও তার মা বসে কথা বলছেন ; আমাকে দেখেই ললিতের মা বলে উঠলেন, “এই তাে বিনু এসেছে, মেয়ে আমার কি পাগল দেখ, অমনি ছুটে এসেছে।”
ললিত বলল, “দিদি, আপনি নাকি শ্রীশ্রীমাকে দেখতে চেয়েছেন ?
যান তাে আমি আজ নিয়ে যেতে পারি।”
আমি ?
সে তােমার অনুগ্রহ।
ললিতের মা ও সে কি গাে ! ছােট ভাইকে ‘অনুগ্রহ’ বলতে আছে।
আমি বললাম ঃ “তবে আর কি বলি বলুন, যদি ওদের অনুগ্রহের উপর নির্ভর না করব তবে তা আমি অনেক আগেই মাকে দেখতে যেতে পারতুম।”
এই আনন্দ সংবাদ—সত্যিই মাকে দেখতে যাব, সহসা যেন বিশ্বাস করতে পারলাম না, তাই ললিতকে বললাম, “ভাই, সত্যি বল যাবে কি-না ?
যদি যাও তাে গাড়ি নিয়ে এসাে।” এ সময় আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “ভাই, মাকে তুমি দেখেছ ?”
আমার একথায় ললিত আনন্দিত হয়ে বলতে লাগল, “দিদি, আমি মাকে একবার দেখতে গিয়েছিলুম।
আহা ! মায়ের
Sri Sri Ramakrishna |
বাংলাদেশে শ্রীমা সারদাদেবীর শিষ্যশৃন্দ ও তাদের স্মৃতি মালা
কি দয়া, অপূর্ব স্নেহ, দিদি তােমায় কি বলব ! মা আবার আমায় যেতে বলেছেন।”
ললিত গাড়ি আনতে চলে গেল যাবার সময় বলে গেল, “আমি গাড়ি আনতে যাচ্ছি, তােমরা প্রস্তুত হয়ে থাকো।”
আমি, ললিতের মা ও তার ভগ্নীগণ শ্রীশ্রীমাকে দর্শন করার জন্য যাত্রা করলাম ।
আমার সঙ্গে পাঁচুও গেল ।
পারুল বলল, “দিদি, তুমি সত্যি জান তো মা বাগবাজারে আছে ?”
আমি তার একথা শুনে চমকিত হলাম-মা আছে কি-না তাতে ঠিক জানি না।
প্রাণ শঙ্কিত হয়ে উঠল ; মনে মনে ঠাকুরকে বলতে লাগলাম, 'হে ঠাকুর, আমায় নিরাশ করাে না।
বেলা ১০টার সময় গাড়ি উদ্বোধন অফিসের সামনে এসে লাগল ।
গাড়ি থামতেই আমি দ্রুত নেমে গেলাম ।
সামনে উদ্বোধন’ অফিস ; মহারাজগণ কাজ করছেন, সেদিকে আমার ভ্রুক্ষেপ নেই।
আমার তখন জগৎ শূন্যময় বােধ হচ্ছে।
যদি এখনই শুনি মা এখানে নেই, তবে আমি কি করব—ভেবে যেন জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছি ।
সামনে যাকে দেখছি তাকেই জিজ্ঞেস করছি, মা আছেন ?
আমার কথা শুনে মহারাজগণ মস্তক অবনত করে যাচ্ছেন, কেউ কোন উত্তর দিচ্ছেন না।
ইতােমধ্যে ললিত গাড়ি হতে নেমে উপরে চলে গেল দেখে আমিও ওর পিছনে খানিক দূর গিয়েছি, এমন সময় ললিত ফিরে এসে বলল, 'মা আছেন।
আমার প্রাণের ভিতর হতে একটা ভয়ানক দুশ্চিন্তা সরে গেল, আমি তখন ধীরে ধীরে অগ্রসর হতে লাগলাম।
সামনের ঘর ডানদিকে রেখে আমি বাদিকের বারাণ্ডা দিয়ে চললাম।
সামনে দেখলাম—একটি স্ত্রীলােক অর্ধাবগুণ্ঠনে দাঁড়িয়ে আছেন।
দু-তিনটি পুরুষ-ভক্ত তাকে প্রণাম করছেন দেখে আমি বুঝলাম ইনিই শ্রীশ্রীমা, যাকে দেখার জন্য আমি উন্মত্ত হয়ে ছুটে এসেছি।
আমি যে তখন কি করেছি মনে নেই।
আমাকে দেখেই ভক্তগণ চলে গেলেন।
আমি ছুটে গিয়ে মায়ের পা দুটি ধরে বসে পড়লাম।
মা জিজ্ঞেস করলেন, “কোথা হতে এসেছ, কেন এসেছ ?”
আমিঃ কেন এসেছি তা জানি না, মা।
মা, আপনি এনেছেন তাই এসেছি।
এমন সময় ললিতের মা প্রভৃতি এসে উপস্থিত হলেন ; খানিক দূর দাড়িয়ে বললেন, “ইনিই কি শ্ৰীশ্ৰীমা ?”
আমি: হাঁ ।
তখন সকলেই তাঁকে প্রণাম করলেন।
এবার শ্রীশ্রীমাতাঠাকুরানী শীশ্রীরামকৃষ্ণদেবের পূজার ঘরে উপস্থিত হলেন , আমরাও তাঁর সঙ্গে গিয়ে ঠাকুর -প্রণাম করলাম।
মা সামনে ! তক্তপোশের উপর বসে আমাদের বললেন, "বস, মা বস।”
আমরা তাঁর পদতলে বসলাম।
ললিতের মা সংসারী লােক, মা তাঁর সাথে সংসারীর ন্যায় কথাবার্তা বলতে লাগলেন।
ললিতের মা বললেন, “মা, ঠাকুরের কথা আমাদের কিছু বলুন, আমরা সংসারী লােক, আমাদের কিছু উপদেশ দিন।”
মা ঃ আমি কিছুই জানি না, মা, ঠাকুরের মুখে যা শুনেছি ; তা মা, ঠাকুরের কথামৃত' পড়াে, তাতেই সব উপদেশ পাৰে ।
নিচে গাড়িভাড়া মিটিয়ে ললিত উপরে এসেই একেবারে মায়ের শ্রীচরণে মাথা রেখে সাষ্টাঙ্গে লুটিয়ে পড়ল এবং নিতান্ত আত্রসরে দর্শকবৃন্দকে আকুলিত করে অজস্র অশ্রুধারায় ভাসিয়ে মায়ের চরণে প্রার্থনা জানাতে লাগল, “মা দয়াময়ি গো, দয়া করুন।
মাগো, আপনি এই জগৎ উদ্ধার করতে এসেছেন, আমাকেও টেনে নিন, মা।
আমি আপনার চরণ ছাড়ব না, আমাকে পায়ে স্থান দিতেই হবে।”
এই বলে কাঁদতে লাগল ।
মা স্থির নিশ্চল প্রতিমার ন্যায় দাঁড়িয়ে আছেন।
কিছুক্ষণ পরে বললেন, “অমন করাে না, বাবা, ওঠ।”
ললিত পনর-ষােল বছরের বালক মাত্র।
বালকের ছদ্মবেশে আবরিত মহাশক্তি এখন বিকাশােনুখ।
দিব্য শ্যামবর্ণ সুগঠন চেহারা, ভিতরে ভগবদ্ভক্তিরূপ সুধাস্রোত যেন কানায় কানায় পরিপূর্ণ, বাইরেও সেই অনুরাগ প্রতিভাত হচ্ছে।
“আমায় শ্রীচরণে স্থান দিন, মা।
বলুন, না হলে আমি উঠব না, বলুন আমায় নিয়েছেন বলে ললিত আবার কাঁদতে লাগল ।
এমন সময় সহসা একটি ঘিয়ের ভাড়ে পা ঠেকে যাওয়ায় সে অপ্রস্তুত হয়ে উঠে বসল এবং বলতে লাগল,
আমার তাতে পা লেগে গেল, ছি ! ছি ! আমি এ কি করেছি।”
“আমি এ কি করলুম, কেউ ভক্তি করে মাকে "ঘি দিয়েছে ",
আমার তাতে পা লেগে গেল, ছি ! ছি ! আমি এ কি করেছি।”
এ বলে দুঃখ প্রকাশ করতে লাগল।
সেসময় ঠাকুরঘরে মস্তকের উর্ধ্বভাগে চুল বেঁধে এক গৌরবর্ণা বিধবা বৃদ্ধা ঠাকুরের সেবাকার্যে নিবিষ্টা ছিলেন।
তিনি বললেন,
- “বাবা, তুমি মনে দুঃখ করাে না,
- পা লেগেছে তা আর কি করবে ?
- পা তাে আর সৃষ্টিছাড়া নয়,
- এ সৃষ্টির ভেতরে পা দুটোও যে আছে,
বাংলাদেশে শ্রীমা সারদাদেবীর শিষ্যশৃন্দ _বিনােদনী (বিনু)
Sri Sri Ramakrishna |
আমরা তাঁর দিকে চেয়ে দেখলাম, তাঁর সৌম্য মুখমণ্ডল ও সরল উদার কথাগুলি আমাদের বড়ই ভাল লাগল ।
ললিত তার কথায় যেন অনেকটা সান্ত্বনা লাভ করল এবং প্রকৃতিস্থ হয়ে মাকে প্রণাম করে বলল, “মা, আমায় আশীর্বাদ করুন।”
“ঠাকুর তােমায় আশীর্বাদ করবেন বলে মা তার মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করলেন।
তারপর ললিত নিচে চলে গেল।
“ঠাকুর তােমায় আশীর্বাদ করবেন বলে মা তার মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করলেন।
তারপর ললিত নিচে চলে গেল।
একটি ষােল-সতের বছরের মেয়ের হাত ধরে একটি প্রৌঢ়বয়স্ক ভদ্রলােক এ সময়ে দরজার নিকটে এসে দাঁড়ালেন এবং মাকে বললেন, “মা, এটি আমার মেয়ে।
এর একটি মেয়ে হয়েছিল, আজ সকালে সেটি মারা গিয়েছে ; এ বড়ই শােকবিহ্বলা, তাই আপনার কাছে নিয়ে এসেছি, সান্ত্বনা পাবে বলে।”
একথা শুনে আমরা সকলে চমকিত হয়ে উঠলাম।
মা বললেন, “এস, মা, এস।”
মেয়েটি ঘরের মধ্যে এসে মায়ের কাছে বসল এবং পদধূলি নেবার জন্য হাত বাড়াল।
মা ঈষৎ সরে জিজ্ঞেস করলেন, “হ্যা, গা, আমায় ছোঁবে কি ? এর যে অশৌচ হয়েছে।”
একথা শুনে মেয়েটির মুখখানি আরও মলিন হয়ে গেল, সে সঙ্কুচিত হয়ে বসে রইল ।
মা তার মুখপানে চেয়েই সকরুণ হয়ে বললেন, “আহা, বাছা ! বড় ব্যথা পেয়ে আমার কাছে এসেছ সান্ত্বনা পাবে বলে।
আমি তােমার মনে কি কষ্ট দিলুম ! তা হােক অশৌচ ; এস, মা, আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম কর ।”
এই বলে মেয়েটির আরও কাছে সরে বসলেন।
সে তখন অশ্রুজলে ভেসে মায়ের শ্রীচরণে মাথা রেখে প্রণাম করল ; মাও তার মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করলেন।
মা মেয়েটির কাছে বসে মিষ্টবাক্যে তাকে প্রবােধ দিতে লাগলেন-“আমি তােমায় কি বলব, মা, আমি তাে কিছুই জানি না।
ঠাকুরের একখানি ছবি নিজের কাছে রেখাে, আর জানবে তিনি সত্য-ঠাকুর তােমার কাছে রয়েছেন।
তাঁর কাছে কেঁদে কেঁদে মনের দুঃখ জানাবে, ব্যাকুল হয়ে কেঁদে কেঁদে বলাে—“ঠাকুর, আমায় তােমার দিকে নাও, আমায় শান্তি দাও।'
এ রকম করতে করতে তােমার প্রাণে শান্তি আপনি আসবে।
ঠাকুরে ভক্তি রেখাে, যখনই কষ্ট হবে, ঠাকুরকে জানিয়াে।”
তারপর আমাদের দিকে চেয়ে মা বললেন, “আহা ! আজই শােক পেয়েছে ! আজ কি স্থির হতে পারে ?”
মেয়েটির পিতা দ্বারদেশে দাড়িয়েছিলেন ; পিতা-পুত্রী উভয়ে মাকে প্রণামপূর্বক দুঃখ নিবেদন করে শান্ত হয়ে চলে গেলেন।
এর একটি মেয়ে হয়েছিল, আজ সকালে সেটি মারা গিয়েছে ; এ বড়ই শােকবিহ্বলা, তাই আপনার কাছে নিয়ে এসেছি, সান্ত্বনা পাবে বলে।”
একথা শুনে আমরা সকলে চমকিত হয়ে উঠলাম।
মা বললেন, “এস, মা, এস।”
মেয়েটি ঘরের মধ্যে এসে মায়ের কাছে বসল এবং পদধূলি নেবার জন্য হাত বাড়াল।
মা ঈষৎ সরে জিজ্ঞেস করলেন, “হ্যা, গা, আমায় ছোঁবে কি ? এর যে অশৌচ হয়েছে।”
একথা শুনে মেয়েটির মুখখানি আরও মলিন হয়ে গেল, সে সঙ্কুচিত হয়ে বসে রইল ।
মা তার মুখপানে চেয়েই সকরুণ হয়ে বললেন, “আহা, বাছা ! বড় ব্যথা পেয়ে আমার কাছে এসেছ সান্ত্বনা পাবে বলে।
আমি তােমার মনে কি কষ্ট দিলুম ! তা হােক অশৌচ ; এস, মা, আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম কর ।”
এই বলে মেয়েটির আরও কাছে সরে বসলেন।
সে তখন অশ্রুজলে ভেসে মায়ের শ্রীচরণে মাথা রেখে প্রণাম করল ; মাও তার মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ করলেন।
মা মেয়েটির কাছে বসে মিষ্টবাক্যে তাকে প্রবােধ দিতে লাগলেন-“আমি তােমায় কি বলব, মা, আমি তাে কিছুই জানি না।
ঠাকুরের একখানি ছবি নিজের কাছে রেখাে, আর জানবে তিনি সত্য-ঠাকুর তােমার কাছে রয়েছেন।
তাঁর কাছে কেঁদে কেঁদে মনের দুঃখ জানাবে, ব্যাকুল হয়ে কেঁদে কেঁদে বলাে—“ঠাকুর, আমায় তােমার দিকে নাও, আমায় শান্তি দাও।'
এ রকম করতে করতে তােমার প্রাণে শান্তি আপনি আসবে।
ঠাকুরে ভক্তি রেখাে, যখনই কষ্ট হবে, ঠাকুরকে জানিয়াে।”
তারপর আমাদের দিকে চেয়ে মা বললেন, “আহা ! আজই শােক পেয়েছে ! আজ কি স্থির হতে পারে ?”
মেয়েটির পিতা দ্বারদেশে দাড়িয়েছিলেন ; পিতা-পুত্রী উভয়ে মাকে প্রণামপূর্বক দুঃখ নিবেদন করে শান্ত হয়ে চলে গেলেন।
এখন ঘর নীরব দেখে আমি বললাম, “মা, আমার একটি কথা আছে যদি আপনি অনুমতি করেন তবে বলি।”
আমাকে ইতস্তত করতে দেখে সেই সেবানিরতা সৌম্যমূর্তি বৃদ্ধাটি (পরে জানলাম তিনি পূজনীয়া গােলাপমা) বললেন, “বল, মা, বল, তােমার মনের কথা নিঃসঙ্কোচে মায়ের কাছে বল, মার কাছে লজ্জা কি !” তখন আমি বললাম, “মা, কথা আর কিছু নয়—আমি স্বপ্নে ঠাকুরকে ও আপনাকে দেখেছিলুম, যেন আপনি আমায় মন্ত্র দিচ্ছেন, কিন্তু তা সম্পূর্ণ হয়নি।
সেই থেকে আপনার শ্রীপাদপদ্মে আশ্রয় নেবার জন্যে আমি বড় ব্যাকুল হয়েছি।”
আমাকে ইতস্তত করতে দেখে সেই সেবানিরতা সৌম্যমূর্তি বৃদ্ধাটি (পরে জানলাম তিনি পূজনীয়া গােলাপমা) বললেন, “বল, মা, বল, তােমার মনের কথা নিঃসঙ্কোচে মায়ের কাছে বল, মার কাছে লজ্জা কি !” তখন আমি বললাম, “মা, কথা আর কিছু নয়—আমি স্বপ্নে ঠাকুরকে ও আপনাকে দেখেছিলুম, যেন আপনি আমায় মন্ত্র দিচ্ছেন, কিন্তু তা সম্পূর্ণ হয়নি।
সেই থেকে আপনার শ্রীপাদপদ্মে আশ্রয় নেবার জন্যে আমি বড় ব্যাকুল হয়েছি।”
মা প্রসন্নমুখে বললেন, “বেশ তাে, আজই তােমায় দীক্ষা দেব, কিন্তু তােমার স্বামীর মত আছে তাে ?”
আমি ও আমার স্বামীকে আমি একথা বলেছিলুম, তিনি বলেছিলেন, আমার অমত নেই, আমি এখন দীক্ষা নেব না, তুমি নিতে পার।'
মা ঃ- তােমার স্বামী কোথায় ?
আমিঃ- রায়পুরে।
মা কলের ঘর দেখিয়ে বললেন, “ওখান হতে হাত-পা ধুয়ে এস।”
আমি ঃ- মা, আমি এখনাে স্নান করিনি। মা ও তা হােক, স্নান করতে হবে না।
আমিঃ- রায়পুরে।
মা কলের ঘর দেখিয়ে বললেন, “ওখান হতে হাত-পা ধুয়ে এস।”
আমি ঃ- মা, আমি এখনাে স্নান করিনি। মা ও তা হােক, স্নান করতে হবে না।
আমি কলঘর হতে হাত-পা ধুয়ে মায়ের নিকট ঠাকুরঘরে গিয়ে দেখি মা দুখানা আসন পেতেছেন।
সামনের কোশাকোশীতে গঙ্গাজল নিয়ে নিজে ঠাকুরের পানে মুখ করে বসলেন।
তার বাম হাতের নিকট আসনে আমাকে বসতে বললেন, কোশা হতে গঙ্গাজল নিয়ে মা আচমন করলেন এবং আমায় সেরূপ করালেন ; পরে বললেন,
সেমুহূর্তে একটা পরমানন্দের প্রবাহ হৃদয়মধ্যে বয়ে গেল, ভিতরে-বাইরে বিপুল আনন্দোচ্ছাস উঠে আমায় অভিভূত করে ফেলল।
আমি কিছুই জানি , মা সব শিখিয়ে দিলেন।
দীক্ষান্তে মা বললেন, ‘দক্ষিণা দাও।'
সামনের কোশাকোশীতে গঙ্গাজল নিয়ে নিজে ঠাকুরের পানে মুখ করে বসলেন।
তার বাম হাতের নিকট আসনে আমাকে বসতে বললেন, কোশা হতে গঙ্গাজল নিয়ে মা আচমন করলেন এবং আমায় সেরূপ করালেন ; পরে বললেন,
কোন্ দেবতায় তােমার ভক্তি ?আমি বললে, তিনি আমায় দীক্ষা দিয়ে কিরূপে জপ করব, দেখিয়ে দিলেন।
সেমুহূর্তে একটা পরমানন্দের প্রবাহ হৃদয়মধ্যে বয়ে গেল, ভিতরে-বাইরে বিপুল আনন্দোচ্ছাস উঠে আমায় অভিভূত করে ফেলল।
আমি কিছুই জানি , মা সব শিখিয়ে দিলেন।
দীক্ষান্তে মা বললেন, ‘দক্ষিণা দাও।'
আমি ঃ- মা, আমি তাে কিছুই জানিনে, আপনি বলে দিন আমি কি করব, আমি তাে কিছুই আনিনি।
মা তখন উঠে গিয়ে ফুল, কমলালেবু, কুল প্রভৃতি দুই হাতে অঞ্জলি করে এনে আমার হাতে দিলেন এবং বললেন,
বল-আমার পূর্বজন্মের ইহজনাের জানত অজানত যা কিছু পাপপুণ্য করেছি, সব তােমাকে সমর্পণ করলাম।আমিও তাই বললাম, মা হাত পেতে সব গ্রহণ করলেন।
- মা ! এ দীন হীন কাঙাল অধমের উপর একি অহৈতুকী দয়া তােমার!
- আমার প্রাণ-মন আচ্ছন্ন করে ফেলল—একি দেখলাম !
- একি শুনলাম!
- আমি কায়-মন-প্রাণ মায়ের শ্রীপাদপদ্মে সমর্পণ করে আজ ধন্য হলাম ।
মাকে প্রণাম করে বারাণ্ডায় এসে আবিষ্টের ন্যায় ঘণ্টাখানেক রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে রইলাম।
এমন সময় ঘরে একটি বালিকার চিৎকার কোলাহল আর মায়ের কথা শুনে ঘরের ভিতরে গেলাম।
আমাকে দেখে মা বললেন, “বস, মা, বস।” আমি বসলে মা বললেন,
“এটি আমার ভাইঝি, নাম রাধারানী । ওর মা পাগল হতে আমিই ওকে মানুষ করি !”মা তাকে ধরেছিলেন, কিন্তু সে অস্থির হয়ে পালাবার চেষ্টা করছিল।
মা তাকে কতরকম বুঝাচ্ছিলেন।
তার চুল বেঁধে দিলেন, তাকে কাপড় পরালেন, নিজের হাতে খাইয়ে দিলেন।
আর কতই স্নেহপূর্ণ কথা বলতে লাগলেন ! আমি শ্রীশ্রীমায়ের এ প্রাকৃত লােকের ন্যায় ব্যবহার অবাক হয়ে দেখতে লাগলাম।
এমন সময় আমায় গঙ্গাস্নান করার জন্য ডাকায় আমি উঠে গেলাম।
স্নানের পর ফিরে এসে দেখি, মা ঠাকুরের ভােগ দিচ্ছেন।
ঠাকুরঘর হতেই এসে তিনি ঠাকুরের ভােগের ঘরে গেলেন, সেখানে ভােগ সজ্জিত রয়েছে ; পরে সেই ঘরের দোর বন্ধ করে আমাদের ঘরে এলেন।
কিছুক্ষণ পরে মহারাজগণ আহারে বসলেন।
গােলাপ-মা পরিবেশন করছেন, আহার শেষ হলে মহারাজগণ চলে গেলেন।
ঠাকুরের ভােগের থালা মায়ের জন্য মাঝের ঘরে আনা হলাে এবং আমরা যে ক’জন স্ত্রীলােক আছি আর পাঁচু (পাঁচ বছরের একটি বালক, যে আমার সঙ্গে এসেছিল) এ ক’জনের জন্য সেই ঘরে জায়গা হলাে।
শ্রীশ্রীমা এবং আমরা সকলেই আহারে বসলাম।
আমার ইচ্ছা মায়ের প্রসাদ প্রহণ করব, তাই চুপ করে বসে আছি।
সকলে ভাত মেখে নিলেন, আমি হাতও দিলাম না।
মা দু'তিন বার বললেন, ‘খাও, খাও।
এমন সময় গােলাপ-মা এসে জিজ্ঞেস করলেন, “কি হয়েছে গা ?”
তাকে বললাম, “আমাকে দু'টি প্রসাদ দিন।” মা তখন ভাত মেখে অল্প দুটি খেয়ে আমার পাতে তুলে দিলেন।
আহা ! কি অমৃতই সেদিন খেলাম, কি বলব! অড়হর ডাল, কপির চচ্চড়ি, চালতের অম্বল, আর গােলাপ-মা মাছ বেঁধেছিলেন, ভারি সুন্দর হয়েছিল।
পাঁচু তাে “আরও চচ্চড়ি খাব” বলে গােলমাল আরম্ভ
করে দিল।
তাকে চুপি চুপি ধমকালেও শুনে না।
এ সময় গােলাপ-মা আবার এসে বললেন, “কি হয়েছে, অমন করছে কেন ছেলেটি ?”
তাকে চুপি চুপি ধমকালেও শুনে না।
এ সময় গােলাপ-মা আবার এসে বললেন, “কি হয়েছে, অমন করছে কেন ছেলেটি ?”
আমি বললাম, “ওকে আনতে চাইনি মা।
আমি লুকিয়ে আসছিলুম, বাড়ি যেই কিছুদূরে গিয়েছে, ও রাস্তায় খেলা করছিল, অমনি ছুটে এসে গাড়িতে উঠল, আর এখন ‘আরও চচ্চড়ি খাব’ বলে গােলমাল করছে।”
একথা শুনে মা, গােলাপ-মা, সকলে হাসতে লাগলেন।
গােলাপ-মা বললেন, “তুমি ওকে ফাঁকি দিতে চেয়েছিলে—পারবে কেন ?
ওর সুকৃতি ছিল, তাই মাকে দেখতে পেলে, এ কি কম ভাগ্য গা ! ওর ভাল হবে।”
মাঃ-“হ্যা, তাই তাে” বলে ‘সায় দিলেন।
আমি লুকিয়ে আসছিলুম, বাড়ি যেই কিছুদূরে গিয়েছে, ও রাস্তায় খেলা করছিল, অমনি ছুটে এসে গাড়িতে উঠল, আর এখন ‘আরও চচ্চড়ি খাব’ বলে গােলমাল করছে।”
একথা শুনে মা, গােলাপ-মা, সকলে হাসতে লাগলেন।
গােলাপ-মা বললেন, “তুমি ওকে ফাঁকি দিতে চেয়েছিলে—পারবে কেন ?
ওর সুকৃতি ছিল, তাই মাকে দেখতে পেলে, এ কি কম ভাগ্য গা ! ওর ভাল হবে।”
মাঃ-“হ্যা, তাই তাে” বলে ‘সায় দিলেন।
আহারের পর আমি সারাদিন মায়ের কাছে বসে রইলাম।
আমার রায়পুর যাবার কথা ছিল।
সে দূর দেশ, আর শীঘ্র যদি মাকে না দেখতে পাই সেই আশঙ্কায়, পারুল ও কমলা আমায় ডেকেছিল, তবুও আমি গেলাম না।
ছাদে মা চুল শুকাচ্ছিলেন, শীতকাল তাই রােদে বসেছেন আর আমার কাছে বাপের বাড়ির গল্প করছেন,
“রাধুকে মানুষ করলুম, সেটি পাগল, খাইয়ে না দিলে খায় না ; আর আমারও শরীর ভাল নয়, মা, বাতের বেদনায় কষ্ট পাচ্ছি।
এ অসুখের জন্যে কাশী, বৃন্দাবন গেলুম, কিন্তু কিছুই হলাে না।”
আমার রায়পুর যাবার কথা ছিল।
সে দূর দেশ, আর শীঘ্র যদি মাকে না দেখতে পাই সেই আশঙ্কায়, পারুল ও কমলা আমায় ডেকেছিল, তবুও আমি গেলাম না।
ছাদে মা চুল শুকাচ্ছিলেন, শীতকাল তাই রােদে বসেছেন আর আমার কাছে বাপের বাড়ির গল্প করছেন,
“রাধুকে মানুষ করলুম, সেটি পাগল, খাইয়ে না দিলে খায় না ; আর আমারও শরীর ভাল নয়, মা, বাতের বেদনায় কষ্ট পাচ্ছি।
এ অসুখের জন্যে কাশী, বৃন্দাবন গেলুম, কিন্তু কিছুই হলাে না।”
আমি ঃ কাশী বৃন্দাবন গিয়েছিলেন ?
মা ঃ কি করে বলব।
মা ঃ কি করে বলব।
একথা সেকথার পর মা বললেন, “তােমার এই অল্প বয়স, ছেলেমানুষ তুমি, তােমার এ সময় দীক্ষা নেবার ইচ্ছা কেন হলাে ?”
আমি ঃ কি জানি, মা, সংসার আমার ভাল লাগে না।
প্রাণ যেন সংসার চায় না, প্রাণে বড়ই অশান্তি ছিল, আজ আমি শান্তি লাভ করেছি।
আর এ সংসারও অনিত্য, দুদিনের জন্য, দেখছি সবই মিথ্যা।
কি করে তাতেই বা মন বসবে, মা ?
প্রাণ যেন সংসার চায় না, প্রাণে বড়ই অশান্তি ছিল, আজ আমি শান্তি লাভ করেছি।
আর এ সংসারও অনিত্য, দুদিনের জন্য, দেখছি সবই মিথ্যা।
কি করে তাতেই বা মন বসবে, মা ?
এ সময়ে মায়ের সমবয়স্কা একটি স্ত্রীলােক এসে তাঁর নিকট বসলেন।
আমি মায়ের খুব কাছে বসেছিলাম, তার ছায়া আমার গায়ে পড়েছে দেখে উক্ত স্ত্রীলোকটি আমায় ভৎসনা করে বললেন, “তুমি কেমন মেয়ে গা, মায়ের ছায়ার উপর বসেছ ?
পাপ হবে যে, সরে বস।”
আমি তা জানতাম "মা যে আপন হতেও আপনার, তাই একেবারে কাছে বসেছিলাম, এখন
আমি মায়ের খুব কাছে বসেছিলাম, তার ছায়া আমার গায়ে পড়েছে দেখে উক্ত স্ত্রীলোকটি আমায় ভৎসনা করে বললেন, “তুমি কেমন মেয়ে গা, মায়ের ছায়ার উপর বসেছ ?
পাপ হবে যে, সরে বস।”
আমি তা জানতাম "মা যে আপন হতেও আপনার, তাই একেবারে কাছে বসেছিলাম, এখন
বাংলাদেশে শ্রীমা সারদাদেবীর শিষ্যশৃন্দ _বিনােদনী (বিনু)
একটু অপ্রতিভ হয়ে সরে বসলাম।
উক্ত স্ত্রীলােকটি মাকে জিজ্ঞেস করলেন, “এ মেয়েটি কে ?”
উক্ত স্ত্রীলােকটি মাকে জিজ্ঞেস করলেন, “এ মেয়েটি কে ?”
মা ঃ এ মেয়েটি আজ দীক্ষা নিয়েছে, বড় ভক্তমতী মেয়ে ।
মায়ের এ কথায় আমি লজ্জিত হয়ে পাশের ঘরে পারুলরা গল্প করছিল সেখানে ওঠে গেলাম।
এমন সময় ললিত এসে বলল, “দিদি, চল, গাড়ি প্রস্তুত।
বেলা গিয়েছে। আমি মায়ের নিকট বিদায় নিতে গেলাম ।
মা বললেন, “আবার কবে আসবে, মা ?”
এমন সময় ললিত এসে বলল, “দিদি, চল, গাড়ি প্রস্তুত।
বেলা গিয়েছে। আমি মায়ের নিকট বিদায় নিতে গেলাম ।
মা বললেন, “আবার কবে আসবে, মা ?”
আমি ঃ আপনি যেদিন মনে করে আনবেন সেদিনই আসব ; আমার কোন সাধ্য নেই।
মা, আশীর্বাদ করুন ; আমায় মনে রাখবেন মা।
মা, আশীর্বাদ করুন ; আমায় মনে রাখবেন মা।
মা ঃ আবার এসাে, মা।
আমি কাতর নয়নে তাঁর পানে চেয়ে রইলাম ; তিনি দু'খিলি পান এনে আমায় দিলেন।
আমি মায়ের পদতলে লুণ্ঠিত হয়ে যেন আমাকে রেখে দেহটি নিয়ে বিদায় নিলাম।
মা-ও সজল নয়নে সিঁড়িতে এসে দাঁড়ালেন।
আমার অন্তর-বাহির আজ পরিপূর্ণ ; গাড়িতে বসেও যেন তাঁর কথা শুনতে লাগলাম।
মায়ের কথা মা রক্ষা করেছিলেন ; দু’বছর পরে রায়পুর হতে ফিরে মায়ের অসুখের সময় আবার তার দর্শন পেয়েছিলাম ।
আমি মায়ের পদতলে লুণ্ঠিত হয়ে যেন আমাকে রেখে দেহটি নিয়ে বিদায় নিলাম।
মা-ও সজল নয়নে সিঁড়িতে এসে দাঁড়ালেন।
আমার অন্তর-বাহির আজ পরিপূর্ণ ; গাড়িতে বসেও যেন তাঁর কথা শুনতে লাগলাম।
মায়ের কথা মা রক্ষা করেছিলেন ; দু’বছর পরে রায়পুর হতে ফিরে মায়ের অসুখের সময় আবার তার দর্শন পেয়েছিলাম ।
No comments